দুই হাত নেই। নেই ডান পা-ও। আছে শুধু বাম পা। সেটিও স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক ছোট। অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে পায়ের আঙুলের ফাঁকে কলম রেখে দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ ৩.৮৮ পেয়েছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রাসেল মৃধা।  

রাসেল মৃধা সিংড়া উপজেলার শোলাকুড়া মহল্লার দিনমজুর আব্দুর রহিম মৃধার ছেলে। শোলাকুড়া ইসলামিয়া আলিম মাদরাসা থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি।

এর আগে (১৫ সেপ্টেম্বর) ‌‌দুই হাত এক পা নেই, বাঁ পায়ে লিখে পরীক্ষা দিচ্ছে রাসেল শিরোনামে ঢাকা পোস্টে সংবাদ প্রকাশ হলে রাসেলকে দেখতে পরীক্ষা কেদ্রে ছুটে যান জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। এসময় তিনি রাসেলের খোঁজখবর নেন এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।

এরপর (১৯ সেপ্টেম্বর) সেই রাসেলকে দেখতে পরীক্ষা কেন্দ্রে হাজির ডিসি শিরোনামে ঢাকা পোস্টে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

অদম্য রাসেল মৃধা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার দুটো হাত নাই, একটি পাও নেই। এক পা দিয়ে লিখে এবার দাখিল পরীক্ষায় অংশ করেছি। সকলের দোয়ায় আমি দাখিল পরীক্ষায় পাস করেছি। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন। যেন সামনের দিনগুলোতে ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারি।

রাসেল আরও বলেন, আমার অনেক ইচ্ছা লেখাপড়া করে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে একটি চাকরি করবো। আমার বাবা-মায়ের সকল দায়িত্ব নেব। তারা আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছে। ফলাফলের জন্য আমার বাবা-মা ও শিক্ষকদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ।

রাসেলের মা লাভলী বেগম বলেন, দুটি সন্তান নিয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। ছেলের ইচ্ছা বড় হয়ে একজন আদর্শবান শিক্ষক হয়ে দেশ ও জাতির সেবা করবে। সরকারি সহায়তা পেলে রাসেলকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলবো।

রাসেল মৃধার বাবা আব্দুর রহিম মৃধা বলেন, শারীরিক সীমাবদ্ধতা আমার ছেলের বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। সে এবার এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেছে। আমি অনেক আনন্দিত। তার লেখাপড়ার প্রতি অনেক আগ্রহ। দিনমজুরের কাজ করে অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করাচ্ছি। লেখাপড়া শিখে সে একদিন আমাদের মুখ উজ্জল করবে। সবাই আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন।

শোলাকুড়া ইসলামিয়া আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোর্তারফ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাসেল মৃধা এ বছর আমার প্রতিষ্ঠান থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে সে কৃতিত্বের সঙ্গে সাফল্য অর্জন করবে। 

তাপস কুমার/এমএএস