চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত কয়েকদিন ধরে শিশুদের ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ বেড়েছে। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে বেডের তুলনায় প্রায় ৭ গুণ রোগী হওয়ায় তাদের জায়গা দেওয়া হয়েছে বারান্দায়। হাসপাতালে শীতকালীন রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন অন্তত ৪০ থেকে ৫০টি শিশু ভর্তি হচ্ছে। রোটা ভাইরাসের প্রভাবে শীতের হিমেল হাওয়ার কারণে ডায়রিয়া রোগী বাড়ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। 

বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টা পর্যন্ত হাসপাতালে মোট ৭৩ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি রয়েছে। সকাল থেকে নতুন করে ১৩ জন ভর্তি হয়েছে। গত ১০-১৫ দিন থেকে প্রতিদিন রোগী ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে। 

চিকিৎসা নিতে আসা নিরুপায় রোগীরা শীতের তীব্রতা ও ঠাণ্ডা বাতাস থেকে রক্ষা পেতে বিশেষ ব্যবস্থায় হাসপাতাল বারান্দার চারদিকে কাপড় দিয়ে ঘিরে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এছাড়াও হাসপাতালে ওষুধ না পাওয়ার অভিযোগ জানিয়েছেন অসুস্থ শিশুর স্বজনরা। 

সদর উপজেলার রানিহাটি ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুরহাট গ্রামের আমেনা বেগমের ২ বছরের ছেলের দুইদিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, ওয়ার্ডের ভেতরে তো দূরের কথা বারান্দাতেই জায়গা পাওয়া যায় না। পাটি বিছিয়ে গত দুই দিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছি।

শিবগঞ্জ উপজেলার ছত্রাজিতপুর গ্রামের তরিকুল ইসলাম জানান, ভাতিজা আসাদ আহমেদকে ভর্তির ১৪ ঘণ্টা হয়ে গেলেও একবারই ডাক্তার ওষুধ দিয়েছে। প্রচুর পরিমানে ঠাণ্ডা লাগছে। বাইরে থেকে অনেক ঠাণ্ডা বাতাস আসছে। রাতে মেঝেতে থাকা খুব কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। 

তারেক-আজিজা দম্পতি শিবগঞ্জের শাহবাজপুর ইউনিয়নের সোনামসজিদ এলাকা থেকে জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। তারেক রহমান বলেন, বাচ্চার প্রথমে জ্বর ছিল। পরে ডায়রিয়া শুরু হলে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। সেখানকার চিকিৎসকরা এখানে রেফার্ড করে। ছেলের অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে।

মেয়ের চিকিৎসা নিতে আসা আনোয়ার হোসেন বলেন, এভাবে মেঝেতে গাদাগাদি করে চিকিৎসা নেওয়া খুব কষ্টের। সকাল থেকেই অনেক নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে। অবস্থা এমন যে, এখন কেউ আসলে বারান্দাতেও আর জায়গা নেই। তারপরও গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। কী আর করা। সবাই তো বিপদে পড়েই এখানে এসেছে। 

রেহেনা পারভিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিশুকে ডায়রিয়া রোগের কারণে নিয়ে এসে ঠাণ্ডা লেগে যাচ্ছে। কারণ বারান্দার মেঝের চারদিক খোলা। রাতের বেলা প্রচণ্ড বাতাস প্রবেশ করছে। এসময় অনেক কনকনে শীত লাগছে। কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি, যেন ফাঁকা জায়গায় কাপড় দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়। 

ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ইনচার্জ রেহেনা পারভিন ও সিনিয়র স্টাফ নার্স তাসলিমা খাতুন বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে শিশুদের জন্য বেড নেই। অথচ দু-একটা ছাড়া সব রোগীই শিশু। হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে সোফা ও বেড মিলে ২৪ জনকে দেওয়া সম্ভব। তবে রোগীর সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি। তাই মেঝেতেই সিংহভাগ রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। 

জেলা হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু) ডা. মাহফুজ রায়হান ঢাকা পোস্টকে বলেন, শীতকালীন রোটা ভাইরাসের কারণে শিশুদের ডায়রিয়া হচ্ছে। প্রায় ৮-১০ দিন ধরে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। প্রত্যেক বছর শীতকালে এই ভাইরাসের প্রভাব বাড়ে। ফলে শিশুরা ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়। তবে ঠিকমতো চিকিৎসা নিলে এতে ভয়ের কোনো কারণ নেই। 

তিনি আরও বলেন, এই সময়ে অভিভাবকদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে এবং শিশুদের ঠাণ্ডা বাতাস থেকে দূরে রাখতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখেছি শিশুর অসুস্থ হলেই তাদের অভিভাবকরা ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে এসে খাওয়ান। অবস্থা গুরুতর হলে হাসপাতালে চিকিৎসা করতে নিয়ে আসেন। কোনোমতেই এটি করা যাবে না। শুধুমাত্র রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাওয়াতে হবে শিশুদের। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. এসএম মাহমুদুর রশিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিবছর এই সময়ে শিশুদের ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। গত কয়েকদিন থেকেই ডায়রিয়ার আক্রান্ত শিশু বেশি ভর্তি হচ্ছে। তাদের চিকিৎসায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি। কোনোরকম খাবার স্যালাইন, ওষুধ বা চিকিৎসা ব্যবস্থার ঘাটতি নেই। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে জায়গা না হাওয়ায় বারান্দায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। 

জাহাঙ্গীর আলম/আরকে