নোয়াখালী সদর উপজেলার নোয়াখালী ইউনিয়নের ডাক্তার বাজার। ভোরের আলো ফোটার আগেই ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁক-ডাকে সরগরম হয়ে ওঠে। শুধু তাই নয়, প্রতিদিন এই বাজারে কোটি টাকার নিরাপদ সবজি বিক্রি হয়।

জানা গেছে, ভোর হতেই কৃষকরা তাদের ক্ষেতে উৎপাদিত তরতাজা সবজি নিয়ে বাজারে আসেন। ফরমালিনমুক্ত হওয়ায় জেলা ছাড়াও লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে খুচরা বিক্রেতারা পাইকারি দামে সবজি কিনে নিয়ে যান।

জানা গেছে, প্রায় ৪০ বছরের পুরোনো এ বাজার প্রতিদিন ভোর ৩টা থেকে শুরু হয়ে সকাল ৭টা পর্যন্ত চলে। ভরা মৌসুমে বাজারে ৮০ থেকে ১ কোটি টাকার সবজি বেচাকেনা হয়। আড়তসহ ভ্রাম্যমাণ দোকানের মাধ্যমে এসব সবজি বেচাকেনা হয়ে থাকে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার নোয়াখালী ইউনিয়ন এলাকা থেকে কৃষকরা ভোরে পুঁইশাক, কলমি শাক, লাল শাক, পালং শাক, ধুন্দল, চিচিঙ্গা, বরবটি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, শালগম, নতুন আলু, বেগুন, গাজর, মুলা, মিষ্টিকুমড়া, লাউ, ধনেপাতাসহ নানা রকমের টাটকা সবজি বিক্রির জন্য নিয়ে আসছেন। 

সদর উপজেলার নোয়াখালী ইউনিয়নের চাষি মো. নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে আমি এ বাজারে সবজি বিক্রি করি। বাড়ির আঙিনায় উৎপাদন করা কীটনাশকমুক্ত সবজিই এই হাটের মূল আকর্ষণ। এখানে  ক্রেতা বেশি থাকায় সহজেই সবজি বিক্রি করা যায়। 

নিরাপদ সবজি চাষাবাদ করছেন মো. তাজুল ইসলাম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক একর জমিতে শীতকালীন সব ধরনের সবজি আমি চাষাবাদ করছি। আমাদের এখানে নিরাপদ ও ফরমালিনমুক্ত শাক সবজি পাওয়া যায়।

আবদুর রহমান নামে এক ব্যবসায়ী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রেতারা আসেন নিরাপদ সবজি কেনার জন্য। অনেক অফিসগামী মানুষ এখান থেকে সবজি কেনেন। নিরাপদ সবজি বাজার হিসেবে এর সুনাম রয়েছে। 

হেলাল উদ্দিন নামে আরেক ব্যবসায়ী ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রায় ৪০ বছর ধরে আমাদের এই সবজির বাজার। ভোর ৩টা থেকে শুরু হয়ে সকাল ৭টা পর্যন্ত বাজার চলে। দেশীয় সবজি এখানে পাওয়া যায়। চাটখিল, সোনাইমুড়ী ও কুমিল্লার নিমসার থেকে আমাদের এখানে ক্রেতা-বিক্রেতা আসে। সুবর্ণচর, রামগতি থেকেও ক্রেতা-বিক্রেতা আসে। বাজারে স্বেচ্ছাসেবক আছে অন্তত ২০ জন। সুশৃঙ্খলভাবে কেনাকাটা করতে পারে।

সবজি কিনতে এসেছেন সরকারি চাকরিজীবী আমিনুল ইসলাম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি প্রতিদিন ফজরের নামাজ পড়েই এই বাজারে  আসি। দৈনিক যা দরকার হয় তা ক্রয় করি। কৃষকরা সরাসরি নিজেদের জমির তরকারি এখানে বিক্রি করে। এসব সবজি নিরাপদ ও ভালো।

স্থানীয় ইউপি সদস্য ও বাজার পরিচালনা কমিটির সদস্য মো. জামশেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই বাজারে প্রতিদিন এক কোটি টাকার মতো সবজি বিক্রি হয়। কুমিল্লা, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর ক্রেতা-বিক্রেতা এখানে আসেন। এখানে বেচাকেনা নিরাপদ এবং কৃষক তার ন্যায্য মূল্য পায়। বেপারিরাও লাভবান হচ্ছেন।

সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম সামছুদ্দিন জেহান ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটু জায়গা যেন অনাবাদী না থাকে। সেই কথা অনুযায়ী সদর উপজেলার চাষিরা কাজ করছেন। কৃষকদের মাঝে সরকারি বীজ ও সার বিতরণ করা হচ্ছে। অর্থের প্রয়োজন হলে সমবায়ের মাধ্যমে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নোয়াখালীর উপপরিচালক মো. শহীদুল হকঢাকা পোস্টকে বলেন, ডাক্তার বাজার একটি প্রাচীন বাজার। এখানে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত নিরাপদ সবজি বিক্রি করেন। নিরাপদ সবজি উৎপাদনে আমরা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি এবং প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। কৃষকরা আমাদের কথা শুনে নিরাপদ সবজি উৎপাদন করছেন এবং ভালো দাম পাচ্ছেন। বাজারটিতে নিরাপদ সবজির ভালো চাহিদা রয়েছে।

হাসিব আল আমিন/এসপি