দীর্ঘদিন ধরে মাঠে প্রচার-প্রচারণা চালালেও শেষ  মুহূর্তে এসে রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। এতে করে বিএনপির পর এবার তাদের জোটমিত্র জামায়াত ইসলামীও থাকছে না রসিক নির্বাচনে। সোমবার (২৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের রংপুর মহানগরের আমির এটিএম আজম খান।

নির্বাচন কমিশনে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় দলটির পক্ষে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে অংশ নিতে গণসংযোগ চালাচ্ছিলেন দলটির রংপুর মহানগরের সাবেক আমির অধ্যাপক মাহাবুবার রহমান বেলাল। তার পক্ষে নগরজুড়ে বিলি করা হয়েছে হাজার হাজার লিফলেট। ছাপানো হয় পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন। বাড়ি বাড়ি জামায়াতে ইসলামীর নারী সংগঠকরা ভোট প্রার্থনা করে লিফলেটও বিলি করেছেন। প্রচারণার অংশ হিসেবে বিভিন্ন মসজিদে নামাজ আদায়ের পর সমর্থন চেয়েছেন মেয়র প্রার্থী অধ্যাপক মাহাবুবার রহমান বেলাল।

এতো প্রচারণা চালানোর পর হঠাৎ কেন নির্বাচন থেকে আসার সিদ্ধান্ত, এর জবাবে রংপুর মহানগর জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান আমির এটিএম আজম খান জানান, স্বতন্ত্র হিসেবে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সাবেক মহানগর আমির মাহবুবার রহমান বেলাল প্রচার প্রচারণা চালিয়েছিলেন এবং মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত হয়েছে এই নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার। এ কারণে আমাদের প্রার্থীকে সরে দাঁড়াতে হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, গত শনিবার (২৬ নভেম্বর) দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্তের আলোকে মাঠে গণসংযোগ থেকে সরে আসেন আমাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। এছাড়াও আমরা এই সরকারের জুলুম নির্যাতন নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিএনপির সঙ্গে যুগপদ আন্দোলনে আছি। এই সরকারের পতন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠনের মাধ্যমেই নির্বাচনে অংশ নিবো আমরা।

এদিকে বিএনপি রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ থেকেই এই নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছে। এ ব্যাপারে রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু বলেন, আগামী ২৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য রংপুর সিটি করপোরেশনের ভোটে আমরা অংশ নিচ্ছি না। এটা তফসিল ঘোষণার আগেই আমরা জানিয়ে দিয়েছি। কারণ আমরা মনে করি, এই সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।

রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব আবদুল বাতেন জানান, আজ সোমবার বিকেল পর্যন্ত মেয়র পদে ১৩ জনসহ ১৮৯ প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এদের মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা করেছেন ১০২ জন প্রার্থী।

এখন পর্যন্ত মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের প্রার্থী শাফিয়ার রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আমিরুজ্জামান পিয়াল, খেলাফত মজলিশের প্রার্থী তৌহিদুর রহমান মণ্ডল রাজু, জাকের পার্টির খোরশেদ আলম। এছাড়াও স্বতন্ত্র পদে লড়তে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন ইঞ্জিনিয়ার লতিফুর রহমান মিলন, মেহেদী হাসান বনি ও আবু রায়হান, জাতীয় শ্রমিক লীগের রংপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এম এ মজিদ এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহানগর সভাপতি আতাউর জামান বাবু।

প্রসঙ্গত, এবার তৃতীয় বারের মতো রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন ২৯ নভেম্বর। ১ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাই এবং ৮ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে পরের দিন ৯ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দের পর প্রার্থীরা ১৭ দিন প্রচার-প্রচারণার সুযোগ পাবেন। ২৭ ডিসেম্বর ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত এক টানা ভোটগ্রহণ করা হবে। 

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