হাফেজ মনোয়ারা বেগম

বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা প্রার্থনার অংশ হিসেবে কোরআন তেলাওয়াত করেন। অনেকেই কোরআন তেলাওয়াতে হয়ে উঠেছেন দক্ষ। এরমধ্যে বেশিরভাগই রয়েছেন পুরুষ। সব সময় দেখা যায়, বিভিন্ন মাদরাসা কিংবা বাসায় গিয়ে আরবি পড়ান পুরুষ হাফেজরা। কিন্তু এবার যেন এগিয়ে আসলেন নারীরাও।

৪-৫ বছর ধরেই পুরুষ-নারী উভয়ের মাঝে কোরআন শিক্ষা (আরবি) দিয়ে যাচ্ছেন এক নারী হাফেজ। নিজে শিখে অন্যের মাঝে কোরআন শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে দীর্ঘদিন ধরেই এই কাজ করছেন তিনি।

বলছিলাম ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের মাদারগঞ্জ গ্রামের শহিদুল ইসলামের স্ত্রী মনোয়ারা বেগমের (৪০) কথা।

রোববার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে নিজের জীবনের কোরআন শিক্ষার বিষয়টি তুলে ধরেন নারী হাফেজ মনোয়ারা বেগম। হাফেজ মনোয়ারার এমন মহৎ কাজকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকার সর্বস্তরের মানুষ।

সরেজমিনে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই সদর উপজেলার মাদারগঞ্জ এলাকার হাফেজ মনোয়ারা বিনা পয়সায় নারী-পুরুষের মাঝে কোরআন শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষার বিনিময়ে কখনো কারও কাছে চাননি কোনো অর্থ। শুধু সকলের দ্বারে কোরআন শিক্ষা পৌঁছে দেওয়াই যেন ছিল তার স্বপ্ন। সে স্বপ্নে যেন অনেকটাই এগিয়ে এই নারী হাফেজ। তার শিক্ষার আলোয় আলোকিত সেই গ্রামের অনেকেই।

পবিত্র কোরআন শরিফ

স্থানীয় বাসিন্দা সারমিন আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমি আগে থেকেই কোরআন পড়তাম। বিয়ের পর সেভাবে আর পড়া হতো না। একদিন শুনি আমাদের এলাকার মনোয়ারা নামের একজন হাফেজ কোরআন পড়াচ্ছেন। আমি সেখানে গিয়ে আবারও পড়া শুরু করি। তিনি অনেক ভালোভাবে আমাদের বুঝিয়ে পড়ান।’

আম্বিয়া খাতুন নামের ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘আমি ও আমার মেয়ে সকালে করে মনোয়ারার বাসায় গিয়ে কোরআন পড়া শিখি। শুধু আমরা না, আমাদের এলাকার অনেকেই পড়েন। আগে দেখতাম অনেক পুরুষ হাফেজ কোরআন পড়ান। এখন আমাদের এলাকায় একজন নারী হাফেজ রয়েছেন। যিনি আমাদের অনেক ভালো করে আরবি পড়ান।’

আব্দুল খালেক নামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমার ছেলে তার কাছে আরবি পড়তে যায়। শুধু বাংলা-ইংরেজি পড়লে তো হবে না। আমাদের সন্তানদের মাঝে অবশ্যই কোরআনের শিক্ষা দিতে হবে। এলাকায় একজন নারী হাফেজ আছেন, তার কাছে পাঠাই। একজন নারী আরবি পড়াচ্ছেন, এটা এলাকার জন্য গর্বের বিষয়।’

কথা হয় সেই নারী হাফেজ মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘৪ বছর ধরেই আমি এই এলাকার ৫০ জনের বেশি মানুষকে কোরআন শিক্ষা দিয়েছি। বিনা পয়সায় পড়াই। শুধু আল্লাহর শুকরানা আদায় করি। আমি ছোট থেকেই কোরআন শিক্ষা অর্জনের জন্য চেষ্টা করে গেছি। কারণ ইচ্ছা ছিল, আমি নিজে শিখে সবাইকে শেখাব।’

হাফেজ মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘ছোটবেলায় প্রথমে আমি মক্তবে পড়ার পর পঞ্চম শ্রেণি পাস করে মাদরাসায় ভর্তি হয়েছি। এরপরেই আমার বিয়ে হয়। তারপরেও কোরআন পড়ার চেষ্টা করি। এ সময় এক হুজুরের কাছে গিয়ে কোরআন পড়া শিখিয়ে নেই। এরপর ধীরে ধীরে আমি শিখে যাই। কোরআন শিখতে অনেকেই আমার বাসায় আসেন। ফলে আমারও চর্চাটি অব্যাহত থাকে’

তিনি আরও বলেন, ‘পরপর তিনবার করে আমি কোরআন শরিফ খতম দিয়েছি। আমার মাধ্যমে এই এলাকার অনেক মানুষ কোরআন পড়তে পারেন। আমার জন্য এটা অনেক আনন্দের খবর। আমি চাই সকলেই আল্লাহর পথে চলুক, কোরআন পড়ুক।’

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘একজন নারী আরবি পড়ান, বিষয়টি আমি শুনেছি। এলাকার অনেকেই তার কাছে আরবি শেখেন। এটি অনেক ভালো কাজ। আমি মনোয়ারা বেগমকে ধন্যবাদ জানাই।’

এমএসআর