রাজশাহীতে এ বছর ১১ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে ১ দশমিক ৩ হেক্টর বেশি। তবে ফুল ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজশাহীতে যে পরিমাণ ফুলের চাষ হয় তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। এমন অবস্থায় আমদানি করা ফুলে চাহিদা মেটাতে হয়। তবে আমদানিকৃত ফুলে দাম বেশি পড়ে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এ বছর রাজশাহীতে ১১ দশমিক ৭১ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়েছে। আর গত বছর চাষ হয়েছিল ১০ দশমিক ৪১ হেক্টর জমিতে। এ বছর সবচেয়ে বেশি গোদাগাড়ীতে ফুলের চাষ হয়েছে। এরপর পবা উপজেলায়। এসব এলাকায় গাঁদা, গোলাপ, রজনীগন্ধা, জারবেরা বেশি চাষ হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে গাঁদা ফুল।

জানা গেছে- নগরীর সাহেব বাজারে কমপক্ষে ১৫টি দোকানে ফুল বিক্রি হয়। দোকানগুলোতে স্থানীয় অল্প কিছু গাঁদা, গোলাপ, রজনীগন্ধা বিক্রি হয়। এছাড়া দোকানগুলোর বড় অংশ সরবরাহ আসে যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা থেকে। এই ফুলগুলো রাজশাহীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সরবরাহ হয়ে থাকে। এসব দোকানে মালিক-শ্রমিক মিলে কাজ করেন অন্তত ৫০ জন।

নগরের সাহেব বাজারের ফুল বিক্রেতা সন্তোষ কুমার বলেন, রাজশাহীতে ফুল কোথায়? সব ফুল আমদানি করতে হয়। আমদানির ওপর নির্ভর করে চলে রাজশাহীর ফুলের ব্যবসা। এই ফুলের সিংহভাগ সরবরাহ আসে যশোর থেকে। যদিও রাজশাহীর পবা খড়খড়ি, ভুগরোইল, নওদাপাড়া ও দারুশার কিছু কিছু এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে এই ফুলের চাষ হচ্ছে। তবে এই ফুলে চাহিদা মেটে না। রাজশাহীর উৎপাদিত ফুলে বছরের দুই মাসও চলে না।

শ্যামলী রায় নামে এক ক্রেতা বলেন, পূজার জন্য প্রায় প্রতিদিনই ফুল কিনতে হয়। অধিকাংশ সময় বেশি দাম নেয়। বিক্রেতারা বলেন, মোকামে (আড়তে) দাম বেশি। তাই বেশি দাম নেওয়া হচ্ছে। উপাই নেয়, বেশি দাম হলেও কিনতে হয়।

নগরীর উপকণ্ঠ ভুগরোইল ১২ রাস্তার মোড় এলাকায় ৬ বিঘা জমিতে গাঁদা, গোলাপ ও রজনীগন্ধার চাষ করেছেন মো. রঙ্গিন। তিনি বলেন, বেশ কয়েক বছর থেকে ফুলের চাষ করছি। প্রথমে গাঁদা ফুলের চাষ করলেও পরে গোলাপ ও রজনীগন্ধার চাষ শুরু করি। বাজারে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় প্রতি হাজার গাঁদা ফুল বিক্রি হয়। এছাড়া ১০০টি গোলাপ ৫০০ টাকা ও ১০০টি রজনীগন্ধা ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা মেহদী হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিবছর অল্প পরিসরে হলেও বাড়ছে ফুলের চাষ। এ বছর বেশি রজনীগন্ধা, গাঁদা, জারবেরা ফুলের চাষ হয়েছে। এর সঙ্গে নতুন যুক্ত হয়েছে টিউলিপ ফুল। এই ফুলটি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় চাষ শুরু হয়েছে।

এই উৎপাদনে রাজশাহীর চাহিদা মেটানো সম্ভব কি, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, রাজশাহীতে চাহিদার অল্পই মেটানো সম্ভব হয়। রাজশাহীতে চাহিদার বড় যোগান আসে যশোর থেকে। সারাবছর রাজশাহীতে যশোরের ফুল বিক্রি হয়।

যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলার চুয়াডাঙ্গা, কালীগঞ্জ ও গদখালী থেকে রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা, জারবেরা, গ্লাডিওলাস ফুল কেনেন। এই কয়েক ধরনের ফুলের ব্যবসা চলে সারা বছর।

যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মঞ্জুরুল হক বলেন, এ বছর নতুন দুটি ফুলের উৎপাদন শুরু হয়েছে যশোরে। একটি টিউলিপ অপরটি মিলিয়াম ফুল। গত বছরের চেয়ে এ বছর বেড়েছে ফুলের চাষ। এ বছর পুরো যশোর অঞ্চলজুড়ে এক হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ফুলের চাষ হয়েছে।

এমজেইউ