করোনার সময় বাবার আয় রোজগার ঠিকমতো না থাকায় অভাবে বই কিনতে পারেননি আবু জাইমা (১৭)। বন্ধু-বান্ধবীদের কাছ থেকে বই সংগ্রহ করে পরীক্ষা দিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি।

আবু জাইমা যশোর শহরের মিশনপাড়া খ্রিষ্টান কবরস্থান এলাকার আবু জাফর ও সুরাইয়া ইয়াসমিনের বড় মেয়ে। বাবা আবু জাফর পেশায় একজন ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী এবং মা গৃহিনী।

সোমবার (২৮ নভেম্বর) এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর সংবাদ সংগ্রহের জন্য যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গেলে জাইমাসহ তার পরিবারের দেখা মেলে। ফলাফল পেয়ে সেখানে খুঁশিতে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলেন তারা। সেখানে তাদের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্টের এ প্রতিবেদকের। 

জানা গেছে, আবু জাফরের পরিবারে জাইমা ও দুই ছেলেসহ মোট পাঁচ জন সদস্য। আবু জাফর ভ্যানে করে যশোরের ঝিকরগাছা, চৌগাছা, শার্শা থেকে ভাঙাড়ি সংগ্রহ করে তা শহরে এনে বিক্রি করেন। আর এ পেশায় নির্ভর করে চলে জাইমা ও দুই ছেলের পড়াশোনাসহ পুরো সংসারের যাবতীয় খরচ। 

জাইমার বাবা বলেন, আমি ভ্যান চালিয়ে দূর-দুরান্ত থেকে ভাঙাড়ি সংগ্রহ করে যশোরে এনে বিক্রি করি। এর থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে জাইমার পড়াশোনা চালিয়েছি এবং পুরো সংসারের যাবতীয় খরচ সামাল দিয়েছি। পড়াশোনার প্রতি জাইমার আগ্রহ থাকায় দরিদ্র হওয়া সত্ত্বেও আমি পিছপা হইনি। ধার দেনা করে আমার মেয়ের পড়াশোনার খরচ যোগান দিয়েছি।

আবু জাফর আরও বলেন, আমি আমার মেয়ের ফলাফলে অনেক খুশি। আমার মেয়ের স্বপ্ন সে ডাক্তার হয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করবে। কিন্তু আমার ডাক্তারি পড়ানোর সামর্থ্য নেই।

জাইমার মা সুরাইয়া ইয়াসমিন বলেন, আমার মেয়েকে গাইড বা প্রয়োজনীয় বই কিনে দিতে পারিনি। জাইমা ওর সহপাঠীদের কাছ থেকে বই ধার করে, অনলাইন থেকে বইয়ের পেজ ডাউনলোড করে প্রিন্ট দিয়ে পড়েছে। এমনকি পরীক্ষা আগে ফরম ফিলাপের এক হাজার ৪০০ টাকা চার-পাঁচজনের কাছ থেকে ধার করে নিয়ে দিতে হয়েছে। 

জাইমা বলেন, আমি জিপিএ-৫ পেয়ে অনেক আনন্দিত। করোনার সময় আমাদের পরিবারের অবস্থা অনেক খারাপ ছিল। এর মধ্যে প্রয়োজনীয় বই কিনতে পারিনি। তবুও আমি আমার পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছি। আমার বাবা-মা আমার জন্য অনেক পরিশ্রম করেছে। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। 

জাইমাদের প্রতিবেশী কামাল হোসেন বলেন, জাইমার পড়ালেখার প্রতি অনেক আগ্রহ। অসহায়ত্ব বা দারিদ্রতা কোনো কিছুই তাকে হার মানাতে পারেনি। 

এর আগে জাইমা জেএসসি ও পিএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। ভালো রেজাল্টের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে এবার মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়েছেন। এবার উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ে ডাক্তার হবার স্বপ্ন দেখছেন জাইমা। 

এ্যান্টনি দাস অপু/এমএএস