শরিফুল ইসলাম। বয়স ৬০ বছর। জন্ম থেকেই শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী। ১০ বছর বয়সে বাবা-মাকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন। জীবন-জীবিকার তাগিদে বেছে নেন ভিক্ষাবৃত্তি। কিন্তু শেষ বয়সে এসে আর ভিক্ষার ঝুলি টানতে পারছেন না। করতে চান কোনো ব্যবসা। এজন্য দরকার বিত্তবানদের সহায়তা। 

শরিফুল ইসলাম মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কুঠি ভাটপাড়া গ্রামের মৃত ছাকেম আলীর ছেলে। জন্ম থেকেই তার দুই পা অকেজো। ৩৫ বছর ধরে হুইল চেয়ার নিয়ে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ভিক্ষা করে সংসার চালাচ্ছেন। কিন্তু এখন আর দুই হাতে হুইল চেয়ার ঠেলতে পারছেন না। আর্থিক সহায়তা পেলে ৩৫ বছরের ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে ব্যবসা করে বাকি জীবন কাটাতে চান।

মেহেরপুর শহরে কথা হয় শারীরিক প্রতিবন্ধী শরিফুল ইসলামের সঙ্গে। এ সময় তিনি তার জীবনে ঘটে যাওয়া নানা দুঃখের কথা বলেন। তিনি বলেন, আমি বিকলাঙ্গ। মায়ের পেট থেকে এভাবেই জন্ম নিয়েছি। বাবা-মায়ের কোলে চড়েই চলাফেরা করতাম। ১০ বছর বয়সে বাবা-মা মারা যান। আমি তখন একা হয়ে পড়ি। আমার সেবা-যত্ম করার জন্য প্রতিবেশীরা বিয়ে দেন। তারা একটি হুইল চেয়ারও কিনে দেন। সেই থেকেই হুইল চেয়ার আমার সঙ্গী। হুইল চেয়ারে ভর দিয়ে নিকটবর্তী বাজারে ভিক্ষা করে সংসার চালাই। এভাবে ভিক্ষা করেই চলছে ৩৫টি বছর। 

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমার বয়স ষাটের কাছাকছি। হুইল চেয়ার ঠেলতে ঠেলতে আমি এখন ক্লান্ত। আর তেমন কোথাও যেতে পারি না। সারাদিন ঘুরে কয়েকশ টাকা আয় হয়। তা দিয়েই কোনো রকম সংসার চলে। বর্তমানে আমি গাংনী উপজেলার ভাটাপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করি। স্বল্প পুঁজি পেলে চায়ের দোকান দিয়ে জীবন বাঁচাতে পারতাম। 

শরিফুলের স্ত্রী সুফিয়া বেগম বলেন, হুইল চেয়ার ঠেলে সারা দিনে দুই আড়াইশ টাকা আয় হয়। এই টাকা দিয়ে সংসার চলে না। আমার স্বামীর বয়সও হয়েছে অনেক। তাকে প্রতিদিন ওষুধ খেতে হয়। তার নামে একটি প্রতিবন্ধী ভাতা আছে। তবে আর্থিকভাবে সহায়তা পেলে ভিক্ষা ছেড়ে ব্যবসা করতে পারতেন।

স্থানীয় যুবক বারিউল ইসলাম বলেন, শরিফুল আমাদের প্রতিবেশী। ভিক্ষার ঝুলি তার কাছে এখন অনেক ভারী হয়ে উঠেছে। সমাজে অনেক বিত্তবান আছেন, তাদের সহযোগিতা পেলে শরিফুল ভিক্ষা ছেড়ে ব্যবসা করতে পারবেন। এছাড়া জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইচ্ছে করলে শরিফুলের জীবন সহজেই বদলে দিতে পারেন। 

সাহারবাটি ইউনিয়নের সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, শরিফুল দীর্ঘদিন ধরে ভিক্ষা করে সংসার চালাচ্ছেন। তার নামে একটি প্রতিবন্ধী ভাতা চালু আছে। এছাড়া খাদ্য সহায়তা কার্ডও করে দেওয়া হয়েছে। আর্থিক সহায়তা পেলে তিনি ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়বেন এমন কথা আমাকেও বলেছেন। আমরা চেষ্টা করছি তার ব্যবসার জন্য পুঁজি সংগ্রহ করার।

ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, প্রতিবন্ধী শরিফুলের বিষয়টি আমি শুনেছি। আমার ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে শরিফুলকে সহযোগিতা করার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।

গাংনী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আরশাদ আলী বলেন, আমাদের সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করছেন সরকার। আমরা এবার বরাদ্দ পেলে প্রতিবন্ধী শরিফুলকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করবো। এছাড়া সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে ঋণ কার্যক্রম চালু রয়েছে। সেখান থেকেও ঋণ নিয়ে তিনি ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হতে পারেন।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী খানম জানান, এটি মানবিক বিষয়। এদের মতো অসহায় মানুষকে সহায়তা ও পুনর্বাসন করতে পারলে আমারও ভালো লাগবে। আমার বরাবর একটি আবেদন করলে প্রতিবন্ধী শরিফুল ইসলামকে আর্থিকভাবে সহায়তা করা যাবে।

এসপি