পর্যটককে হয়রানির অভিযোগে পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় সাদ্দাম মাল নামে এক কনটেন্ট ক্রিয়েটরকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। তবে স্থানীয়রা বলছেন- সেলফি তোলা নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত হলেও পরে তা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হয়েছে। 

গত রোববার (২০ নভেম্বর) রাত ১০টার দিকে কুয়াকাটার নীলঞ্জনা হোটেলের পূর্বপাশে মৎস্য ফ্রাই পট্টির মধ্যে বরগুনার পর্যটক মো. সাদিকুর রহমান ও সাদ্দাম মালের বন্ধুদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

অভিযোগকারী সাদিকুর রহমান মহিপুর থানায় মামলা করলে সোমবার ( ২১ নভেম্বর) ভোর ৫টার দিকে কুয়াকাটার হোটেল বনানী প্যালেস থেকে সাদ্দাম মালের বন্ধু সুমন সিকদারসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার হয়। এ মামলায় আলামিন কাজি ও রেজাউলসহ অজ্ঞাত পরিচয় আরও পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাদ্দাম মালের সঙ্গে প্রথমে সেলফি তোলা নিয়ে দুই পর্যটকের কথা কাটাকাটি শুরু হয়। সাদ্দাম মাল সমঝোতা করতে গেলে একপর্যায়ে বরগুনা থেকে আসা পর্যটক  তাকে গালি দেন। ওই পর্যটকের কথাবার্তায় বোঝা যায় তিনি নেশাগ্রস্ত ছিলেন। এক দড়িতে বেঁধে কুয়াকাটার সব নেতাদের বেঁধে নিয়ে যাবেন বলে মন্তব্য করেন। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এখানে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি, যেখানে কোনো পক্ষকে থানায় বা কারাগারে পাঠাতে হবে। 

থানায় দায়ের করা মামলায় সাদিকুর রহমান অভিযোগ করেন, আমরা পরিবারসহ রোববার সন্ধ্যায় বরগুনা থেকে কুয়াকাটায় বেড়াতে আসলে রাত ১০টা ৩০ মিনিটের দিকে ফিশ ফ্রাই পট্টির মধ্যে মাছ ফ্রাই খাওয়ার জন্য অবস্থান নিলে সাদ্দাম মালসহ কয়েকজন একত্রিত হয়ে আমাদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। প্রতিবাদ করলে ক্ষীপ্ত হয়ে তাদেরকে এলোপাতাড়ি কিলঘুষি মেরে জখম করেন। আমার গলায় থাকা ৮০ হাজার টাকা মূল্যের এক ভরি স্বর্ণের চেইন, সঙ্গে থাকা নগদ‌ ৩০ হাজার‌ টাকা ও দুটি মোবাইল ফোন নিয়ে যান সাদ্দাম মাল ও তার সহযোগী সুমন। 

স্থানীয় লাকড়ি ব্যবসায়ী আব্দুর রশীদ হাওলাদার বলেন, ঘটনার সময় সাদ্দাম মাল তাদের বলেন- আপনারা গেস্ট, ঝগড়া-বিবাদ কইরেন না। এমন সময় বরগুনা ওয়ালাদের থেকে একজন বলেন তোর কি দরকার। এই কথা যখন সাদ্দাম মালকে বলা হয় তখন দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। আর সাদ্দাম মালের নামে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এগুলো বরগুনার তারা ঘটিয়েছে। 

স্থানীয় দোকানদার দেলোয়ার বলেন, ১০-১২ জন পোলাপান এসে সাদ্দাম মাল যেখানে ফ্রাই খায় সেখানে বসে। ছবি তোলা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে বরগুনার যারা ছিল তারা বলে কুয়াকাটার সবাইকে দড়ি দিয়ে বেঁধে নিয়ে যাব বরগুনায়। এ সময় সাদ্দাম মাল প্রতিরোধ করেন ও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন।

