রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার কুমেদপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলামের ২৯টি অনিয়ম ও দুর্নীতি তুলে ধরে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন ওই ইউনিয়নের আট ইউপি সদস্য। এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকতার কাছে লিখিত অভিযোগ করে কোনো প্রতিকার না পেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ক্ষুব্ধ ইউপি সদস্যরা।  

রোববার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাব হল রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে  অনীত অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনের প্রতি দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ইউপি সদস্য দেবব্রত অধিকারী দেবু বলেন, কুমেদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জাতীয় সংসদের স্পিকারের আস্থাভাজন পরিচয় দেওয়া চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম জনপ্রতিধি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে পরিষদের সদস্যদের কাউকে তোয়াক্কা করছেন না। চেয়ারম্যান বিধি বহির্ভূতভাবে একক ক্ষমতাবলে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করার পাশাপাশি বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। তিনি একই ব্যক্তির কাছ থেকে ৩/৪ বার বসতবাড়ির কর উত্তোলন, ভিজিএফ কর্মসূচির তালিকায় একই পরিবারের ২-৩ জন ব্যক্তির নাম দিয়ে চাল উত্তোলন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ইউপি সদস্যদের সিদ্ধান্ত ছাড়া পূর্বের তালিকা থেকে নাম কর্তন করে সচ্ছল ব্যক্তির নাম লিপিবদ্ধ করে বিভিন্ন কৌশলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেন।

সরকারিভাবে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য বরাদ্দ সার ও  বীজ চেয়ারম্যান ঠিক মতো বিতরণ করেননি। ইউপি সদস্য গোলসেনেরা বেগমকে ভয়ভীতি দেখিয়ে চেকে স্বাক্ষর গ্রহণ, ৯নং সদস্যকে নোটিশ এবং রেজুলেশন খাতা থেকে নাম বাদ দেওয়ার ঘটনায় পীরগঞ্জ সহকারী জজ আদালতে মিস ভাইলেশন মামলা রয়েছে।
 
দেবব্রত অধিকারী দেবু বলেন, বিনামূল্যের সার বিক্রি, রাস্তার গাছ কেটে বিক্রি, ইউপি সদস্যদের কাছ থেকে ফাঁকা রেজুলেশনে স্বাক্ষর গ্রহণ, বসতবাড়ি, টিসিবি, রেশন কার্ডসহ ভোটার হালনাগাদ করা সংক্রান্ত কাজের জন্য বরাদ্দ হওয়া ৬ লাখেরও বেশি টাকা ইউনিয়ন পরিষদের ফান্ডে জমা না করে চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম তা আত্মসাৎ করেছেন। শুধু তাই নয়, কর্মসৃজনের সরকারি অর্থও হাতিয়ে নেন চেয়ারম্যান আমিনুল। তিনি তার স্ত্রী শরিফা খাতুনকে ভিডব্লিউবি কর্মসূচি প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করে একক আধিপত্য বিস্তার করে আসছেন। অথচ ভিডব্লিউবি ৩.১ এর নীতিমালা অনুযায়ী এটি বিধিসম্মত হয়নি। এতগুলো অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ থাকার পরও অজ্ঞাত কারণে পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেন।

এদিকে ইউপি সদস্যদের এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, তারা আমাকে বিভিন্নভাবে হেয় করতে একাধিকবার মামলা করেছে। কিন্তু সবগুলো মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এখন তারা আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ইন্ধনে আমাকে বেকায়দায় ফেলতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আমি যদি দুর্নীতি ও অনিয়ম করে থাকি তার প্রমাণ তাদের দিতে হবে। কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে আমি অন্যায় করছি, আমার অনিয়ন-দুর্নীতি যদি প্রমাণিত হয়, আমি স্বেচ্ছায় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ছেড়ে দেবো।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিরোধা রানী রায় বলেন, অভিযোগকারী ইউপি সদস্যরা আদালতে মামলা করেছেন। তারা যে অভিযোগ তুলেছেন বা যা দাবি করছেন, এটা নিয়ে আমার বলার কিছু নেই। আমি সরকারি নির্দেশনা মেনে যা করণীয় তাই করছি। ইউপি সদস্যরা চেয়ারম্যানের কাছ থেকে কাজের ভাগ চান, এটা তারা কীভাবে নেবে, সেটা তাদের মাসিক সভায় তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। এখানে হস্তক্ষেপ করা আমার কাজ নয়।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর