নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা আগাম আলু চাষের জন্য বিখ্যাত। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও  আগাম আলু উঠতে শুরু করেছে এ উপজেলায়। বাজারে চাহিদা এবং দাম বেশি থাকায় আগেই উঁচু সমতল ভূমির মাঠে মাঠে আগাম আলু তোলার উৎসবে মেতে উঠেছেন চাষিরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে। 

প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে। নতুন আলুর ফলন ও বাজার দর বেশি পাওয়ায় চাষিদের মাঝে বইছে আনন্দের বন্যা। এ বছর জেলায় ৪০০ কোটি টাকার আগাম আলু উৎপাদনের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।  

উপজেলার কৃষকরা এখন আগাম আলু তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। জেলায় ছয় হাজার হেক্টর আগাম জাতের আলু চাষ হয়েছে। এর মধ্যে কিশোরগঞ্জ উপজেলাতেই হয়েছে ৪ হাজার ৬০০ হেক্টর। দেশে আগাম আলু চাষের মডেল হিসেবে পরিচিত উত্তরের এই ছোট্ট উপজেলাটির অর্থনীতি কৃষিভিত্তিক। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে আলু উৎপাদন করে নিজেদের অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়েছেন এখানকার কৃষকরা। দেশে আগাম জাতের আলু এই উপজেলাতেই প্রথম উৎপাদন শুরু করেন কৃষকরা।  

সরেজমিনে দেখা গেছে, আলুর মাঠে কেউ মাটি খুঁড়ছেন, কেউ আলু কুড়াচ্ছেন, কেউ ঠেসে ঠেসে বস্তা ভরছেন। কোথাও আবার ডিজিটাল মিটারে চলছে ওজন পরিমাপের কাজ। ক্ষেতের মাঝে ভর্তি হচ্ছে ভ্যান, ট্রলি ও ট্রাক। আলু তোলার এমন দৃশ্য উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে।

কিশোরগঞ্জের কৃষক জামিনুর বলেন, বরাবরের মতো চলতি বছর ১৫ সেপ্টেম্বর রোপণকৃত ৪ বিঘা জমিতে ৫৫ থেকে ৬০ দিনে ফলনযোগ্য আগাম আলু উত্তোলন করছি। জমিতে নারী-পুরুষ মিলে ৩৫ জন শ্রমিক কাজ করছেন। ৪ বিঘা জমিতে ৩৫ বস্তা আলু হবে। আগাম হিসেবে ফলন কিছুটা কম হলেও বাড়তি খরচ ছাড়াই ক্ষেতের আলু ক্ষেতেই ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলাম। 

কৃষক আব্দুর রহমান বলেন, আগাম আলু চাষ করে ভালোই লাভবান হই। এ বছরে উর্ধ্বমুখী দামের আশায় আগাম আমন ধান কাটা-মাড়াই করে সেই জমিসহ সাড়ে ১০ বিঘা জমিতে আগে-ভাগে আগাম আলুর বীজ রোপণ করেছি। ৯০ থেকে ১০০ বস্তা আলুর আশা করা হচ্ছে।

আরেক কৃষক সজীব বলেন, গত বারের তুলনায় এ বছর ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি কেজি আলু ক্ষেত থেকেই বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। অথচ গতবার এই আলু বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা কেজি।

রনচন্ডি গ্রামের কৃষক সোহেল বলেন, এখানকার মাটি বেলে দোআঁশ ও উঁচু। এখানকার কৃষকরাই দেশে প্রথম আগাম আলু চাষ শুরু করেন। মাত্র ৫৫ দিনে এই আলু ঘরে তোলা যায়। দামও ভালো পাওয়া যায়। এসব জমিতে এখন ভুট্টা আবাদ করবো। ফলে একই জমিতে বছরে চারটি ফসল করা সম্ভব হয়।

কিশোরগঞ্জের আলুর চাহিদা ভালো থাকায় এরই মধ্যে রাজধানী থেকে ব্যবসায়ীরা আসতে শুরু করেছেন। স্থানীয় আড়ত মালিক শফিকুল বলেন, ২৫ নভেম্বর থেকে মূল মৌসুম শুরু হবে। এখন প্রতিদিন ২ থেকে ৩ ট্রাক আলু যাচ্ছে কাওরানবাজারে। ২৫ নভেম্বরের পর থেকে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫টি ট্রাক রাজধানী ছাড়াও সিলেট, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হবে।

কিশোরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম বলেন, উপজেলার কৃষকরা আলু উৎপাদনের মধ্য দিয়ে স্থানীয় অর্থনীতিতে অনেক বড় অবদান রাখছেন। নিজেরাও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হচ্ছেন।

উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা তুষার কান্তি রায় বলেন, কৃষকদের আলু বিপণনের ক্ষেত্রে বাজারগুলোতে যোগাযোগ স্থাপন করে দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন জায়গার ব্যবসায়ীরা আসতে শুরু করেছেন। কৃষকরা যাতে লাভবান হতে পারেন সেই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। 

শরিফুল ইসলাম/আরএআর