নিউ হলিডে ফ্রাই দোকানের মালিক সগির বলেন, সাদ্দাম মাল এখানে এসে ফ্রাই খাচ্ছিলেন।  এরপরে ওই বরগুনার কিছু মেহমান আসছে, মাছ খাওয়ার পরে কিছু মেহমান সাদ্দাম মালের সঙ্গে ছবি তুলতে যান। তখন সেলফি তুলতে তুলতে একপর্যায়ে কী নিয়ে যেন ঝগড়া শুরু হয়। এরপর কথা কাটাকাটি হয়। সবাই মিলে দুই পক্ষের লোকজনকে দুই দিকে পাঠিয়ে দেই। এখানে এর বেশি কিছু হয়নি। এতে একবারে জেলে পাঠানোর মতো ঘটনা ঘটেনি। 

পরোটার দোকানের মালিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সাদ্দাম মাল আমাদের এখানে প্রায় সময় আসেন। তিনি অনেক ভালো ছেলে, কোনো বাজে নেশা নেই। সারাদিন বিনোদন নিয়ে থাকে।  মানুষকে আনন্দ দিতেও খুব পছন্দ করে। ক্ষমতার দাপট দেখানোর কথা বলে গন্ডগোল তৈরি হয়।

নীলাঞ্জনা হোটেলের স্টাফ শাহিন বলেন, সাদ্দাম মালকে আমি ছোটবেলা থেকেই চিনি। তিনি মানুষকে বিনোদন দিতে খুব ভালোবাসেন। আমরা কখনো সাদ্দাম মালের খারাপ ব্যবহার দেখিনি। কুয়াকাটায় হাজার হাজার পর্যটক আসে, সবার সাথেই সেলফি তোলেন।

কুয়াকাটা প্রেসক্লাবের সভাপতি নাসির উদ্দিন বিপ্লব বলেন, গতকাল যে ঘটনা ঘটেছে এতে মামলা দায়েরের মতো ঘটনা ঘটেনি। সাদ্দাম মালের পক্ষ থেকে মামলা দিতে চাইলে মহিপুর থানা মামলা নেয়নি। এক তরফা আদালতে পাঠানো হয়েছে।

অভিযোগকারী ইতালী প্রবাসী সাদিকুর রহমান বলেন,‌ রোববার রাতে কুয়াকাটা নীলাঞ্জনা হোটেলের পাশে ফিস ফ্রাই মার্কেটে আমরা সাতজন সেখানে উপস্থিত থেকে ফিস ফ্রাই অর্ডার করি ও একটা টেবিল নিই। এমন সময় সাদ্দাম মালকে দেখতে পেয়ে তাকে ডাক দেই। আমাদের সাথে খাবার খাওয়ার জন্য অফার করি। আমরা সবাই সাদ্দাম মালের সাথে ছবি তুলি। এমন সময় পেছন থেকে রেজাউল নামে একজন এসে আমাদের বাজে কথা বলে। আমাদের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। সাদ্দাম মালসহ তারা সবাই মদ্যপ অবস্থায় ছিল। এরপর তারা আমাদেরকে বিভিন্নভাবে রাস্তায় ব্যারিকেড তৈরি করে মারার চেষ্টা করে। স্থানীয়রা বাধা দেওয়ায় তারা পারেনি।  এরপর আমি মহিপুর থানায় ফোন করি এবং মহিপুর থানায় গিয়ে অভিযোগ জানাই। 

তিনি আরও বলেন, গতকাল (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের পরামর্শে মহিপুর থানায় মামলা তুলে নিতে চাইলে মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের অপারগতা প্রকাশ করেন। কোর্টে গিয়ে আইনজীবীদের মাধ্যমে সমঝোতায় আসার পরামর্শ দেন।

মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার মো. আবুল খায়ের বলেন, এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই, আমি কোনো বক্তব্য দিব না। এখানে বক্তব্য দেবে বাদী ও বিবাদী। এ কথা বলেই তিনি ফোন রেখে দেন।  

মাহমুদ হাসান রায়হান/আরএআর