ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেছেন, বাংলাদেশে ফুটবলের গণজাগরণ ঘটাতে চাই। সারাদেশে যতগুলো খেলার মাঠ দখলে রয়েছে, তরুণদের জন্য সেগুলো উন্মুক্ত করতে চাই। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। আপনাদের দোয়ায় যদি বেঁচে থাকি, তাহলে কথা দিয়ে যাচ্ছি শেষ নিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত বাংলাদেশকে যারা দুর্নীতি করে নষ্ট করছে তাদেরকে ছাড়বো না। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলায় একটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচে অংশ নেওয়ার পর তিনি এসব কথা বলেন। খেলায় মুখোমুখি হয় ব্যারিস্টার সুমন ফুটবল একাডেমি বনাম রহনপুর ফুটবল একাডেমি।

শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর আহম্মেদী বেগম (এবি) উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এই ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। খেলার নির্ধারিত সময়ে কোনো দলই গোল দিতে না পারায় ম্যাচ ড্র হয়।  

ব্যারিস্টার সুমন বলেন, আমরা সিলেট থেকে এসেছি। হযরত শাহজালাল (রাঃ) সিলেটের মাটি আকড়ে ধরে থাকার কারণে সেই পবিত্র মাটি নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাটিতে যে পরিমাণ মিষ্টি আম হয় তাতে আপনারা যদি নিজেদের প্রতি বিশ্বাস রাখেন, তাহলে বাংলাদেশের নেতৃত্ব আপনাদের হাতে থাকবে।

হবিগঞ্জের একটি ছোট উপজেলা থেকে আমি আজ ব্যারিস্টার সুমন হয়েছি। দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজের সর্বোচ্চ দেওয়ার চেষ্টা করছি। ফেসবুক লাইভে ঘোষণা দিয়েছি, একাডেমির জন্য কেনা ৫০ লাখের গাড়ি আমি মারা যাবার পর আমার পরিবার দাবি করতে পারবে না। আমার অবর্তমানেও এটা শুধুমাত্র একাডেমির লোকজনই ব্যবহার করবে। 

তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নিজেকে বিশ্বাস করতে শিখুন। হবিগঞ্জের একটি উপজেলা থেকে আমি সুমন যদি পড়াশোনা করে ব্যারিস্টার হতে পারি, তাহলে আপনাদের দ্বারা তো আরও সহজ। কারণ উত্তরাধিকার সূত্রে এই মাটি আপনাদেরকে গর্বিত করেছে। আমার ঘাম যেই জায়গায় পড়ে সেখানকার মানুষের সঙ্গে আত্মীয়তা তৈরি হয়। আজকে মাঠে আমার অন্তত এক লিটার ঘাম ঝরেছে। আপনারা মানেন আর নাই মানেন, আমি বিশ্বাস করি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষের সঙ্গে আজ থেকে আমার আত্মীয়তা তৈরি হয়ে গেছে।  

ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ফেসবুকে সিলেটের অনেকেই আমার এই বক্তব্য শুনবেন। সিলেটবাসীর উদ্দেশ্যে বলবো, চোখ বন্ধ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষের সঙ্গে আত্মীয়তা তৈরি করতে পারেন। আপনাদেরকেও সিলেট-হবিগঞ্জে আমন্ত্রণ দিয়ে গেলাম। দুই এলাকার মানুষের মধ্যে আসা-যাওয়ার মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠবে। আজকে এসে দেখলাম, উত্তরবঙ্গেই আসল মানুষ বসবাস করে। 

তিনি আরও বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে কেউ যদি ব্যারিস্টার হতে চান, তাহলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। এইচএসসি পাস করার পরই নিজে বা পরিবারের যে কেউ যোগাযোগ করতে পারেন। আমার জন্ম হয়তো চাঁপাইনবাবগঞ্জে না, আপনাদের সঙ্গে জন্মস্থানের মিল না থাকলেও একটি জায়গায় মিল রয়েছে। আমরাও অতিথিদের সম্মান করতে জানি। আমি হয়তো আর জীবনেও এখানে আসব কীনা জানি না। কিন্তু যে আত্মীয়তার দায়বদ্ধতা নিয়ে যাচ্ছি, সেখান থেকে সহযোগিতা করবো। পড়াশোনা করতে চাইলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। 

এর আগে খেলার শুরুতে ব্যারিস্টার সুমন দর্শকদের উদ্দেশ্যে বলেন, সিলেট থেকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দূরের পথ পেরিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে খেলতে এসেছি। আপনারা ভাববেন না, আপনাদেরকে হারাতে এসেছি। সারাজীবন আপনারা আমাদেরকে যে পরিমাণ আম খাইয়েছেন, এটার কৃতজ্ঞতা জানাতেই এখানে খেলতে এসেছি। এখানে আসার আগেই আমার ধারণা ছিল, যেখানকার আম এতো সুমিষ্ট, সেখানকার মানুষ আরও কতো ভালো হবে। 

