নোয়াখালীর সদর উপজেলার এওজবালিয়া ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবদুল মালেক সড়কটি স্বাধীনতার ৫০ বছরেও পাকা বা সংস্কারের উদ্যোগ নেইনি কেউ। দীর্ঘ সময়ে রাস্তাটি কাঁচা থাকায় এলাকার বাসিন্দাদের ভোগান্তির শেষ নেই।

জানা যায়, এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষকে যাতায়াত করতে হয়। সড়কটি পাকা না হওয়ায় জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। একটু বৃষ্টিতেই সড়কটি কাদা-পানিতে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ভ্যান, সাইকেল, মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ হয়ে য়ায়। এমনকি পায়ে হেঁটে চলাচল করতেও কষ্ট হয়। বিকল্প কোনো সড়ক না থাকায় গ্রামবাসী বাধ্য হয়ে কাদা-পানি মাড়িয়ে চলাচল করেন।

স্থানীয়রা জানান, স্বাধীনতার আগে থেকে নোয়াখালীর সদর উপজেলার এওজবালিয়া ইউনিয়নের পূর্ব এওজবালিয়া গ্রামের আইয়ুব আলী ভূঁঞা মসজিদ থেকে বেগার বাড়ি পর্যন্ত ৭০০ মিটার সড়কটি কাঁচা। কাঁচা সড়ক পাকা হবে এ আশায় এলাকাবাসী বছরের পর বছর অপেক্ষায় আছেন। কিন্তু সড়ক পাকা হয় না। জনপ্রতিনিধিরা বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও সড়কটি পাকা হয়নি। ৭০০ মিটার দীর্ঘ এই সড়কে প্রতিদিন হাজারো মানুষ যাতায়াত করেন। শিক্ষার্থী, নারী ও বৃদ্ধরা বেশি দুর্ভোগের শিকার হয়। সড়কটি কাঁচা হওয়ায় কেউ অসুস্থ হলে অনেক কষ্ট করে তাকে চিকিৎসাকেন্দ্রে নিতে হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা মনা মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাস্তার এই বেহাল দশার কারণে অন্য এলাকার লোকজন এই এলাকায় সহজে বিয়ে দিতে বা করাতে চান না। সবাই বলে আপনাদের এলাকায় রাস্তা নেই, আপনারা কেমন জায়গায় বাস করেন। এমন কাঁচা রাস্তা আর কোথাও দেখি না। বাগবাগিচাও এখন পাকা হয়।

আলমগীর হোসেন নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, এই রাস্তার বয়স ৫০ বছর। এখনও আমরা কাদার ভেতরে চলি। বর্ষা হলে পানি জমে থাকে। এক বস্তা চাল বাড়িতে নেওয়া যায় না। মাথায় করে নিতে হয়।

ফারুক মিয়া নামে একজন বলেন, ছোটবেলায় এই রাস্তা কাঁচা দেখেছি। এখন আমার বয়স ৬০ বছর। এখনো রাস্তাটি কাঁচা। মারা যাওয়ার আগে পাকা রাস্তা দেখব কি না জানি না। আমাদের কষ্টের শেষ নেই।

লিমা আক্তার নামের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৃষ্টি হলে রাস্তায় কাদা থাকে। তাই মাঝেমধ্যে স্কুলে যেতে পারি না। স্কুলে না গেলে শিক্ষকরা বকা দেয়। কিন্তু আমরা তো ঘরবন্দী হয়ে থাকি।

রাবেয়া খাতুন নামের এক বৃদ্ধা বলেন, গর্ভবতী মহিলার জন্য গাড়ি আসে না। বর্ষার সময় এক হাঁটু পানি হয়। চলাফেরা করতে পারি না। আমরা কীভাবে বাঁচব জানি না।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হারুনুর রশিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি প্রতিবন্ধী মানুষ। আমার চলাফেরায় খুব অসুবিধা হয়। আমরা সবাই চাঁদা তুলে রাস্তা সংস্কার করি। আমি নিজেও টাকা দিই। জনপ্রতিনিধিদের খবরও নেই। ভোট এলে সব করে দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয় কিন্তু ভোট শেষে আর খবর থাকে না।

অবসরপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর সদস্য এমএ জলিল ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই রাস্তার বয়স ৫০ থেকে ৬০ বছর। একজন মুক্তিযোদ্ধার নামে সড়কটির নামকরণ করা হয়েছে। বর্ষার সময় মানুষ চলাচল করতে পারে না। কেউ অসুস্থ হলে একটি অ্যাম্বুলেন্স যে প্রবেশ করবে তার ব্যবস্থা নেই। গ্রামবাসী চাঁদা তুলে রাস্তার সংস্কার করি। বহু জনপ্রতিনিধি আসছে আর গেছে, তারা কেবল আশ্বাস দিয়েছে কিন্তু রাস্তার কাজ হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে রাস্তাটি পাকা করার আবেদন করছি।

এওজবালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বেলাল হোসেন বলেন, রাস্তাটি অনেক পুরাতন। মানুষের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কিন্তু রাস্তাটির নামে কোনো আইডি নেই। আমি দ্রুত আইডি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে রাস্তার কাজের চেষ্টা করবো।

নোয়াখালী সদর উপজেলার এলজিইডি কার্যালয়ের উপজেলা প্রকৌশলী আবুল মনছুর আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সড়কটির নামে কোনো আইডি ছিল না। আমরা দ্রুত আইডি করার প্রক্রিয়া করবো। তারপর প্রকল্পের মাধ্যমে সড়কটি পাকাকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম সামছুদ্দিন জেহান ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সড়কটির কাজ হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গ্রাম হচ্ছে শহর। আর এই উন্নয়ন গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে আছে। রাস্তার আইডি করে দ্রুতই পাকাকরণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এমজেইউ