আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই আওয়ামী লীগকে হুমকি দিচ্ছে, আওয়ামী লীগের সব নেতা নাকি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবে। কেন পালিয়ে যাবে? কারণ তারা (বিএনপি নেতারা) আমাদেরকে মারধর করবে, হত্যা করবে। আমাদের গলা, হাত-পা কেটে নেবে। আমাদের স্ত্রী ও মেয়েদের ধর্ষণ করবে। এ কারণে বলছে আওয়ামী লীগ পালিয়ে যাবে। বিএনপি নেতাদের এসব কথার মাধ্যমেই প্রমাণ হয় বিএনপি কতটা প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনৈতিক দল।

শনিবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে নোয়াখালীর সেনবাগ সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

হুইপ স্বপন বলেন, আমরা ১৪ বছর ধরে ক্ষমতায় আছি। আমাদের ক্ষমতার আমলে বিএনপির একটি নেতাকেও দেশ থেকে পালাতে হয়নি। একটি মানুষকেও আমরা পালানোর জন্য হুমকি দেয়নি। বরং বিএনপি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করলে আওয়ামী লীগ সহযোগিতা করে। কিন্তু তাদের সমাবেশে তো লোকই হয় না। বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ থেকে আওয়ামী লীগের উপজেলা সম্মেলনে বেশি লোক হয়।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রসঙ্গ টেনে আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, তাদের নেতা তারেক রহমান যখন লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যায় তখন ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তখন মমতাময়ী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না। যদি তখন শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকতেন তাহলে তারেক রহমানকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে লন্ডনে আশ্রয় নিতে হতো না। এটিই বাস্তবতা।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ফখরুল সারাদিন বঙ্গবন্ধুকন্যাকে গালাগাল করে হুমকি দেয় যে আমরা নাকি পালিয়ে যাব। এ মাটির গভীরে আওয়ামী লীগের শিকড় পোতা। এ দেশের জনগণের মধ্য থেকে আওয়ামী লীগের জন্ম, কৃষকের লাঙ্গল ও কাস্তে থেকে আওয়ামী লীগের জন্ম, শ্রমিকের ঘাম ও হাতুড়ি থেকে আওয়ামী লীগের জন্ম। কোনো জেনারেলের পকেট থেকে আওয়ামী লীগ অবৈধভাবে জন্মগ্রহণ করেনি। এই আওয়ামী লীগ দেশ ছেড়ে পালাবে এ কল্পনা কিভাবে করেন? আমরা দেশ ছেড়ে পালাব না। তোমাদেরকেও দেশ ছেড়ে পালাতে বলব না। দরকার হলে তোমাদেরকে পাহারা দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো।

হুইপ স্বপন দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, মাত্র এক বছর সময় আছে নির্বাচনের। আমরা কিছুটা বিপদে পড়েছি। হঠাৎ করোনা এসে গোটা বিশ্বের অর্থনীতিকে তছনছ করে দিয়েছে। এছাড়া এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। নিষেধাজ্ঞা এবং পাল্টা নিষেধাজ্ঞা গোটা বিশ্বের অর্থনীতিকে টালমাটাল করে তুলেছে। আমরা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো অংশ নয়, আমরা বিশ্বের অংশীদার। আজকে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, তাই কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। এ সমস্যা ঢেকে রাখার বিষয় নয়। এ সমস্যা যা হচ্ছে স্বীকার করতে হবে।

এর আগে বেলা ১১টার দিকে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ এএইচএম খায়রুল আনম সেলিম। এতে সভাপতিত্ব করেন সেনবাগ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আলহাজ মোরশেদ আলম।

সেনবাগ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক লায়ন জাহাঙ্গীর আলম মানিক ও শওকত হোসেন কাননের সঞ্চালনায় সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, যুগ্ম আহ্বায়ক শিহাব উদ্দিন শাহীন, শহীদুল্লাহ খাঁন সোহেল, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী মো. জাহাঙ্গীর আলম, সেনবাগ উপজেলার চেয়ারম্যান জাফর আহম্মদ চৌধুরী, সেনবাগ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মো.বাহার উল্ল্যা বাহার প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, দীর্ঘ ৯ বছর পর সেনবাগ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সম্মেলনকে ঘিরে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে।

হাসিব আল আমিন/এমজেইউ