শীতে অসহায় ও দরিদ্রদের মাঝে বিতরণের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি কম্বল ফেরত দিয়েছেন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার ১০ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান। বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে বরাদ্দকৃত কম্বলগুলো ভ্যানযোগে উপজেলা পরিষদ চত্বরে নিয়ে এসে ফেরত দেন চেয়ারম্যানরা। পরে ফেরত দেওয়া কম্বলগুলো উপজেলা পরিষদের গোডাউনে রাখা হয়। কম্বল ফেরত দেওয়ার পর থেকেই নানা আলোচনা-সমালোচনার চলছে। 

বৃহস্পতিবার (১ ডিস্বেম্বর) সন্ধ্যায় কম্বল ফেরতের বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেন উপজেলা ইউপি চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি ও গালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেন। বাকি তিনটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা আগামী রোববার কম্বলগুলো ফেরত দেবেন বলে জানান তিনি।
 
ইউপি চেয়ারম্যানরা জানান, শীতে অসহায় ও দরিদ্রদের জন্য শাহজাদপুরের ১৩টি ইউনিয়নে ৩৫০ পিস করে কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ দেওয়ার পরে স্ব-স্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা কম্বল বিতরণের তালিকা করেন। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন চেয়ারম্যানদের জানান যে, বরাদ্দকৃত কম্বলগুলো থেকে এমপি প্রতিটি ইউনিয়নের বরাদ্দ থেকে ২০০ পিস করে কম্বল নিজে বিতরণের জন্য চেয়েছেন।

চেয়ারম্যানরা বলেন, একটি ইউনিয়নে বিপুল সংখ্যাক দরিদ্র ও অসহায় মানুষ রয়েছে। সেই মানুষগুলোর মাঝে মাত্র ৩৫০ পিস কম্বল আমরা বরাদ্দ পেয়েছি যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আবার যদি এর মধ্যে থেকে এমপি মহোদয়কে ২০০ পিস দেওয়া হয় তাহলে আমরা কীভাবে মানুষের মাঝে এই অল্প সংখ্যাক কম্বল বিতরণ করব। তাই ফেরত দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা ইউপি চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি ও গালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ২৭ নভেম্বর দরিদ্র ও অসহায় শীতার্ত মানুষদের জন্য উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের মাঝে সরকারের বরাদ্দকৃত ৩৫০ পিস করে মোট ৪ হাজার ৫৫০ পিস কম্বল দেওয়া হয়। পরে ২৮ নভেম্বর ইউএনওর বরাত দিয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ার নাসির জানান- আমাদের বরাদ্দকৃত কম্বলগুলো থেকে এমপি সাহেব ২০০ পিস করে কম্বল চেয়েছেন এবং ইউএনও তাকে সকল চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানিয়ে দিতে বলেছেন। সেই কম্বলগুলো এমপি নিজে হাতে বিতরণ করবেন।

তিনি আরও বলেন, তখন আমি ইউএনওর সঙ্গে কথা বললে ইউএনও এ বিষয়ে কিছু না বলে সামনে আরও অনেক কম্বল আসবে বলে জানান। তখন আমরা সকল চেয়ারম্যান বসে সিদ্ধান্ত নিই যে আমরা সব কম্বল ফেরত দিব।

আব্দুল বাতেন বলেন, আমাদের বরাদ্দ থেকে এমপি মহোদয় বিতরণ করবেন  ২০০ পিস এবং আমরা বিতরণ করবো ১৫০ পিস! আমরা কম্বল বিতরণ করব না। আমাদের ইউনিয়নে কোনো দরিদ্র, অসহায় ও বৃদ্ধ শীতার্ত মানুষ নেই। তাই সরকারি বরাদ্দ পাওয়া কম্বলগুলো আমরা ফেরত দিয়েছি।

 এ বিষয়ে কথা বলার জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী নাসির ইকবাল ও শাহজাদপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া আফরিনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। 
 
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্ব-স্ব উপজেলায় সরকারিভাবে কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দকৃত কম্বলগুলো নিয়মানুযায়ী বিতরণ করা হবে।

সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনের সংসদ সদস্য মেরিনা জাহান কবিতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি নিজের তহবিল থেকেই অসংখ্য গরিব দুঃখীদের মাঝে কম্বলসহ নানান কিছু বিতরণ করি। চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে কম্বল ফেরত নেওয়ার কোনো নির্দেশ আমি দেইনি। আমার তাদের কাছ থেকে কম্বল ফেরত নিয়ে বিতরণ করতে হবে এটা কোনো কথা হতে পারে না। ইউএনও নিজেও একজন ভালো মানুষ, তিনিও এমন নির্দেশ দেওয়ার কথা না। হয়তো তাদেরকে ভুল বোঝানো হয়েছে নয়তো আমার বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। 

শুভ কুমার ঘোষ/আরএআর