ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত মা সান্ত্বনা রানী রায়কে বাঁচানোর আকুতি জানিয়েছেন ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী সুশান্ত রায় পাপন। ভারতের বেঙ্গালুরুতে তার মায়ের ১৫ দিনের ব্যবধানে দুটি ব্রেইন টিউমার অপারেশন করা হয়েছে। 

ব্যাংক ঋণ ও জমি বন্ধক রেখে ১৫ লাখ টাকার বেশি খরচ করে আর্থিকভাবে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে তার পরিবার। আগামী চার মাস পর আবারও যেতে হবে ভারতে। তাতে প্রয়োজন ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা। এমন পরিস্থিতিতে কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন ছেলে পাপন।

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কাশিয়াবাড়ী ইউনিয়নের সগুনা গ্রামের শ্রী বিষ্ণপদ রায়ের স্ত্রী সান্ত্বনা রানী রায়। বিষ্ণপদ রায় স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক

সরেজমিনে সগুনা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে হুইল চেয়ারে বসে আছেন পাপনের মা সান্ত্বনা রানী রায়। অপলক চেয়ে আছেন প্রকৃতির দিকে। তার বাম হাত আর বাম পা প্যারালাইজড। পাপনের বাবা বিষ্ণপদ রায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। একমাত্র বোন সুষমা রায় প্রীতি রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী।

সুশান্তের বাবা শ্রী বিষ্ণপদ রায় জানান, তার স্ত্রীর ২০২০ সালে চোখ ব্যথা করে। নিয়মিত এমন সমস্যার কারণে প্রথমে ব্রাকের গাইবান্ধার একটি চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা করান। এরপর দিনাজপুরে চিকিৎসা করান। আশানুরুপ ফল না পেয়ে চোখ ব্যথার চিকিৎসা নিতে যান রংপুরে। সেখানে ১০ মাস চিকিৎসা শেষে ডাক্তার ঢাকায় চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেন। এরই মধ্যে কেটে যায় প্রায় দুই বছর। এরপর ২০২২ সালের মাঝামাঝিতে ঢাকার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেখানে ১৫ দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর দুই দফা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে রিপোর্ট আসে চোখের কোনো সমস্যা নেই। ধরা পরে ব্রেইন টিউমার। ঢাকার চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন দেশের বাহিরে (ভারতে) চিকিৎসা নেওয়ার।  

পরে প্রাইমারি স্কুলে চাকরির সুবাদে ১২ লাখ টাকা ব্যাংক ঋণ, এক বিঘা আবাদি জমি দুই লাখ টাকায় বন্ধক এবং বেশ কিছু টাকা ধার করে চলতি বছরের ২৪ সেপ্টেম্বরে নেওয়া হয় ভারতের বেঙ্গালুরুতে। সেখানে ৭ অক্টোবর তার প্রথম দফায় ব্রেইন টিউমার অপারেশন করা হয়। পরে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণ আর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দ্বিতীয় দফায় আবারও অপারেশনের সিদ্ধান্তের কথা জানান চিকিৎসকরা। ২১ অক্টোবর দ্বিতীয় দফায় আবারও একই অপারেশন  করা হয়।

বিষ্ণপদ রায় বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরির সুবাদে ছেলেটাকে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আর মেয়েটিকে রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুলে পড়ানোর সুযোগ পেয়েছিলাম। এক বিঘা নিজস্ব আবাদি জমি আছে। তাতেই আমাদের সংসার চলছিল। কিন্তু স্ত্রীর অসুস্থতায় চিকিৎসার পেছনে খরচ করতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে গেলাম। চারদিকে এখন অন্ধকার দেখছি। চার মাস পর (ফেব্রুয়ারিতে) আবার ভারতে যেতে হবে। তাতে প্রয়োজন আরও ৪-৫ লাখ টাকা। টাকার পাওয়ার কোনো উৎস নেই। দুই সন্তানের চিকিৎসার খরচ আর স্ত্রীর চিকিৎসার টাকা কোথায় পাব- এই কথা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। এ সময় সমাজের বিত্তবান মানুষসহ সরকারি-বেসরকারি দানশীল সংগঠনগুলোর কাছে আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানান। 

সুশান্ত রায় পাপন বলেন, আমার বাবা পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। মায়ের চিকিৎসার জন্য আমরা ব্যাংক ঋণ ও জমিজমা বন্ধক রেখেছি। ডাক্তার মায়ের চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আবারো তাকে ভারতে নিতে হবে। প্রয়োজন ৪-৫ লাখ টাকার। প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। আমি টাকার অভাবে মাকে হারাতে চাই না। তাই মাকে বাঁচাতে আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানিয়েছি ফেসবুকে। আপনারা আমার মাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন, আমাদেরকে আর্থিকভাবে সাহায্য করুন।

স্থানীয়রা জানান, বর্তমানের পরিবারটি একেবারে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। চার সদস্যের এই পরিবারটি একবারে নিঃস্ব হয়ে গেছে। তারা এখন এমন একটা পর্যায়ে দাঁড়িয়েছেন, পারছেন না হাত পাততে, পারছেন না সহ্য করতে। এখন এই পরিবারটিকে রক্ষায় সরকারি-বেসরকারি সাহায্য জরুরি, অন্যথায় একদিকে যেমন দুই সন্তানের পড়ালেখা বন্ধ হবে,  অন্যদিকে টাকার কারণে চিকিৎসার অভাবে অকালেই জীবন দিতে হবে পাপনের মাকে। 

পলাশবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোকছেদ চৌধুরী বিদ্যুৎ বলেন, আমি বিষয়টি আগে জানতাম না। আপনাদের মাধ্যমে জানলাম। মানুষ মানুষের জন্য। আমি ব্যক্তিগতভাবে এবং সরকারের পক্ষ থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে সব ধরনের সহযোগিতায় তার পরিবারটির পাশে থাকব। পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে সমাজের বিত্তবান প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

রিপন আকন্দ/আরএআর