নদী ভাঙন

জোয়ারে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘর ছেড়ে পরিবারের সকলকে নিয়ে নিরাপদে আশ্রয় বেড়িয়ে যেতে হয়। এভাবেই ঝুঁকির মাঝে জীবন চলছে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার লতাচাপলী ইউনিয়নের ১২ পরিবারের। ২০০৭ সালে ১৫ নভেম্বর সুপার সাইক্লোন সিডরের পর থেকেই খাপড়াভাঙ্গা নদীর মোহনায় ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে ১২ পরিবারের ৬০ জন সদস্য। পুনর্বাসন না হওয়ায় বর্ষা মৌসুম হলে ভাঙনের ভয়ে পরিবারের বড়রা সারারাত জেগে থাকেন। তাদের প্রতিটি রাত কাটে আতঙ্কে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, প্রায় ৫০ বছর আগে থেকে লতাচাপলী ইউনিয়নের নাউরীপাড়া গ্রামের খাপড়াভাঙ্গা নদীর ৪৮ নম্বর পোল্ডারের বেড়িবাঁধের পাশে বসবাস করে আসছে পরিবারগুলো। সিডরে নদীরক্ষা বেড়িবাঁধটি ভেঙে যায়। পরে এসব পরিবারকে বাইরের অংশে রেখে নতুন করে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তাই এখনো ঝুঁকিতে আছেন তারা। বর্তমানে নতুন করে শুরু হয়েছে খাপড়াভাঙ্গা নদীর ভাঙন। প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর বহু পরিবারকে আশ্রয়ণ কেন্দ্রে পুনর্বাসন করা হলেও তারা পায়নি মাথাগোজার ঠাঁই। তাই বাধ্য হয়ে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে পরিত্যক্ত বেড়িবাঁধের পাশেই বসবাস করছেন তারা। বেড়িবাঁধটির একদিকে বড় দিঘী অন্যদিকে নদী।

ঝুঁকিতে থাকা বাসিন্দা মালেকা বলেন, আমরা বন্যায় সব হারিয়ে কোনোমতে এখানে থাকছি। জোয়ারে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘরবাড়ি তলিয়ে যায়। বন্যা হলেতো সবশেষ। এখন পর্যন্ত একটু থাকার মতো জায়গা সরকার আমাদের করে দিতে পারেনি। আমরা অনেকবার বিভিন্ন অফিসে গেছি কোনো কাজ হয়নি।

বাসিন্দা ইব্রাহিম বলেন, ১২টি পরিবারের সবাই জেলে। কত মেম্বার চেয়ারম্যানের কাছে গেলাম একটু পুনর্বাসন কেউ করে দিলো না। সরকারের কাছে জোর অনুরোধ আমাদের জন্য যেন একটু থাকার ব্যবস্থা করে। সন্তান নিয়ে খুব সমস্যায় আছি।

লতাচাপলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনছার উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘সুবিধা অনুযায়ী খাস জমি পাচ্ছি না যার ফলে এ পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন করা যাচ্ছে না। তবে আমরা চেষ্টা করছি যাতে তাদের দ্রুত সরিয়ে নিরাপদে বসবাসের সুযোগ করে দেওয়া যায়।’

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শংকর চন্দ্র বৈদ্য বলেন, ভাঙনকবলিত এলাকার এসব বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। আমরা ভূমিহীন মানুষের তালিকা করছি। খুব দ্রুত তারা মাথা গোজার ঠাঁই পাবে।

হাফিজুর রহমান আকাশ/আরকে