পদ্মা বিধৌত জেলা রাজবাড়ী। জেলার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে প্রমত্তা পদ্মা। এ জেলার নদী তীরবর্তী অধিকাংশ মানুষের পেশা মাছ ধরা। কিন্তু বর্তমানে পদ্মায় পানি কমে যাওয়া ও বিভিন্ন জায়গায় চর পড়ায় আশানুরূপ মাছের দেখা পাচ্ছেন না জেলেরা। যে পরিমাণ মাছ জালে উঠছে তা বিক্রি করে হাজিরার টাকাটাও উঠছে না। ফলে হতাশ হয়ে পড়েছেণ জেলেরা।

সরেজমিনে রাজবাড়ী সদর উপজেলার গোদারবাজার, সোনাকান্দর, উড়াকান্দা, অন্তরমোড়, গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ও দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় দেখা যায়, নদীতে পানি শুকিয়ে গেছে। নদীর মাঝে বড় বড় চর জেগে উঠেছে।নদীর মাঝখানে কয়েকটি নৌকা নোঙর করে জেলেরা মাছ ধরছে। আবার কয়েকটি নৌকার জেলেরা কাঙ্ক্ষিত মাছ না পেয়ে তীরে ফিরে আসছে। অনেক জেলে নদীর পাড়ে বসে অলস সময় পার করছেন। আবার কেউ জাল, নৌকা মেরামতে ব্যস্ত রয়েছে।

উড়াকান্দা এলাকার জেলে নিশিকান্ত হালদার বলেন, নদীতে পানি শুকিয়ে যাওয়ার কারণে এখন মাছ নেই। জাল ফেললে ছোট ছোট গুড়া মাছ ছাড়া বড় কোনো মাছ জালে আটকা পড়ে না। দিনশেষে গুড়া মাছ বিক্রি করে হাজিরাটাও উঠতে চায় না। এভাবে সংসার চালানো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

উড়াকান্দা এলাকার আরেক জেলে নিমাই হালদার বলেন, ধার-দেনা করে, সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে জাল আর নৌকা বানিয়েছিলাম। ইলিশ ধরার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে ভালো মাছ পেয়েছিলাম। কিন্তু কয়েক দিন ধরে পদ্মায় কাঙ্ক্ষিত মাছের দেখা পাচ্ছি না। এখন যে পরিমাণ মাছ পাচ্ছি তা বিক্রি করে সংসার চালাবো কি করে, আর কিস্তি পরিশোধ করব কি করে?

অন্তরমোড়ের জেলে শ্যামল হালদার বলেন, এবার পদ্মায় ইলিশ নেই বললেই চলে। সারা রাত নদীতে জাল ফেলে মাছের অপেক্ষায় থাকতে হয়। যা মাছ জালে আসছে তা দিয়ে নৌকার খরচই উঠছে না। তাই জেলেদের মধ্যে অনেকেই মনের দুঃখে নদীতে মাছ ধরতে যাচ্ছেন না। বেকার ও অলস সময় কাটাচ্ছেন।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান বলেন, বর্তমানে পদ্মা নদীতে পানি শুকিয়ে গেছে। নদীর মাঝে বড় বড় চর জেগে উঠেছে। নাব্যতা না থাকায় মাছ কমে যাচ্ছে। তাছাড়া জেলেরা চায়না দুয়ারী ও কারেন্ট জাল দিয়ে ফাঁদ পেতে মাছ ধরছেন। এতে মাছের বংশ বিস্তার ও বৃদ্ধি হচ্ছে না। জেলেদের এ বিষয়ে সচেতন করা হলেও অনেকেই তা মানছেন না। তবে পানি বাড়লে পদ্মায় আবার আগের মতো মাছ ধরা পড়বে।

মীর সামসুজ্জামান/এসপি