রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ৭ নং ফেরিঘাট সংলগ্ন ছাত্তার মেম্বার পাড়া ও চর কার্নেশনা এলাকায় পদ্মার চর থেকে ভেকু দিয়ে মাটি ও বালু কেটে বিক্রি করছে প্রভাবশালী একটি মহল। অবৈধভাবে মাটি-বালু উত্তোলনের ফলে ঝুঁকিতে রয়েছে ঘাটসহ আশপাশের কয়েকশ বিঘা ফসলি জমি। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হলেও কোনো কিছু তোয়াক্কা না করেই অবাধে চলছে মাটি ও বালু উত্তোলন।

জানা গেছে, পদ্মার চর থেকে মাটি ও বালু কাটায় প্রশাসনের কোনো অনুমতি না থাকায় একটি চক্র প্রভাবশালী মহলকে ম্যানেজ করে মাটি ও বালু উত্তোলন করছে। মাঝে-মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা করা হলেও কয়েক দিন বাদ রেখে তারা আবার মাটি ও বালু কাটা শুরু করে। এই মাটি ও বালু যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, সাত্তার মেম্বার পাড়া ও চর কার্নেশনা এলাকার পদ্মার চরে ভেকু দিয়ে মাটি ও বালু কেটে ড্রামট্রাকে লোড করা হচ্ছে। একের পর এক ড্রাম ট্রাক সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। ট্রাকে লোড হওয়ার পর মাটি বিভিন্ন ইটভাটায় ও বালি স্থানীয়ভাবে বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া মাটি ও বালুবাহী ট্রাক চলাচলের কারণে দৌলতদিয়ার আক্কাস আলী হাই স্কুলের পেছনের রাস্তাটি ইতোমধ্যে ধসে গিয়ে খানা-খন্দে পরিণত হয়েছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কৃষক বলেন, দিনের বেলায় সতর্কতার সঙ্গে মাটি কাটলেও রাতে মাটি ও বালি কাটার হিড়িক পড়ে। শত শত ড্রাম ট্রাক সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থাকে। রাস্তায় চলাচল করা যায় না। এছাড়া যেখান থেকে মাটি ও বালি কাটছে তার পাশেই আমাদের ফসলি জমি। কিন্তু আমরা ভয়ে কোনো প্রতিবাদ করতে পারি না। প্রতিবাদ করলেই ভয়ভীতি দেখায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, অবৈধভাবে চর থেকে মাটি ও বালু কাটায় ৭ নং ফেরিঘাটসহ কয়েকশ বিঘা ফসলি জমি ঝুঁকিতে রয়েছে। এমনিতেই প্রতি বছর বর্ষায় এই এলাকায় ভাঙন দেখা যায়। তারপর যদি আবার এভাবে চর কাটে, তাহলে আগামীতে এই এলাকা আরও বেশি ভাঙন ঝুঁকিতে থাকবে।

কারা মাটি ও বালু উত্তোলন করছে এ বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থানীয় জিলাল, রিপনদের নিয়ন্ত্রণে ও নির্দেশনায় মাটি কাটা হচ্ছে। তাদের সঙ্গে আরও অনেকেই জড়িত আছে। আমাদের দাবি শিগগিরই ভেকু দিয়ে মাটি কাটা বন্ধ হোক।

মাটি কেটে ট্রাকে লোড-আনলোডের হিসাবে ব্যস্ত মুসা জানান, তিনি মাটি কেটে কোন ইটভাটায় যাবে তার হিসাব করেন। মাটি কে কাটছে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, রিপন ভাইয়ের নির্দেশে মাটি কাটা হচ্ছে।

অবৈধভাবে পদ্মার পাড় ও চর থেকে মাটি-বালু কেটে বিক্রির অভিযোগের বিষয়ে রিপন, জিলালের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলে তারা ফোন রিসিভ করেননি। তাই তাদের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

পদ্মার চর থেকে ভেকু দিয়ে মাটি ও বালু উত্তোলন প্রসঙ্গে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন মুঠোফোনে বলেন, জেলা রাজস্ব সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, পদ্মার চর থেকে ভেকু দিয়ে মাটি ও বালু কাটার কোনো সুযোগ নেই। যারা রাতে মাটি কাটে, তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে নিয়মিত মামলা করা হবে। এ ব্যাপারে গোয়ালন্দ থানাকে বলা হয়েছে। শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে।

মীর সামসুজ্জামান/এসপি