পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার আলোচিত সেই ৩৭ ঋণখেলাপি কৃষকের বিষয়ে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। রোববার (৪ ডিসেম্বর) কমিটির সদস্যরা পাবনার জেলা প্রশাসক ও ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকের সঙ্গে কথা বলেন।

সমবায় ব্যাংক লিমিটেডের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ঝর্ণা প্রভা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, গত ২৮ নভেম্বর এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

রোববার দুপুর সাড়ে ১২টায় বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লিমিটেডের ডিজিএম (পরিদর্শন) আহসানুল গণির নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি পাবনা শহরের এলএমবি মার্কেটে অবস্থিত পাবনা সমবায় ভূমি উন্নয়ন ব্যাংক লিমিটেড কার্যালয়ে যান। তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন উপব্যবস্থাপক (পরিদর্শন ও আইন) আব্দুর রাজ্জাক ও সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রকল্প ঋণ) আমিনুল ইসলাম রাজী।

পরে তারা পাবনা সমবায় ভূমি উন্নয়ন ব্যাংক লিমিটেডের পাবনা শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লিমিটেডের প্রিন্সিপাল অফিসার কাজী জসিম উদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে পাবনা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এসময় পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনসী উপস্থিত ছিলেন।

পাবনা জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নজরে রয়েছে। সুদ মওকুফ করার বিষয়টি তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে বলেন। যাতে কোনো কৃষক হয়রানির শিকার না হন। এ সময় মো. আহসানুল গণি জেলা প্রশাসককে জানান, বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লিমিটেড কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।

আহসানুল গণি জানান, তারা সোমবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় ঈশ্বরদী উপজেলার ভাড়ইমারী উত্তরপাড়া সবজি চাষি সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও ঋণখেলাপি সদস্যদের সঙ্গে সরেজমিনে সাক্ষাৎ করবেন। এসময় তারা পল্লী প্রকল্প ঋণগ্রহীতা সদস্যদের সঙ্গে ঋণ প্রদান, আদায় ও পরিশোধ সংক্রান্ত প্রমাণপত্র সম্পর্কিত সকল তথ্য পর্যলোচনাপূর্বক তদন্ত করবেন। পরে ঢাকায় গিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন পাবনা জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেবেন।

উল্লেখ্য,  ২০১৬ সালে ঈশ্বরদী উপজেলার ভাড়ইমারী গ্রামের ৪০ জন কৃষক দলগত ঋণ হিসেবে ১৬ লাখ টাকা গ্রহণ করেন। এর মধ্যে কেউ ২৫ হাজার, কেউ ৪০ হাজার টাকা করে ঋণ পান। দীর্ঘদিনেও সেই ঋণ ও সুদের টাকা পরিশোধ না করায় ২০২১ সালে ৩৭ জন কৃষকের নামে মামলা করে ব্যাংকটি। সম্প্রতি আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে গত ২৫ নভেম্বর ১২ জন কৃষককে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ।

বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। পরে গত ২৭ নভেম্বর পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক শামসুজ্জামান গ্রেপ্তার ১২ কৃষকসহ ৩৭ জন কৃষকের জামিন মঞ্জুর করেন। পরে ২৯ নভেম্বর ৩৭ কৃষক তাদের সুদসহ ঋণের বাকি টাকা ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। ঈশ্বরদী উপজেলার ভাড়ইমারী উত্তরপাড়া সবজি চাষি সমবায় সমিতি লিমিটেডের সদস্য বিলকিস নাহার কৃষকদের পক্ষে এ সংক্রান্ত আবেদন করেন।

রাকিব হাসনাত/এমজেইউ