সাদা-কালো, লাল-হলুদসহ নানা রঙের মাছ ছোটাছুটি করছে। তবে মাছগুলো অ্যাকুরিয়ামে নয়, ড্রাম আর পাকা চৌবাচ্চার পানিতে রাখা হয়েছে। শখের বশে খন্দকার অনিকুর রহমান অনিক শুরু করলেও এখন মাছ থেকে তার বাড়তি আয় হচ্ছে। প্রতি মাসে তিনি ২০-৩০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করছেন।

অনিক মাদারীপুর পৌর শহরের ১ নং ওয়ার্ডের সরদার কলোনির বাসিন্দা। লেখাপড়ার পাশাপাশি শখের মাছ এখন তার বাড়তি আয়ের পথ দেখাচ্ছে। 

জানা যায়, বিএ পাস করার পর নিজ বাড়ির আঙিনায় ও পুকুরের জলাশয়ে অপচনশীল সুতা দিয়ে তৈরি প্লাস্টিকের ড্রামে মাছ চাষ শুরু করেন অনিক। খাঁচাগুলো প্লাস্টিকের ড্রামের মাধ্যমে ভাসিয়ে রাখা হয়। প্রতিটি খাঁচার গভীরতা ৩ ফুট, প্রস্থ ৫ ও দৈর্ঘ্য ৮ ফুট। প্রতিটি খাঁচায় রয়েছে আলাদা প্রজাতির মাছ। প্রথম দিকে কিছু মাছ মারা যায়, তারপর আবার কিনে আনেন। এভাবে দিন দিন মাছ বাড়তে থাকে। বর্তমানে ছোট-বড় ৩০টি চৌবাচ্চা ও রিংয়ে বিভিন্ন জাতের প্রায় ১০ হাজার মাছ রয়েছে। এর মধ্যে মারবেল মলি, হোয়াইট মলি, ব্লাক মলি, প্লাটি, সোর্ড টেইল, ঘাপটি, পমেট, কৈ কার্প, এঞ্জেল, টাইগার ফিস, শার্ক অন্যতম।

খন্দকার অনিকুর রহমান অনিক বলেন, ২০২০ সালের শেষের দিকে রঙিন মাছ চাষ শুরু করি। শুরুতে ৫০ হাজার টাকার মাছের পোনা কিনি। সেগুলো বড় হয়ে আবার পোনা দেয়। পোনা রেখে ২০২১ সালে ২৫ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করি। লাভ বেশি হওয়ায় ১২ শতাংশ জায়গায় ও বাড়ির ছাদ ব্যবহার করে ১৯টি ট্যাংক তৈরি করে বাণিজ্যিকভাবে রঙিন মাছের চাষ শুরু করি। প্রতি মাসে এখান থেকে ২০-৩০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। ফলে পুঁজি এখন তিনগুণ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, অনেক বেকার যুবক আমার কাছ থেকে মাছ কিনে বাড়ির আঙিনায়, পতিত জমিতে, ছাদে চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে। রঙিন মাছ কীভাবে চাষ করলে ভালো মুনাফা অর্জন করা যায় মৎস্য কর্মকর্তাদের সেই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি।

বেকার যুবকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, চাকরির পেছনে না ঘুরে নিজে কিছু একটা দিয়ে শুরু করুন। তাহলে সফলতা অর্জন করতে পারবেন। আর এভাবে মাছ চাষ খুবই সহজ। অল্প পুঁজিতে অনেক টাকা আয় করা সম্ভব।

রিয়াল মুহিত নামে এক যুবক বলেন, আমার বন্ধু অ্যাকুরিয়ামে মাছ চাষ করছে। এখান থেকে প্রতি মাসে সে মোটা টাকা আয় করছে। আমিও পরামর্শ নিয়ে মাছ চাষ করার চেষ্টা করছি।

অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান বলেন, আমি অনলাইনে অনিক ভাইয়ের রঙিন মাছ চাষ দেখে আগ্রহী হই।তারপর ভাইয়ের কাছে এসে কিছু মাছ কিনে চাষ শুরু করি। এই কাজে পরিবারের লোকজন আমাকে সাপোর্ট দিয়েছে।

মাদারীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা তপন কুমার মজুমদার বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে তাকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে। বাণিজ্যিকভাবে সৌখিন প্রজাতির মাছের বাজার ব্যবস্থাপনা করা গেলে অনেকেই এটা থেকে আয় করতে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

রাকিব হাসান/এসপি