আলিমুজ্জামান মনেক (৪৭)। ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। করোনাকালীন ঢাকা থেকে তিনি বাড়ি চলে আসেন। তখন অনেকটা অবসর সময় কাটাচ্ছিলেন। সে সময় ইউটিউবে ছাদবাগান সম্পর্কে ধারণা নিয়ে নিজ বাড়ির ছাদে ছোট পরিসরে কয়েকটি গাছ দিয়ে গড়ে তোলেন বাগান। এখন তার ছাদবাগানে দুইশ প্রজাতির বেশি গাছ রয়েছে।

আলিমুজ্জামান মনেক রাজবাড়ী সদর উপজেলার বাসিন্দা। নিজ বাড়ির ছাদে ২৮০০ বর্গফুট জায়গায় নান্দনিক বাগান গড়ে তুলেছেন। তার শখের বাগানই হয়ে উঠেছে পরিবারের প্রতিদিনের পুষ্টি চাহিদার উৎস। 

সরেজমিনে দেখা যায়, আলিমুজ্জামান মনেক তার ছাদবাগান অনেক সুসজ্জিত ও পরিকল্পনা করে সাজিয়েছেন। দেশ ও দেশের বাইরে থেকে সংগ্রহ করেছেন গাছের চারা। তার বাগানের বেশির ভাগ গাছে ফল ঝুলে আছে। বাগানে শোভা পাচ্ছে জয়তুন, অ্যাভোকাডো, লবঙ্গ, এলাচ, আনারস, কমলা, মালটা, সৌদি মরিয়ম খেজুর, কাজুবাদাম, আপেল, কফি, মিশরীয় ত্বীন ফল, আঙ্গুর, সাদা জাম, আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, মিষ্টি তেতুল, জাম্বুরা, মরিচ, বেগুন, টমেটো, ড্রাগন, কাঠ গোলাপসহ দুই শতাধিক ফল-ফুল ও ঔষধি গাছ। পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে এসব ফল-ফুলের চারা ও কলম অন্যদের দিচ্ছেন আলিমুজ্জামান মনেক।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে রাজবাড়ী সদর উপজেলায় ১৭০টির মতো ছাদবাগান রয়েছে। প্রতিটি ছাদে ৬০ থেকে শুরু করে তিন শতাধিক ফুল-ফল ও ঔষধি গাছ রয়েছে। তবে শহরের ভবানিপুর, বেড়াডাঙ্গা, সজ্জনকান্দা, চরলক্ষ্মীপুর এলাকায় ছাদ কৃষিতে আগ্রহী মানুষের সংখ্যা বেশি।

সৌখিন ছাদ কৃষক আলিমুজ্জামান মনেক বলেন, আমি ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। করোনার সময়ে ঢাকা থেকে বাড়িতে চলে আসি। অনেক আগে থেকেই আমার ছাদবাগান করার শখ ছিল। তাই ইউটিউব থেকে ভিডিও দেখে অভিজ্ঞতা নিয়ে অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে তিন বছর আগে ছাদবাগান শুরু করি। এখন আমার ছাদবাগানে প্রায় দুইশ প্রজাতিরও বেশি গাছ রয়েছে। আমার ছাদবাগানে শাকসবজি, ফলমূল, ফুলসহ বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গাছ রয়েছে। চাকরির পাশাপাশি যকটুকু সময় পাই অধিকাংশ সময় বাগানে দেই। কোনো ধরনের রাসায়নিক সার প্রয়োগ না করে জৈব সার তৈরি করে বাগানে ব্যবহার করি।

তিনি আরও বলেন, চারা সংগ্রহ করে প্লাস্টিকের ড্রাম ও টবে লাগানো হয়। এতে ভবনের কোনো ধরনের ক্ষতি হচ্ছে না। পরিবারের জন্য ভেজালমুক্ত ফল ও শাকসবজির যোগান ও চাহিদা মেটানোর পর আত্মীয়স্বজনের বাড়িতেও পাঠাতে পারি। আসলে গাছগুলোকে সন্তানের মতো করে লালন-পালন করি। এতে আমার অনেক ভালো লাগে।

ছাদবাগান দেখতে আসা ইখলাছুর রহমান বলেন, আলীমুজ্জামান আমার খুব কাছের বন্ধু। সে এক দিন গল্পে গল্পে বলেছিল, সে ছাদে বাগান করেছে। তাই আজ দেখতে এসেছি। তার ছাদে এসে বিভিন্ন প্রজাতির ফলমূল ও ঔষধি গাছ দেখলাম। তার ছাদবাগান দেখে আমি নিজেও অনুপ্রাণিত হয়েছি। আমিও ভাবছি আমার বাড়ির ছাদে একটি বাগান করব।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.বাহাউদ্দিন শেখ বলেন, ছাদ কৃষির একটি বড় সুবিধা হচ্ছে ছাদ সব সময়ের জন্য ঠান্ডা থাকে। এতে যেমন পরিবেশ রক্ষা হয়, তেমনি পারিবারিক সবজির চাহিদা ও পুষ্টির যোগান দেওয়া সম্ভব হয়। প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক সময়ে বাড়ির আশপাশের পরিত্যক্ত জায়গা কৃষির আওতায় আনার তাগিদ দিয়েছেন। সেই জায়গা থেকে ছাদ কৃষির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে যারা ছাদ কৃষি শুরু করেছেন, তাদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। গাছের টবে যেন পানি জমে না থাকে, সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা ছাড়াও নিয়মিত গাছের পরিচর্যার কথা বলা হয়েছে।

মীর সামসুজ্জামান/এসপি