রাজশাহী

রাজশাহীতে সরকারিসহ মোট ৯টি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে। সবগুলোই পুরুষদের জন্য তৈরি। একটিও নেই নারীদের জন্য। তবে প্রশ্ন আসতে পারে রাজশাহীতে কী কোনো নারী মাদকাসক্ত নন? রাজশাহীতে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার নারী ও শিশু মাদকাসক্ত রোগী রয়েছে বলে জানা গেছে।

গত কয়েক বছরে মাদক গ্রহণ, বহন এবং ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে অনেক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তাদের অনেকেই কারাগারে আছেন। আবার কেউ কেউ জমিনে রয়েছেন। অথচ তাদের চিকিৎসায় বিভাগীয় এই শহরে নেই একটিও মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র। ফলে মাদকমুক্তির সামাজিক উদ্যোগ এগোচ্ছে না। যে নারীরা মাদকাসক্ত তাদের নিরাময়ের জন্য ঢাকায় পাঠানো পরামর্শ দিয়ে থাকে অনেক নিরাময় কেন্দ্র।  

পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার হওয়া মাদককারবারি ও মাদকাসক্তদের ৮ শতাংশই নারী। নারীদের মধ্যে দিন দিন মাদকাসক্তির সংখ্যা বাড়লেও তাদের চিকিৎসার জন্য রাজশাহীতে নেই মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র। ফলে নারী মাদকাসক্তদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় স্বজনদের।  স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে যে শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসা বা কাউন্সিলিং দরকার তা থেকে মাদকাসক্তরা বঞ্চিত হয়।

জানা গেছে, রাজশাহীতে একটি সরকারি ও আটটি বেসরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে। এর সবগুলোতেই পুরুষদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। রাজশাহীতে সরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রটি মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অধীনে। এখানে ২৫টি বেড রয়েছে। ভর্তি হওয়া রোগীদের ২৮ দিন করে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

বেসরকারি আটটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে- নতুন ভুবন, আপন ভুবন, আসক্ত পুনর্বাসন সংস্থা (আপস), বাঁচতে চাই, ক্রিয়া, সূর্যোদয়, উদ্দীপন এবং সোনলী আলো। এগুলোতে বেড সংখ্যা ২০টি করে। কেন্দ্রগুলোতে গড়ে ১৫ থেকে ১৮ জন রোগী ভর্তি থাকেন। আর চিকিৎসা দেওয়া হয় কমপক্ষে চার মাস করে। প্রয়োজন হলে আরও বাড়ানো হয়।

একটি বেসরকারি মাদকদ্রব্য নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালক জানান, লোকলজ্জা ও সামাজিকতার ভয়ে নারীদের মাদকাসক্তির বিষয়টি পরিবার লুকিয়ে রাখা হয়। কারণ পরিবার চায় না- তার নারী সন্তানের কথা প্রতিবেশী বা অন্যরা জানুক। পরবর্তী সময়ে বিয়ে দিতে সমস্যা হবে। কিশোর গ্যাঙে শুধু ছেলেরাই নেই। তাদের সঙ্গে মেয়েও রয়েছে। তাদের অনেকেই একসঙ্গে মাদক গ্রহণ করেন।

রাজশাহীর আসক্ত পুনর্বাসন সংস্থা (আপস) এর নির্বাহী পরিচালক আবুল বাশার পল্টু জানান, রাজশাহীতে নারী মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র নেই। তবে আমরা নারীদের জন্য একটি কেন্দ্র গড়ে তোলার চিন্তাভাবনা করছি।

তিনি আরও বলেন, ‘এটি খুব সেনসিটিভ ব্যাপার। নারী মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র করতে হলে নারীকর্মী রাখতে হবে। সেখানে নারী চিকিৎসক রাখতে হবে। পুরো কেন্দ্রজুড়ে নারীদের দেখভালের দায়িত্বে লোক রাখতে হবে। রাজশাহীতে অনেক নারী মাদকসেবী রয়েছে। তাদের পরিবার ওপেন হতে চায় না- লোকলজ্জা ও সামাজিকতার ভয়ে। আমাদের নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে মাসে তিন থেকে চারজন নারী আসে চিকিৎসার জন্য। রাজশাহীতে চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায় তাদের ঢাকা যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকি। এসব নেশাগ্রস্ত ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ৮০ শতাংশই মা-বাবার একটি সন্তান। এই সন্তানরা মা-বাবার থেকে যখন যে আবদার করেছে, সেটাই পেয়েছে। তাদের শাসন করা হতো না বলে এই অবস্থা। 

রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতে খায়ের আলম জানান, ‘বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার হওয়ায় মাদককারবারি ও মাদকাসক্তদের ৮ শতাংশই নারী। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে তাদের কাউন্সিলিং প্রয়োজন।’

রাজশাহী সরকারি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের নিরাময় কেন্দ্রের মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. রবিউল আক্তার বলেন, অনেক নারী রোগী বা তাদের স্বজনরা ফোন দেয় চিকিৎসার জন্য। আমরা তাদের ঢাকায় যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকি। রাজশাহীতে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার নারী ও শিশু মাদকাসক্ত রোগী রয়েছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক ফজলুর রহমান জানান, ‘নারীদের মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র প্রয়োজন। কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান উদ্যোগ নিলে আমরা অনুমোদন দেব।’

আরকে