দুপুরে ছেলে নাজমুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে রংপুর কেন্দ্রীয় সিটি বাস টার্মিনালে এসেছেন জরুহুল ইসলাম। উদ্দেশ্য অসুস্থ বোনকে দেখতে রাজশাহী যাবেন। কিন্তু টার্মিনালে এসে হতাশ হন পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সী এই কৃষক। রাজশাহী রুটে রংপুর থেকে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। এতে জহুরুল ইসলামের মতো রাজশাহীগামী যাত্রীরা পড়েছেন চরম বিপাকে।    

বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে রংপুর মহানগরীর পর্যটন মোটেল রোডে কেন্দ্রীয় সিটি বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, রাজশাহী রুটের বেশির ভাগ যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। কাউন্টারগুলো থেকে বন্ধ রয়েছে টিকিট বিক্রি। শ্রমিকেরা অলস সময় পার করছেন। তবে রংপুর বিভাগের আন্তঃজেলা রুটে বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।  
 
টার্মিনালে কথা হয় কৃষক জহুরুল ইসলামের সঙ্গে। কোথায় যাবেন- জানতে চাইলে অনেকটা আক্ষেপ নিয়েই এই কৃষক বলেন,  ‘ব্যাটাক নিয়্যা রাজশাহী যামো, কিন্তুক অ্যালাতো শুনোছি ওত্তি নাকি হরতাল হওছে। ওই তকনে অমপুর (রংপুর) থাকি রাজশাহীত বাস যাওছে না। কথায় কথায় বাস বন্ধ থুইলে হামার মতো সাধারণ মানুষের কষ্ট হয়। কিন্তু সরকারের তো কোনো ক্ষতি হয় না। মালিক-শ্রমিকরা যদি কথায় কথায় হরতাল-ধর্মঘট দেয়, তাইলে হামরা গরিব মানুষগুল্যা কেমন করি বাঁচমো? সরকারের উচিত গরিব মানেুষের কথা চিন্তা করা।’

পরিবহন ধর্মঘটের কারণে রাজশাহীসহ বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, পাবনা, নওগাঁ, জয়পুরহাট ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সংশোধন, মহাসড়ক বা আঞ্চলিক মহাসড়কে অবৈধ ত্রি-হুইলার চলাচল বন্ধ, ড্রাইভিং লাইসেন্স সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন ও পুলিশি হয়রানি বন্ধ করাসহ ১০ দফা দাবি পূরণ না হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। 

রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপ কার্যালয়ে গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত এক যৌথসভা শেষে রাজশাহী বিভাগীয় পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি সাফকাত মঞ্জুর বিপ্লব এ ঘোষণা দেন।

এদিকে আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ রয়েছে। ওই কর্মসূচিকে ঘিরেই পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে সাফকাত মঞ্জুর বিপ্লব জানান, গণসমাবেশের সঙ্গে তাদের ডাকা ধর্মঘটের কোনো যোগসূত্র নেই। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সময়ে তারা সংগঠনের পক্ষ থেকে ১০ দফা দাবি তুলে ধরে আন্দোলন করে আসছে। একই ধারাবাহিকতায় রাজশাহী রুটে ধর্মঘট আহ্বান করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, রাজশাহী থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন রুটে প্রতিদিন সহস্রাধিক বাস চলাচল করছে। এই ধর্মঘটের কারণে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। আমাদের ১০ দফা দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।

অন্যদিকে রংপুরে কেন্দ্রীয় বাস সিটি টার্মিনাল ছাড়াও নগরীর মডার্ন মোড়, মিঠাপুকুরের জায়গীরহাট বাসস্ট্যান্ড, বলদিপুকুর বাসস্ট্যান্ড, পীরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড ও লালদিঘী থেকে রাজশাহী রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে অনেকেই ছোটো ছোটো যানবাহন ও থ্রি-হুইলারে করে ভেঙে ভেঙে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে চেষ্টা করছেন। যদিও এতে বাসের চেয়ে অন্য বাহনে ভাড়ার হিসেব নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।

সিটি বাস টার্মিনালে কথা হয় রংপুর-নাটোর-পাবনা রুটে চলাচল করা বসুন্ধরা বিজনেস ক্লাস পরিবহন, রংপুর-ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা রুটের বাহন পরিবহন, বগুড়া-নাটোর-কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ-যশোর রুটের ওবাহে এক্সপ্রেসসহ বেশ কয়েকটি যাত্রীবাহী পরিবহনের  শ্রমিকদের সঙ্গে। ধর্মঘট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তারা জানান, রাজশাহী-বগুড়া রুটে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় রংপুর থেকে বাস চলাচল করছে না। এটার সঙ্গে রংপুরের মালিক বা শ্রমিকদের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেন তারা।

এদিকে রংপুর জেলা মটর মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফতাবুজ্জামান লিপ্পন বলেন, রাজশাহী বিভাগে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট চলছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রংপুর থেকে রাজশাহী-বগুড়ামুখী বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে ঢাকাগামী বাসসহ আন্তঃজেলা রুটে বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। কবে নাগাদ ধর্মঘট শেষ হবে তা এখনই বলা সম্ভব নয়। 

প্রসঙ্গত, নিত্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে নেতাকর্মীদের মৃত্যুর প্রতিবাদ এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দেশের সব বিভাগে গণসমাবেশ করছে বিএনপি। এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশাল, ফরিদপুর, সিলেট, কুমিল্লা গণসমাবেশ করেছে দলটি।

এবার ৩ ডিসেম্বর শনিবার রাজশাহীতে গণসমাবেশ করার প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। এ জন্য রাজশাহীর মাদরাসা মাঠে সমাবেশের আয়োজন চলছে। এটি বিএনপির নবম বিভাগীয় গণসমাবেশ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর