মেহেরপুরে উঠতে শুরু করেছে শীতকালীন বাঁধাকপি, ফুলকপি, লাউ, বেগুন, শিমসহ আগাম জাতের বিভিন্ন সবজি। অনুকূল আবহাওয়া ও রোগবালাই না থাকায় কৃষকরা ফলনও পেয়েছেন ভালো। কিন্তু হঠাৎ সবজির দাম কমে যাওয়ায় চিন্তিত জেলার কৃষকরা। ভালো দাম না পেলে মোটা অংকের টাকা লোকসান হবে বলে জানিয়েছেন জেলার সবজি চাষিরা। তবে কৃষক পর্যায়ে উৎপাদিত সবজির দাম না পেলেও পাইকারি ক্রেতারা লাভবান হচ্ছেন বলে অভিযোগ কৃষকদের।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, মেহেরপুর জেলায় এ বছর ৩ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি আবাদ হয়েছে। যার মধ্যে ১ হাজার ৫৭ হেক্টর জমিতে বাঁধাকপি, ৬ হাজার ৬৯ হেক্টর জমিতে ফুলকপি, ১১৮ হেক্টর জমিতে লাউ, ৫৯২ হেক্টর জমিতে শিম, ১৪০ হেক্টর জমিতে মুলা চাষ করা হয়েছে। উৎপাদিত সবজির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। চলতি বছর এবং গত বছর জেলায় সবজি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার তেমন কোনো পার্থক্য নেই।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম জানান, মেহেরপুরে শীতকালীন বাঁধাকপি কীটনাশকমুক্ত ও সুস্বাদু হওয়ায় গত কয়েক বছর যাবৎ সৌদি আরব, কাতার, মিশর, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বেশ কয়েকটি দেশ বাঁধাকপি ক্রয় করেছিল। গত বছর মেহেরপুরের বাঁধাকপি দেশের চাহিদা মিটিয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয় ৩ হাজার ৩৩০ মেট্রিক টন। এবছরও প্রায় সাড়ে ৪ হাজার মেট্রিক টন বাঁধাকপি বিদেশে রপ্তানি করা হবে।

মেহেরপুরের সবজি চাষি মইনুল ইসলাম পচা বলেন, ৫ বিঘা জমিতে বাঁধাকপির আবাদ করেছি। এক বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। প্রতিদিন প্রায় ১৫ থেকে ২০টি ট্রাক সিলেট, চট্টগ্রাম যাচ্ছে। ট্রাক ভাড়া বাদ দিলে চালান ঘুরছে না। অনেকেই বাড়ি এসে ট্রাক ভাড়া দিতে হচ্ছে। ফুলকপির ক্রেতা নেই বাজারে। দামও কম। বাঁধাকপির কিছুটা চাহিদা রয়েছে। প্রতি বিঘা বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকায়। কিন্তু যারা ফুলকপির আবাদ করেছেন তাদের লোকসান হচ্ছে।

সাহারবাটির কৃষক ছপেত আলী বলেন, নিমজা জাতের ফুলকপির আবাদ করেছি। প্রতিটি কপির ওজন হয়েছে দেড় কেজি। দেখতেও সুন্দর অথচ বিক্রি করতে গিয়ে দাম পাচ্ছি না। জেলার বাজারে প্রতি কেজি ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ১৫ টাকা। বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ১৫ টাকা। এমন দাম পেলে আমাদের লাভ হওয়া দূরের কথা উৎপাদন খরচই উঠবে না।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শংকর কুমার মজুমদার বলেন, মেহেরপুর একটি কৃষিপ্রধান জেলা। কৃষির ওপরই জেলার মানুষ নির্ভরশীল। এখানকার জমি সবজি আবাদের উপযোগী। অনেক যত্ন করে সবজি ফলান কৃষকরা। কিন্তু দাম না পেয়ে হতাশ হচ্ছেন অনেক কৃষক। আমরা চেষ্টা করছি গত বছরের তুলনায় এ বছরেও এখানকার উৎপাদিত সবজি বিদেশে রপ্তানি বৃদ্ধি করতে। তা হলে কৃষকরা লাভবান হবে।

এমজেইউ