গাজীপুরে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অন্য দিনের তুলনায় ঢাকাগামী দূরপাল্লার বাস কম দেখা গেছে। যেগুলো চলছে তাতেও যাত্রীর সংখ্যা ছিল তুলনামূলক কম। তবে লোকাল বাস চলাচল অনেকটাই স্বাভাবিক রয়েছে। ঢাকায় বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে আতঙ্কে এমন অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন পরিবহন চালক ও যাত্রীরা। তবে যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে দুটি মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

শুক্রবার (৯  ডিসেম্বর) সকাল ৮টা-৯টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের শ্রীপুরের মাওনা, জৈনাবাজার এবং চান্দনা-চৌরাস্তা মোড় ও ভোগড়া বাইপাস এলাকায় দেখা গেছে, লোকাল বাস স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে। তবে দূরপাল্লার বাসের সংখ্যা ছিল খুবই কম। এসব বাসে যাত্রীও ছিল কম। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন থাকলেও তল্লাশি অভিযান চোখে পড়েনি। তবে এই মহাসড়কে মহানগর পুলিশের টহল গাড়ি ও সাজোয়া গাড়ি সাইরেন বাজিয়ে চলতে দেখা গেছে।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের ট্রাফিক (উত্তর) বিভাগের সার্জেন্ট মো. মসিউর রহমান বলেন, মহাসড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ ডিউটি করছে। মহাসড়কে টহল অব্যাহত আছে। সকালে অন্যান্য সময়ের চেয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দূরপাল্লার বাস ও যাত্রী অনেক কম দেখা গেছে। অন্য সময়ের শুক্রবার-শনিবার সরকারি ছুটির দিন সাধারণত আমাদের এ মহাসড়কে গাড়ি ও যাত্রী বেশি থাকায় ডিউটি করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়। 

ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা-চৌরাস্তা এলাকায় কথা হয় কয়েকজন পরিবহন চালক-শ্রমিকের সঙ্গে।  এ সময় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে চলাচলকার ড্রিমল্যান্ড পরিবহনের চালক নুর মোহাম্মদ বলেন, আমাদের মধ্যে একটা আতঙ্ক কাজ করছে। কখন না জানি আমাদের গাড়ি হামলার শিকার হয়। এমন অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে পরিবহন শ্রমিক মালিকের মধ্যে। তবে আজকে আমাদের বাসে কোথাও কোনো তল্লাশি হয়নি। 

একই কথা বলেন ওই সড়কে চলাচলকারী সৌখিন পরিবহনের শ্রমিক (হেলপার) মো. রাশেদুল ইসলাম, শ্যামলী বাংলা পরিবহনের বাসচালক উত্তম কুমার, মায়িশা পরিবহনের হেলপার মো. রেজওয়ান ও ইমাম পরিবহনের বাবলু মিয়া। তারা জানান, শুক্রবার বাস চলাচলে মালিকদের কোনো বারণ ছিল না। 

ড্রিমল্যান্ড পরিবহনের যাত্রী মো. আক্কাছ আলী বলেন, ঢাকায় বিএনপির গণ্ডগোলের কথা ভেবে একবার ঢাকা যাত্রা বন্ধ করেছিলাম। কিন্তু পারিবারিক জরুরি প্রয়োজনে আমাকে ঢাকা যেতেই হচ্ছে। অন্য সময়ের চেয়ে রাস্তায় দূরপাল্লার গাড়ি ও যাত্রীর সংখ্যা খুব কম দেখা গেছে। আমাদের এ বাসে অর্ধেকেরও কম সংখ্যক যাত্রী নিয়ে চালক ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। পথেও তেমন সমস্যা নেই। 
  
গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, রেলস্টেশনগুলোতে আমাদের চেকপোস্ট রয়েছে। আমাদের মহাসড়কে পুলিশ টহল বাড়ানো হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ ও সাঁজোয়া গাড়ি নিয়েও সেখানে তারা টহল দিচ্ছেন। সর্বত্র আমরা সতর্ক অবস্থায় আছি। আমরা মনে করি আমাদের শহরটা নিরাপদ থাকবে। এখানে কেউ কিছু করতে পারবে না। আমরা এখানকার শৃঙ্খলা বজায় রাখব।

মহাসড়কে চেকপোস্টের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা প্রয়োজন মনে করলে চেকপোস্ট করছি, প্রয়োজন না হলে করছি না। কোথাও যদি তথ্য পাই সেক্ষেত্রে চেকপোস্ট বসানো হচ্ছে। তবে মহাসড়কগুলোতে দূরপাল্লার গাড়ি কম রয়েছে। লোকাল গাড়ি চলাচল অনেকটাই স্বাভাবিক। 

মাওনা হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কংকন কুমার বিশ্বাস জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের জৈনাবাজার, নয়নপুর, মাওনাসহ কয়েক স্থানে চেকপোস্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। যখন যেখানে প্রয়োজন সেখানেই এ অভিযান চালানো হচ্ছে। 

জয়দেবপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহতাব উদ্দিন বলেন, বিশেষ অভিযানের অংশ হিসেবে বাঘের বাজার ও মির্জাপুর বাজার এলাকায় চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। 

মাওনা চৌরাস্তার চেকপোস্টে কর্তব্যরত শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সাদিকুর রহমান জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের স্থানে স্থানে প্রয়োজন অনুযায়ী চেকপোস্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। মহাসড়কের চলাচলকারী ছোট বড় যানবাহনগুলোর রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেসসহ যাবতীয় কাগজপত্রও যাচাই করা হচ্ছে।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান জানান, নিরাপত্তার স্বার্থে অবৈধ অস্ত্র, মাদক উদ্ধার ও অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে চেকপোস্টের মাধ্যমে পুলিশি টহল চলছে। কেউ নাশকতা করতে না পারে তার জন্যই প্রয়োজনে চেকপোস্ট পরিচালনা করা হচ্ছে।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈরের চন্দ্রা এলাকায় দেখা গেছে, উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার গাজীপুরের চন্দ্রা ত্রিমোড়ে গাড়ি ও যাত্রীদের তল্লাশি অব্যাহত আছে। এই পথ দিয়েই উত্তরবঙ্গের সব গাড়ি ঢাকায় প্রবেশ করে। চন্দ্রায় দুটি চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। সেখানে সন্দেহভাজন মোটরসাইকেল, পিকআপ,  দূরপাল্লার বাস, ট্রাক গতিরোধ করে জিজ্ঞাবাদ ও তল্লাশি করছে তারা। 

এদিকে যাত্রীও কম থাকার কথা বলছেন উত্তরবঙ্গের পরিবহন চালকরা। সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী এসআই পরিবহনের বাসচালক জনি বলেন, অদৃশ্য ভয়ে লোকজন বাসা হতে বের হয়নি। যেখানে গাড়িভর্তি যাত্রী থাকে সেখানে আজ ১০-১২ জন যাত্রী নিচে চলতে হচ্ছে। প্রায় একই কথা জানান ঢাকা-উত্তরবঙ্গগামী আলম পরিবহনের চালক আবু তাহের। 

গাজীপুরের পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম বলেন, যেকোনো ধরনের নাশকতা ঠেকাতে দেশের সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ তৎপর রয়েছে। ১২টির বেশি চেকপোস্ট বসিয়ে মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়কে চলাচলকারী যাত্রী, যানবাহন ও চালকদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

শিহাব খান/আরএআর