ইটভাটার শ্রমিকদের বসতি

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় ধলেশ্বরী নদীর ওপরে নির্মিত বালুরচর সেতুর নিচের জমি দখল করে ইটভাটা নির্মাণ করা হয়েছে। সরকার ব্রিকস নামের ইটভাটার অনেকটা অংশই রয়েছে এই সেতুর নিচে। একদিকে যেমন সেতুটি ঝুঁকিতে রয়েছে অন্যদিকে ইটভাটায় কর্মরত প্রায় ৩০০ শতাধিক নারী ও পুরুষ শ্রমিক এবং শিশু-কিশোর ঝুঁকিতে রয়েছেন। এছাড়াও ইটভাটাটি ধলেশ্বরী নদীর জমিও দখলের অভিযোগ উঠেছে। এ এলাকায় অবস্থিত অনেক ইটভাটাই নদীর জায়গা দখল করে আছে বছরের পর বছর।

জানা যায়, সিরাজদিখান উপজেলা বালুরচর ইউনিয়নে বালুরচর সেতুটি ২০১০-১১ অর্থ-বছরে ধলেশ্বরী নদীর উপর নির্মাণ করা হয়। ৪৮০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি ৩ কোটি ২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল। সেতুটি জেলার চারটি উপজেলার কয়েক লাখ লোক রাজধানী ঢাকা যাতায়তে বাইপাস সড়ক হিসেবে কাজ করে থাকে। এ এলাকার বেশিরভাগ ইটভাটার কাছে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। এমনকি বৈধ কোনো কাগজপত্রও নেই।

সরেজমিন দেখা গেছে, সিরাজদিখান উপজেলার বালুরচর ইউনিয়নের বালুরচর সেতুর উত্তর অংশে দখল করে সরকার ব্রিকস নামের ইটভাটা নির্মাণ করা হয়েছে। তারা সেতুর নিচের অংশে তৈরি করছেন শ্রমিকদের থাকার বাসস্থান। ইটভাটার শ্রমিকরা বসবাস করছেন বাঁশ-চাটাই দিয়ে নির্মিত প্রায় ৫০টির মতো খুপরি ঘরে। দিনের বেশিরভাগ সময় শ্রমিকরা কাজে ভাটায় থাকলেও তাদের শিশু-কিশোর সন্তানরা সারাক্ষণ সেতুর তলেই অবস্থান করছেন।  

স্থানীয়রা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, একটি ইটভাটার মালিক সেতুর জমি দখল করে ইটভাটার ব্যবসা করছে‌।  দেখার কেউ নেই। সেতুটি দিয়ে অধিক হারে ট্রাক, ট্রলি ও সিএনজিচালিত গাড়ি চলাচল করে। একটি দুর্ঘটনা হলে, এ অংশে অনেক প্রাণহানীর শঙ্কা রয়েছে। 

তারা আরও জানান, ইটভাটা নির্মাণের ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ম, পরিবেশ আইন বা ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন কোনো কাজে আসছে না বললেই চলে। আইনের প্রয়োগ থাকলে এভাবে তারা দখল করে নির্মাণ করতে পারতো না।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক শ্রমিকরা জানান, আমরা এখানে ইটভাটার দালালদের মাধ্যমে কাজ করে থাকি। মালিক যেখানে রাখবে সেখানেই থাকতে হবে। এখানে কথা বলার কোন স্হান নেই। সেতুর নিচে বসবাস বিষয়টাতে কোন কথা বলতে চাননি তারা। 

সরকার ব্রিকসের মালিক মো. আমজাদ হোসেন সরকার বলেন, আমি সেতুর জমি দখল করিনি। আমার সরকার ব্রিকস ৪ বছর আগে বন্ধ হয়েগেছে। তাহলে এখন এই ইটভাটা নামকি? এতে তিনি বলেন এখন ইটভাটার নাম 'আপেল মাহমুদ' ইটভাটা এটাও আমার।

সেতুর নিচে বিপদজনক স্থানে শ্রমিকদের বসবাসের জন্য ঘর নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে শ্রমিকরা নিয়মিত থাকে না। তারা এখানে রেস্ট করে। তবে শিশু-কিশোররা এখানে অবস্হান করে। 

সিরাজদিখান উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মো. রেজাউল ইসলাম বলেন, সেতুর নিচে বসতি নির্মাণ অত্যন্ত বিপদজনক বা ঝুঁকিপূর্ণ। এমন কেউ করে থাকলে সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করে ব্যবস্হা নেওয়া হবে।

মুন্সীগঞ্জ জেলা কলকারখানা ও পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক (সেফটি) মো. আল-আমীন বলেন, শ্রমিকে জন্য নিরাপদ বাসস্থান প্রতিটি মালিকেরই নিশ্চিত করতে হবে। বিষয়টির নিয়ম-আইনের বিষয়টি নিশ্চিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শরিফুল আলম তানভির বলেন, সেতুর নিচে শ্রমিকের বসবাস বিষয়টি আপনার কাছ থেকে জানলাম। এমন যদি হয়ে থাকে, তাহলে দেখে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

 ব.ম শামীম/আরকে