সন্তোষ কুমার রায়

চার-পাঁচটা স্বাভাবিক শিশুর মতোই ছোটবেলা কাটছিল সন্তোষের৷ খেলাধুলা, পড়াশোনাসহ সবকিছুই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু মাত্র ছয় বছর বয়সে ঘটে যাওয়া এক দুর্ঘটনা বদলে দেয় তার জীবন। বাড়ির উঠানে পড়ে থাকা বৈদ্যুতিক তার থেকে শক লাগায় কেটে ফেলতে হয় তার ডান হাত৷ তখন থেকে এক হাতেই জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন সন্তোষ কুমার রায়। 

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের সিংগিয়া গ্রামের মৃত ভুপেনের ছেলে সন্তোষ কুমার রায় (৩৮)। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট৷ ডান হাত কেটে ফেলায় পড়াশোনা করতে পারেননি তিনি৷ অন্যের বাড়িতে টুকিটাকি দিনমজুরি করেই জীবন চলতো তার। 

সন্তোষের স্ত্রী কংকিলা রাণী৷ এখন দুজনের পরিশ্রমে দুই সন্তান নিয়ে কোনোমতে সংসার চলে তাদের। নিরুপায় হয়ে এক হাতেই ভাড়ায় নেওয়া অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি৷ 

সন্তোষের ছোট ছেলে প্রফুল্ল কুমার রায় বলেন, আমি পড়াশোনা করি। বাবা-মায়ের কষ্ট দেখে অনেক খারাপ লাগে। পড়াশোনার পাশাপাশি আমিও তাদের কাজে সহযোগিতা করি। আমাদের বসতভিটা ছাড়া আর কিছুই নেই৷ বাবা বাধ্য হয়ে অটো নিয়ে বের হোন। সারাদিন আমরা টেনশন থাকি। কখন কী হয় বলা যায় না। তবুও তিনি আমাদের দুই ভাইয়ের জন্য বের হোন৷ পড়াশোনা শেষ করে একদিন বাবা-মায়ের কষ্ট লাঘব করব। সকলে দোয়া রাখবেন আমার জন্য৷ 

সন্তোষের স্ত্রী কংকিলা রাণী বলেন, গরীবের সংসার কষ্ট করিয়া চালাবা হচে। মুই মাইনসের বাড়িত কাজ করেচু। আর ছেলের বাপ এক হাত দিয়া অটো চালায়। সারাডা দিন টেনশনত থাকিবা হয়। যে রাস্তা-ঘাটত গাড়ি এক হাত দিয়া গাড়ি চালা খুব ভয়ের ব্যাপার। উনার যা আয় হয় তা দিয়া কোনোমত সংসার চলে৷ যদি কেহো কোনোভাবে সহযোগিতা করিলে ভালো হলে। খুব কষ্ট হচে সংসারটা চালাতি।  

সন্তোষ রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, খেলাধুলা করার সময় আমার দুটি হাত কারেন্টের (বৈদ্যুতিক) তারে লেগে যায়। তারপর বাম হাতটা কোনোমত রক্ষা পেলেও ডান হাতটা কেঁটে ফেলতে হয়৷ তখন থেকে এক হাত দিয়ে দুই হাতের কাজ করি। খাওয়া থেকে শুরু করে ঘরে-বাইরে সব কাজে অনেক কষ্ট হয়। তবুও করতে হয়। ঘরে বসে থাকলে তো আর কেউ খাবার এনে দেবে না৷ আর মাঠে এক হাতে দিয়ে কাজ করা যায় না। তাই বাধ্য হয়ে রিকশা নিয়ে রাস্তায় বের হইছি। যেরকম জিনিসপত্রের দাম চলা খুব মুশকিল৷ প্রতিদিন তিনশ টাকা করে জমা দিতে হয়৷ আর যা হয় তা দিয়ে সংসারে যতটুকু পারি সহযোগিতা করি। বেঁচে যেহেতু আছি কিছু করে তো খেতে হবি৷ দেখি কতদিন এভাবে চলা যায়। তবে আমাকে একটা অটোরিকশা দিয়ে সহযোগিতা করলে উপকার হত। 

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তার এক হাত নেই। তবুও আরেকটা হাত দিয়ে অটোরিকশা চালিয়ে সংসারের ভরণপোষণের চালায়। সে মানবেতর জীবনযাপন করছে তার পরিবার নিয়ে। আমরা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তার সহযোগিতা করা হয়েছে। যদি তাকে একটা অটোরিকশা কিনে দেওয়া যায় অথবা আলাদা কর্মের ব্যবস্থা করে দেওয়া যায় তবে পরিবার নিয়ে ভালো মতো চলতে পারবে৷ 

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের শামসুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক হাতে অটোরিকশা চালানো বেশ কঠিন। এতে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতা করা হবে৷ 

এম এ সামাদ/আরকে