মানিক রহমান

জন্ম থেকেই দু-হাত নেই কুড়িগ্রামের মানিক রহমানের। পা দিয়ে লিখেই এবার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫সহ জেলার মধ্যে সবোর্চ্চ নম্বর পেয়েছে সে। ঢাকার নটরডেম কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন তার। জেলার মধ্যে সবোর্চ্চ নম্বরধারী হলেও স্বপ্ন হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছে মানিক ও তার পরিবার। 

অদম্য মেধাবী মানিক রহমান পা দিয়ে লিখে এ বছর কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ফুলবাড়ী জছিমিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে। শুধু তাই নয় জেলায় সর্বোচ্চ নম্বরধারী সে। এখন তার স্বপ্নপূরণে মা-বাবাসহ স্বজনরা সরকারের পাশাপাশি সমাজের দানশীল ও বৃত্তবান মানুষের কাছে দুটি কৃত্রিম হাতের আকুতি জানিয়েছেন। 

শারীরিক প্রতিবন্ধী মানিক রহমানের বাড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামে। ওষুধ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ও মা প্রভাষক মরিয়ম বেগমের ছেলে সে। মানিক রহমানের দুটো হাত নেই, একটি পা অন্যটির চেয়ে অনেকাংশে খাটো। তারপরেও পড়াশোনা থেকে পিছিয়ে পড়েনি সে। বাবা-মা ও শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় নিজের আত্মবিশ্বাস ও মনোবলে সে পিইসি পরীক্ষাও জিপিএ-৫ সহ ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি ও জেএসসিতেও গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে।

মানিক বলেন, আমি এ বছর আল্লাহর রহমতে পা দিয়ে লিখে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছি। নম্বরের দিক থেকে জেলায় প্রথম হয়েছি। আমার গল্পটা এতোটাও সহজ ছিল না। এর পিছনে অনেক গল্প আছে। আমি যখন প্রথম স্কুলে যাই কেউ আমাকে পাত্তা দিত না এমনকি স্যাররাও। পরে যখন প্রতি ক্লাসে ভালো রেজাল্ট করতাম, তখন আমার সঙ্গে সবাই মিশতে শুরু করে।  

মানিক আরও বলেন, আমি এখন প্রস্তুতি নিচ্ছি নটরডেম কলেজে পরীক্ষা দেবার জন্য। যেহেতু বাইরে যেয়ে পড়তে চাচ্ছি তাই ব্যাপারটা এতটা সহজ হবে না। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় অনেক কাজ একা করতে পারি না। এই অবস্থায় যদি সরকার আমার পাশে দাঁড়াত তাহলে স্বপ্নটা পূরণ হত। আমার স্বপ্ন আমি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হব। আমার এখন দুটো কৃত্রিম হাত প্রয়োজন।

মানিকের বাবা মিজানুর রহমান কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আপনারা তো দেখতে পারছেন মানিক শারীরিক প্রতিবন্ধী। দুই হাত না থাকায়, পা দিয়ে লিখে সে এতো ভালো রেজাল্ট করছে। জেলায় ফাস্ট হয়েছে, আমরা আসলেই গর্বিত। সে এখন ঢাকার নটরডেম কলেজে পড়তে চায় কিন্তু কীভাবে তাকে পড়াব। সে তো আমাদের সহায়তা ছাড়া চলতে পারে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি আমার ছেলেকে দুটো কৃত্রিম হাতের ব্যবস্থা করে দিতেন আমরা সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকতাম। 

মা মরিয়ম বেগম বলেন, মানিক অনেক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে পৃথিবীতে এসেছে। তার মনের অদম্য বলে সে সকল প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় জেলায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে। জিপিএ-৫সহ জেলায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে। এখন আমি, তার বাবা ও ভাই সবাই মিলে তাকে সাহায্য করি। তার একা টয়লেট, গোসল ও খেতে সমস্যা হয়। একজনকে সবসময় তার সঙ্গে লেগে থাকতে হয়। সে জন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাই, সরকারের পাশাপাশি সমাজের দানশীল ও বৃত্তবান কেউ কোনোভাবে যদি তার কৃত্রিম দুটি হাতের ব্যবস্থা করতেন তাহলে তার লক্ষ্যে পৌঁছানো অনেকটা সহজ হতো।  

ফুলবাড়ী জছিমিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আইয়ুব আলী বলেন, আমার স্কুল থেকে মানিক রহমান এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। সে প্রতিবন্ধী, তার দু হাত নেই এবং দুই পায়ের মধ্যে একটা ছোট একটা বড়। তারপরেও তার অদম্য চেষ্টায় লেখাপড়ায় এগিয়ে যাচ্ছে। অন্যন্য ছাত্র-ছাত্রীদের যে রকম সহায়তা করছি তাকেও সে রকম করা হয়েছে। এ কারণেই এসএসসি পরীক্ষায় জেলার মধ্যে ফাস্ট হয়েছ। সে ভবিষ্যতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। কেউ যদি সহোযোগিতা করে তার কৃত্রিম দুই হাতের ব্যবস্থা করত তাহলে সে তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারত। 

জুয়েল রানা/আরকে