বরিশাল হানাদার মুক্ত দিবসে বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহান আরা বেগম পার্কের উদ্বোধন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) বিকেলে মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা, আলোচনা সভা ও মোনাজাতের মধ্য দিয়ে পার্কটি উদ্বোধন করেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক লাগোয়া বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সিঅ্যান্ডবি রোডে এই পার্কটি নির্মাণ করা হয়েছে।

মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ঋণ আমরা কখনোই শোধ করতে পারবো না। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে আপনারা যুদ্ধ করেছিলেন। আপনাদের ত্যাগের বিনিময়েই আমরা ডিসি, মেয়র ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হতে পেরেছি। আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমার মা বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহান আরা বেগম ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী। তার চোখের সামনে ৪ বছরের শিশু আমার বড় ভাই সুকান্ত বাবুকে হত্যা করা হয়েছে। আমি নানা প্রতিকূলতা সামলে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। আমার মা এবং আপনাদের সকলের দোয়ায় এটি সম্ভব হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা আমাদের পরিবেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছি। এই শহরে খেলাধুলার কোনো জায়গা নেই, শিশুদের উপযুক্ত কোনো জায়গা নেই। এজন্য আমি বরিশালের প্রত্যেকটি এলাকায় পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা করছি। শহরের প্রত্যেকটি মাঠ ও পুকুর সংরক্ষণ করার চেষ্টা করছি। 

অনুষ্ঠানের শুরুতে বীর মুত্তিযোদ্ধা সাহান আরা বেগমের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে পার্কের ফলক উন্মোচন করেন অনুষ্ঠানের উদ্বোধক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ও অতিথিবৃন্দ। এ সময় বীর মুক্তিযোদ্বা সাহান আরা বেগমসহ সকল শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস, সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক আহমেদ, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ড. এইচএম সাইফুল ইসলাম, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভুঁইয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বরিশালের শতাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা অংশগ্রহণ করেন।

চলতি বছরের মে মাসে বরিশাল নগরীর সিঅ্যান্ডবি রোড এলাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহান আরা বেগম পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিটি করপোরেশন। ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে পার্কটি নির্মাণ করা হয় বলে জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী মোকসুমুল হাকিম রেজা।

এদিকে পার্কটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের জমিতে স্থাপন করা হয়েছে। নির্মাণকাজ শুরুর সময়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানিয়েছিল তাদের সম্পত্তিতে পার্ক নির্মাণের বিষয় অবহিত করেনি সিটি করপোরেশন। ওদিকে ব্যস্ততম এবং গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের পাশে শিশু পার্কটি কতটা নিরাপদ তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে নগরবাসীর।

প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের আজকের দিনে (৮ ডিসেম্বর) হানাদারমুক্ত হয় বরিশালসহ বিভাগের চারটি জেলা। এদিন সকাল থেকেই স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে বিভিন্ন আয়োজনে দিবসটি পালন করা হচ্ছে। 

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর