নেত্রকোণা ট্র্যাজেডি দিবস আজ (৮ ডিসেম্বর)। ২০০৫ সালের এই দিনে নেত্রকোণা জেলা শহরের উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কার্যালয়ের সামনে বোমা হামলা চালায় জেএমবি’র আত্মঘাতী জঙ্গিরা। এতে নেত্রকোণা উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খাজা হায়দার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সুদীপ্তা পাল শেলী, মোটর মেকানিক যাদব দাস, রিকশাচালক আফতাব উদ্দিন, দিনমজুর রইস মিয়া ও হামলাকারী আত্মঘাতী কিশোর কাফিসহ ৮ জন নিহত এবং অর্ধশতাধিক আহত হয়।

এদিকে ঘটনার ১৭ বছর হয়ে গেলেও হামলায় নিহত ও আহতদের পরিবারের খোঁজ নেন না কেউ। ফলে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। এছাড়া আহতদের অনেকেই এখনো শরীরে স্প্লিন্টার নিয়ে অসহায় জীবনযাপন করছেন। অর্থের অভাবে চিকিৎসাও করাতে পারছেন না।

উদীচীর সহ-সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় সরকার বলেন, ওই বোমা হামলায় নিহত উদীচীর সংগঠক খাজা হায়দার হোসেন ও সুদীপ্তা পাল শেলীর পরিবারের সদস্যরা খুবই কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। কারণ এ দুটি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তারাই। ঘটনার পর কেউ কেউ যৎসামান্য সহায়তা প্রদান করলেও সরকারি কোনো সহযোগিতা তারা পাননি।

তাই ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় এসব পরিবারকে সরকারিভাবে পুনর্বাসনের দাবি জানান তিনি।

বোমা হামলায় আহত জেলা শহরের সাতপাই এলাকার বাসিন্দা সুব্রত রায় বলেন, সেদিনের বোমা হামলায় আমি আজ বধির। টাকা অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। আমার মতো আহত অনেকেই চিকিৎসার অভাবে দুর্বিষহ যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন।

এদিকে নেত্রকোণাবাসী প্রতি বছরই এ দিনটিকে নেত্রকোণা ট্র্যাজেডি দিবস হিসাবে পালন করে আসছে।

নেত্রকোণা উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, বোমা হামলায় নিহত ও আহতদের জন্য আমরা তেমন কিছুই করতে পারছি না। তবে তাদের স্মরণে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেছি এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর খোঁজখবর রাখছি। তারা খুব কষ্টে আছে।

তিনি আরও বলেন, এ দিনটিকে আমরা নেত্রকোণা ট্র্যাজেডি দিবস হিসেবে পালন করে আসছি। এ বছরও নেত্রকোণা ট্র্যাজেডি দিবস উদযাপন কমিটি দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণ, স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ‘স্তব্ধ নেত্রকোণা’ কর্মসূচি পালন, প্রতিবাদ মিছিল, শহীদদের কবর জিয়ারত ও শহীদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং সন্ত্রাস, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

উল্লেখ্য, ২০০৫ সালের ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে নেত্রকোণা মডেল থানায় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলা করে। এর মধ্যে বিস্ফোরক আইনে আসামি জেএমবির কমান্ডার সালাউদ্দিন ওরফে সালেহীন ওরফে সোহেল, সদস্য আসাদুজ্জামান চৌধুরী ওরফে পনিরের মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। এ ছাড়া ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি আসামি আসাদুজ্জামান চৌধুরী, সালাউদ্দিন ও ইউনুছ আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২। মামলার অপর আসামি সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ভাই ও আতাউর রহমান সানির অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া বাংলা ভাইয়ের স্ত্রী ফারজানাকে খালাস দেওয়া হয়। নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আসামি আসাদুজ্জামান আপিল করেন। পাশাপাশি আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) শুনানির জন্য হাইকোর্টে আসে। শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখেন। জেএমবির সদস্য আসাদুজ্জামান হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। পরে ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ আপিল বিভাগ খারিজ করে দেয়। ফলে, সর্বোচ্চ সাজার আদেশই বহাল থাকে। পরে এই আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করেন আসাদুজ্জামান। ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বের আপিল বেঞ্চ আবেদনটি খারিজ করে দেন।

মো. জিয়াউর রহমান/এমজেইউ