বাঁশের সাঁকো

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ ও রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার সাথে যোগাযোগের একমাত্র সেতুটির নির্মাণকাজ চার বছরেও শেষ হয়নি। ভোগান্তিতে পরেছে দুই উপজেলার মানুষ। করতোয়া নদীর জয়ন্তিপুর ঘাটে সেতুটির নির্মাণকাজ অসম্পূর্ণ থাকায় ভোগান্তি কমাতে নিজেরাই চাঁদা তুলে বাঁশের সাঁকো বানিয়ে পারাপার করছে তারা।

জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি আওতায় রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার পল্লী টুকুরিয়া ইউনিয়নের গোপিনাথপুর সড়কের জয়ন্তিপুর ঘাটে করতোয়া নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে আছে। এতে ৩০ কোটি ৩১ লাখ ১৪ হাজার ৭৭০ টাকা চুক্তি মূল্যে ২৯ কোটি ৪৮ লাখ ৯৪ হাজার ২০৩ প্রাক্কলিক মূল্য ধরা হয়েছে। 

গপিনাথাপুর গ্রামের কৃষক রাজিউল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিনের দাবির পেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালে ব্রিজ নির্মাণকাজ শুরু করার নির্দেশ দেন। করোনা শুরু হলে ঠিকাদার কাজ বন্ধ করে দিয়ে চলে যান। এরপর আর কাজ শুরু না হওয়ায় নদীর দুই পাড়ের মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। তাই আমরা বাধ্য হয়ে সবাই মিলে চাঁদা তুলে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে আপাতত চলাচল করছি। আমরা চাই দ্রুত ব্রিজের নির্মাণকাজ শেষ করে চলাচলের ব্যবস্থা করা হোক।

স্থানীয় সামিম ইসলাম বলেন, চার বছর তো হয়ে গেলো। কবে যে ব্রিজ নির্মাণকাজ শেষ হবে কর্তৃপক্ষ ভালো জানে। নদীর দুই পাড়ের মানুষের সীমাহীন ভোগান্তি দেখার কেউ নাই বাধ্য হয়ে আমরা নিজেরাই বাঁশের সাঁকো তৈরি করে কোনোমতে চলাচল করছি। সাঁকো দিয়ে ভারি যানবাহন নেওয়া যায় না, নদীর দুই পাড়ের কৃষি পণ্য আনা-নেওয়া কারা যায় না। 

নবাবগঞ্জ উপজেলার মজিদ নগর কারিগরি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান বলেন, এ সেতু নির্মাণ হলে পীরগঞ্জ-নবাবগঞ্জের মানুষের দীর্ঘদিন ধরে ঘাট পারাপারের কষ্ট লাঘব হবে এবং দুই উপজেলার যোগাযোগ উন্নত হবে। 

নবাবগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মজিবর রহমান বলেন, জয়ন্তিপুর ঘাট-গোপিনাথপুর সড়কে জয়ন্তিপুর ঘাটে করতোয়া নদীর ওপরে ২৯৪ মিটার দৈর্ঘ্য, ৯.৮ মিটার প্রস্থে ফুটপাতসহ এ ব্রিজের নির্মাণকাজ চলছে। এতে ৮০টি পাইল, ৭টি স্প্যান, ৬টি পিলার ও ২টি এবাটমেন্ট রয়েছে। এছাড়াও রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা সীমানায় ৩৮৭ মিটার ও দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলা সীমানায় ৪৫০ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে। করোনার কারণে কিছুদিন নির্মাণ কাজ বন্ধছিল। এখন দ্রুত ব্রিজটি নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ৫৮টি পাইল, ৩টি পিলারের বেজ ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে।

টুকুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মন্ডল বলেন, ২০১৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পীরগঞ্জ আসনের এমপি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ব্রিজ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এ সেতু নির্মাণের ফলে দিনাজপুর নবাবগঞ্জের দাউদপুর, ফুলবাড়ী, বিরামপুর ও রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার জনসাধারণের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণসহ দুর্ভোগ-ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবে। পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি ঘটবে। এলাকার কৃষকদের কৃষিজাত পণ্য সহজে পরিবহনের ফলে নিকটতম হাট-বাজারে বিক্রিতে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হবে।

ইমরান আলী সোহাগ/আরকে