ব্রেন টিউমারসহ নানা রোগে আক্রান্ত কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের দীর্ঘদেহী সুবেল হোসেনের (২৩) পাশে দাঁড়িয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল জব্বার। শনিবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে দৌলতপুর উপজেলার রিফাইতপুর ইউনিয়নের সংগ্রামপুর গ্রামে সুবেলের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে কথা বলেন ইউএনও। এ সময় পরিবারটিকে আর্থিক সহযোগিতা করেন তিনি। 

সুবেল হোসেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার রিফাইতপুর ইউনিয়নের সংগ্রামপুর গ্রামের কৃষক  ইউনুচ আলীর ছেলে। তার উচ্চতা ৮ ফুট। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সুবেল দ্বিতীয়। শারীরিক সমস্যার কারণে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর আর স্কুলে যাওয়া হয়নি তার।  সুবেল হোসেনই এখন দেশের দীর্ঘদেহী মানব বলে দাবি স্থানীয়দের। 

অর্থের অভাবে সুবেলের চিকিৎসা বন্ধ হওয়া নিয়ে ‘সবাই শুধু আশ্বাস দেয়, কেউ সহযোগিতা করে না’ শিরোনামে গত বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টে  একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে খবরটি বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়। বিষয়টি জানতে পেরে সুবেলের বাড়িতে যান ইউএনও আব্দুল জব্বার। এ সময় ইউএনও পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে ১০ হাজার টাকা আর্থিক সহযোগিতা করেন এবং সুবেলের চিকিৎসার ব্যাপারে সার্বিকভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। 

সুবেলের ভাই সাহাবুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আল্লাহর কাছে হাজারো শুকরিয়া দৌলতপুরের ইউএনও স্যার বিকেলে আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। তিনি সুবেলের চিকিৎসার জন্য সার্বিকভাবে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন। এ সময় তিনি আমাদের ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন। তিনি অনেক ভালো মানুষ। আমি সবার কাছে দোয়া চাই, যেন আমার ভাই দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। 

এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল জব্বার ঢাকা পোস্টকে বলেন, সুবেলের বাড়িতে গিয়েছিলাম। সুবেল ও তার পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে কথা হয়েছে। এ সময় তাকে কিছু আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে ঢাকার নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে তাকে নিয়ে যেতে পরামর্শ দিয়েছি। তার পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। আমরা সার্বিকভাবে তাকে সহযোগিতা করবো। এটা আমাদের দায়িত্ব। 

সুবেল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার উচ্চতা ৮ ফুটের বেশী। ২০১৩ সাল পর্যন্ত আমি ভালোই ছিলাম। অন্যসব মানুষের মতো স্বাভাবিক জীবন ছিল আমার। ৯ বছর আগে আমার রোগটি ধরা পড়ে। গত চার বছর আগে আমার উচ্চতা আরও বেশি বেড়ে যায়। এছাড়া মাথায় টিউমার ও পায়ের সমস্যার কারণে চলাফেরা করতে পারি না। সারাক্ষণ বিছানায় শুয়ে-বসে থাকতে হয়। বাড়ির বাইরে বের হই না। মাথা ও পায়ে যন্ত্রণা করে। দিন দিন উচ্চতা বেড়েই চলেছে। খাটের তুলনায় দেহ বড় হওয়ার শুতে সমস্যা হয়। ঘর থেকে বাইরে বের হতে গেলে দরজা ও ঘরের ছাউনির সাথে মাথা বেধে যায়। অনেক সমস্যা ও কষ্টের মধ্যে আছি। আগে আমি স্কুলে যেতাম, মাঠে কাজ করতাম। স্বাভাবিক মানুষের মতো সবকিছু করতে পারতাম। এখন আর কিছুই করতে পারি না।

তিনি আরও বলেন, ইউএনও স্যার আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। তিনি টাকা দিয়ে গেছেন এবং সার্বিকভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। হাসপাতালে যেতে ভয় করে, তবুও এবার যাব। 

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ২৮ এপ্রিল বাংলাদেশের দীর্ঘ মানব কক্সবাজারের রামু উপজেলার জিন্নাত আলীর মৃত্যু হয়। তার উচ্চতা ছিল ৮ ফুট ৫ ইঞ্চি। তিনি মারা যাওয়ার পর দৌলতপুর উপজেলার সুবেল হোসেনই এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে লম্বা মানুষ বলে দাবি স্থানীয়দের। 

রাজু আহমেদ/আরএআর