তিনি বলেন, আমার বাবা মারা যাওয়ার আগে আমাকে বলতেন, তোমাদের ৬ ভাই-বোনকে বিয়ে দিয়ে যেতে হবে, এটা আমার দায়িত্ব। তিনি বলেছিলেন, আমাদের সিলেটবাসীর একটি অভ্যাস সিলেটের মধ্যেই বিয়ে দেয়। তাই সিলেটের মধ্যেই ভালো ছেলে-মেয়ে দেখে। আমার বাবা কোনোদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ আসেনি। তবে আপনারা যে আতিথেয়তা দেখিয়েছেন, তাতে আমার বাবা যদি চাঁপাইনবাবগঞ্জ আসতে পারতেন, আমার বিশ্বাস তিনি একটা ছেলে বা মেয়ের বিয়ে দিতেন এখানে। 

ব্যারিস্টার সুমন বলেন, উপরে আল্লাহ আর নিচে আপনারা ছাড়া এই মাঠে আমাদের কোনো সর্মথক নেই। আমরা জানি, চাঁপাইনবাবগঞ্জে অনেক ভালো ফুটবলার রয়েছে। তারা আমাদের এলাকায় গিয়ে খেলে আসে। আপনাদের টিমও অনেক শক্তিশালী। তবে আমি জানি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের লোকজন সবসময় অতিথিপরায়ন। তাই আজকে সবাই মিলে আমাদেরকে সর্মথন দেবেন। 

তিনি আরও বলেন, আমি আপনাদের সামনে একটা মডেল হিসেবে দেখাতে এসেছি। হবিগঞ্জ জেলার একটি ছোট উপজেলা থেকে একাডেমি গঠন করে দেশজুড়ে খেলে বেড়াচ্ছি। বাংলাদেশেও যে যত্ন করলে রত্ন মিলে, তা দেখাতে এসেছি। একটা উপজেলা থেকে গঠন করা দলে ৩ জন ব্রাজিল খেলতে যাচ্ছে। এখানকার ১২ জন ফুটবলার বিভিন্ন ক্লাবে খেলে। দেড় বছর আগেও এরা কোথাও খেলার সুযোগ পায়নি। তাদেরকে যত্ন করে কোথায় নিয়ে এসেছি, তা আপনাদের দেখাবো। যারা বলে বাংলাদেশের মানুষকে দিয়ে কিছু হবে না, বাংলাদেশ বিশ্বকাপে খেলতে পারবে না, তাদেরকে বলবো শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জের এই মাঠে এসে দেখে যান, মানুষ কি পরিমাণ ভালোবাসে ফুটবলকে। 

এই প্রীতি ফুটবল খেলা দেখার জন্য জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজারো দর্শক মাঠে ভিড় করে। তরুণ সমাজের ফুটবল প্রেমিদের মধ্যমণি ব্যারিস্টার সুমনের খেলা দেখার জন্য খেলা শুরুর কয়েক ঘণ্টা থেকে অপেক্ষায় থাকে হাজারো দর্শক। খেলা শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই দূর-দুরান্ত থেকে ফুটবলপ্রেমিরা ভিড় করেছিল মাঠে।

শুক্রবার বেলা ৩টার দিকে গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর আহম্মেদী বেগম (এবি) উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এই ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও বিকেল ৩টা ৫১ মিনিটে খেলা শুরু হয়।  

খেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাবেক এমপি মুহা. জিয়াউর রহমান। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে খেলার উদ্বোধন করেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর মেয়র মোখলেসুর রহমান।

গোমস্তাপুর উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ২০-২১ মানবতার সেবায় রহনপুর এর সহযোগিতায় এই প্রীতি ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। 

সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের কলেজছাত্র রেহান আহমেদ এসেছেন ফুটবল খেলা দেখতে।

ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, কাতারে অনুষ্ঠিত ফুটবল বিশ্বকাপের কারণে পুরো বিশ্ব এখন কাঁপছে ফুটবল জ্বরে। এই সময়ে ব্যারিস্টার সুমনের খেলা ফুটবল উন্মাদনাকে আরও কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে টিভি, অনলাইন গণমাধ্যমে তার কর্মকাণ্ড ও খেলা উপভোগ করেছি। আজকে সরাসরি খেলা দেখতে পেয়ে খুব ভালো লাগছে। 

আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে খেলা দেখতে এসেছেন সুবাস চৌধুরী বলেন, আগে থেকেই জানতাম খেলা দেখতে অনেক মানুষ আসবে। তাই খেলা শুরুর ২ ঘণ্টা আগেই দুপুরে মাঠে চলে এসেছি। সুমন ভাই আমাদের তরুণ ফুটবল প্রেমিদের মধ্যমণি। তিনি শুধু একজন ফুটবলারই নন, তিনি একজন মানবিক মানুষও। সামাজিক কাজসহ সাধারণ মানুষের অনেক উপকার করেন বলে আমি তাকে খুব পছন্দ করি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসমা খাতুনের সভাপতিত্বে প্রীতি ফুটবল ম্যাচে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সাবেক এমপি গোলাম মোস্তফা, গোমস্তাপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামছুল আজম, রহনপুর পৌর মেয়র মতিউর রহমান মতি, গোমস্তাপুর থানা পুলিশের অফিসার-ইনচার্জ (ওসি) মাহবুবুর রহমান, জেলা পরিষদের সদস্য আব্দুল জলিল মাসুদ, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ফারিহা সবনম কেয়াসহ আরও অনেকে।

মো. জাহাঙ্গীর আলম/এমএএস