ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ১০ ডিসেম্বর। সেই সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জের বিএনপির নেতাকর্মীরা জেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রস্তুতি সভা সম্পন্ন করেছেন। তবে সরকারের ইন্ধনে পুলিশ বিএনপির স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত করতে মামলা ও গ্রেপ্তার অভিযান চালিয়ে গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করছে বলে দাবি করছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তবে পুলিশের দাবি, কাউকে অযথা হয়রানি করা হচ্ছে না। এদিকে শক্ত অবস্থানের কথা জানান দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, অরাজকতা সৃষ্টি করা হলে দেওয়া হবে দাঁতভাঙা জবাব।

নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির ঢাকা মহাসমাবেশকে ঘিরে ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া হাজারের অধিক নেতাকর্মীকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গ্রেপ্তার এড়াতে ঘরছাড়া হাজারো নেতাকর্মী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হামলা-ভাঙচুর ও জ্বালাও পোড়াওয়ের অভিযোগে পুলিশের করা আটটি, ছাত্রলীগের করা দুটি ও শ্রমিক লীগের করা একটিসহ মোট ১১টি মামলায় বিএনপির ২৩৮ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতসহ এক হাজারেরও বেশি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। প্রতিটি মামলা ধারাবাহিকভাবে করা হয়েছে এবং অভিযোগ ও ঘটনাপ্রবাহ প্রায় একই।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ১৭ সেপ্টেম্বর সোনারগাঁও উপজেলার পিরোজপুরের একটি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুরের অভিযোগে বিএনপির ২৫ নেতাকর্মীদের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ২৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন মেঘনা শিল্পাঞ্চল শাখা শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল হালিম। এরপর ১৮ নভেম্বর রাতে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায় একই রকম অভিযোগ এনে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন সোহেল নামে এক ছাত্রলীগ কর্মী। বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা ওই মামলায় ২৪ জনের নাম উল্লেখ ও আরও ২৫-৩০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।

গত ২১ নভেম্বর রাতে নাশকতার অভিযোগে বিএনপির ৩৪ জনের নাম উল্লেখ এবং ২০০-২৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি মামলা করে পুলিশ। বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাহাদাৎ হোসেন বাদী হয়ে ওই মামলাটি দায়ের করেন। এদিকে গত ২৭ নভেম্বর সকালে নাশকতার অভিযোগে আড়াইহাজার থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মামুন মিয়া বাদী হয়ে বিএনপির ৪৩ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ৫০-১০০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। একই দিনে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় আরেকটি মামলা করেন উপপরিদর্শক (এসআই) সানোয়ার হোসেন। ওই মামলায় নাশকতার অভিযোগ এনে বিএনপির ২১ জনের নাম উল্লেখ এবং ১৫-২০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।

এদিকে গত ২৮ নভেম্বর রাতে রূপগঞ্জে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ৩৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন আশাদুল প্রধান নামে ছাত্রলীগের এক কর্মী। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপির মিছিলের সময় তাকে রাস্তায় দেখে তার ওপর অতর্কিতভাবে বিএনপির নেতাকর্মীরা হামলা করে এবং তাকে মারধর করে তার মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন। এসময় তার চিৎকারে লোকজন জড়ো হলে ককটেল বিস্ফোরণ করে বিএনপির নেতাকর্মীরা পালিয়ে যায়। মামলায় ৩৮ জনের নাম উল্লেখ ও আরও ৭০-৮০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করেন তিনি। গত ২৯ নভেম্বর বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে আরেকটি মামলা দায়ের করেন নারায়ণগঞ্জ সদর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক কাজী ফেরদৌস। ওই মামলায় ১৪ জনের নাম উল্লেখ ও ৭০-৮০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।

সর্বশেষ মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) নরায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় বিএনপির ৩৯ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ৮০ জনকে আসামি করে নাশকতার অভিযোগে বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের করেছেন সোনারগাঁ থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল কাদের ভুঁইয়া।

এদিকে মামলায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে পলাতক বেশ কয়েকজন যুবদল নেতা বলেন, বিএনপি সহিংসতা কিংবা সংঘাতে বিশ্বাস করে না। সভা-সমাবেশ প্রতিটি দলের রাজনৈতিক অধিকার। বিএনপি গণমানুষের অধিকার নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে। এতে একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ের সাধারণ মানুষ সম্পৃক্ত হচ্ছে। এগুলো আমাদের কথা নয়, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদগুলো এর প্রমাণ।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু আল ইউসুফ খাঁন টিপু ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকার দিশেহারা হয়ে পড়েছে। কেননা সরকার জানে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপি যদি আন্দোলন চলমান রাখে তাহলে দেশের সাধারণ জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে। ইতোমধ্যে দেশের সাধারণ জনগণ বিএনপির আন্দোলনে সহমত প্রকাশ করেছে যা এর আগের বিভাগীয় সমাবেশগুলো প্রমাণ। তাই সরকার পুরাতন কৌশলে হামলা-মামলা দিয়ে অপরাজনীতি করছে। তবে এই নগ্ন খেলার মাধ্যমে সমাবেশ আটকানো যাবে না। ১০ ডিসেম্বরের ঢাকা মহাসমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হবে।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দন শীল ঢাকা পোস্টকে বলেন, তারা (বিএনপির নেতাকর্মীরা) বলছেন ১০ তারিখের পর খালেদা জিয়ার কথায় দেশ চলবে। কিন্তু তাদের দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ক্ষমতায় আসতে পারবেন না। কারণ তারা দুজনই সাজাপ্রাপ্ত আসামি। আমি মনে করি তারা জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্যই এ ধরনের হাস্যকর কথাবার্তা বলছেন। আমি তাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনে আসার জন্য আহ্বান জানাই। এখানে জনগণ যে রায় দিবেন, তা আমরা মেনে নেব।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি জনগণকে প্রকৃত তথ্য আড়াল করে ভুল বুঝিয়ে আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টির নীল নকশা করেছে। বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যে আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগার এই নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমানের নেতৃত্বে আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। যদি অরাজকতা সৃষ্টি করা হয় তবে তার দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে।

এদিকে বিএনপির নেতাদের সকল অভিযোগ অস্বীকার করে নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা করা হয়েছে। পুলিশ নাশকতার প্রমাণ পেয়েছে এবং প্রত্যেকটি ঘটনায় মামলার সাক্ষীদের সামনে রেখেই আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ অযথা কাউকে হয়রানি করছে না।

এমজেইউ