গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী এলাকায় পদ-পদবির লোভ দেখিয়ে এক তরুণীর সঙ্গে শারীরিক  সম্পর্ক করে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে কোনাবাড়ি থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী আব্দুর রহমান মাস্টারের বিরুদ্ধে। বুধবার (২৩ নভেম্বর) গাজীপুর মহানগরের শিববাড়ী এলাকায় ইউরো-বাংলা রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলনে ওই তরুণী এ অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে ওই তরুণী জানান, গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী আব্দুর রহমান মাস্টার আমাকে যুব মহিলা লীগের পদ-পদবির প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করেন। এরপর থেকে তিনি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এ ঘটনায় আব্দুর রহমান মাস্টারকে দলীয় সব পদ থেকে বহিষ্কার এবং তাকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানান তিনি। 

গত মাসে কোনাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানের আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই তরুণীর সঙ্গে আব্দুর রহমান মাস্টারের একটি অন্তরঙ্গ ভিডিও ভাইরাল হয়। ভিডিও ভাইরালের পর সম্মেলন শেষ হলেও এখনো কোনাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়নি।

ভিডিও প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী ওই তরুণী বলেন, কোনাবাড়ী যুব মহিলা লীগের কমিটিতে নেওয়া হবে এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি (আব্দুর রহমান মাস্টার)। আমার সঙ্গে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্কও করেন। কিন্তু আওয়ামী যুব মহিলা লীগের কমিটিতে আমাকে রাখা হয়নি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনারা যারা ভিডিওটি দেখেছেন, তাতে দেখবেন আমি স্বেচ্ছায় তার সঙ্গে সম্পর্ক করতে চাইনি। তিনি জোর-জবরদস্তি করে আমার সঙ্গে সম্পর্ক করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে ওই তরুণী অভিযোগ করে বলেন, আব্দুর রহমান মাস্টার আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে আছেন। অনেক বড় নেতাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ আছে। তিনি আমার মতো অনেক নারীকে বিভিন্ন কমিটিতে জায়গা করে দেবেন, পদ দেবেন—এসব লোভ দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করতেন। উনার কথা না শুনলে আমাদের উনার যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে, সেখানে ডেকে নিয়ে জোর-জবরদস্তি করতেন, শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করতেন। তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পেছনে একটি পাঁচতলা বাসা আছে, সেখানে উনি আমার মতো যারা আছে, তাদের নিয়ে যান, কমিটির লোভ দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করেন। এমনকি উত্তরায় তার যে বাসা আছে, সেখানেও মেয়েদের নিয়ে যান, আমারও যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু আমি যাইনি।

আমার পরিবার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, রাজনীতিতে আগ্রহ রয়েছে উল্লেখ করে ভুক্তভোগী তরুণী বলেন, আমি আমার পড়াশোনার পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রোগ্রাম করতাম। ওই সব প্রোগ্রামে যেতে যেতে তার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তারপর থেকে কোনো প্রোগ্রামে আমাকে ডাকলে আমি যেতাম। সেভাবেই উনার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যেহেতু আমারও রাজনীতি ভালো লাগে আর রাজনীতিতে আমার আগ্রহ আছে, তাই আমি উনার কথামতো চলতাম।

কোনাবাড়ী থানায় অভিযোগ নেওয়া হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি কোনাবাড়ী থানায়  গিয়েছি, কিন্তু পুলিশ ওই মাস্টারের নাম শোনার পর তারা তাদের ইচ্ছা মতো লিখে একটি জিডি নেয়।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওর বিষয়ে কোনাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মী বলেন, এমন অনৈতিক কাজ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তবে ব্যক্তি আবদুর রহমানের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের দায় আওয়ামী লীগ নেবে না। এর দায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকেই নিতে হবে।

এ বিষয়ে কোনাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান মাস্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এটিকে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেন।

গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবু সিদ্দিক বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আপনাদের কাছ থেকে শুনেছি। এ বিষয়ে কেউ থানায় অভিযোগ দায়ের করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিহাব খান/আরএআর