পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়ির মাটিরাঙায় প্রকৃতি রক্ষায় কাজ করছে ‘পিটাছড়া বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ উদ্যোগ’ নামে এক সংগঠন। ছয় বছর আগে মাটিরাঙার পূর্বখেদার নিভৃত অরন্যবেষ্টিত পিটাছড়া এলাকায় মাহফুজ রাসেল একাই বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় এমন উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পরে তার বন্ধুরাও এতে অংশগ্রহণ করেন।

প্রথমে প্রায় ৫ একরের ছোট টিলা কিনে এই কাজ শুরু করলেও এখন সেখানে ২৩ একরের প্রাকৃতিক বন রয়েছে। দেশে বেসরকারি উদ্যোগে প্রাকৃতিক বন সংরক্ষণের উদ্যোগ এটাই প্রথম বলে জানান মাহফুজ রাসেল।

জানা যায়, ২৩ একর প্রাকৃতিক বনের মধ্যে মাহফুজ রাসেল একাই থাকেন। সারাদিন প্রকৃতি আর বন্যপ্রাণীদের সঙ্গে সময় কাটান তিনি।

মাহফুজ রাসেল বলেন, ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারে আমার একটি বাড়ি ছিল। সেটি বিক্রি করে দেশে ফেরার পর পাহাড়ে বসবাসের জন্য ছোট একটি পাহাড় নিই। এখানে থিতু হওয়ার পর বুঝতে পারি অবাধে বন উজাড় হচ্ছে, শিকারীরা বন্যপ্রাণী শিকার করে নিচ্ছেন। এসব থামানোর জন্য ‘পিটাছড়া বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ উদ্যোগ’ একটি সংগঠন গড়ে তুলি। এসব কাজে কয়েকজন কাছের বন্ধু আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে। শুরু হয় পথচলা। বন্যপ্রাণী শিকার বন্ধে মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নিই। এরই মধ্যে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের সহায়তায় এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে কর্মশালাও করা হয়। ভালো সাড়া পেয়েছি। বন্যপ্রাণী শিকার পুরোপুরি বন্ধ না হলেও ছয় বছরে ৫০ শতাংশ শিকার কমেছে। সম্প্রতি লজ্জাবতী বানর সংরক্ষণের জন্য সচেতনতা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ‘পিটাছড়া বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ উদ্যোগ’ এর বনের পরিমাণ ২৩ একর। এখানে গড়ে ওঠেছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ–লতা-গুল্ম। বন না বাঁচলে বন্যপ্রাণী কোথায় থাকবে। ইকোসিস্টেম বাঁচাতে হলে আগে বন রক্ষা করতে হবে। তাই বনের পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। এজন্যই মূলত প্রাকৃতিক বন গড়ে তুলেছি। বনের পরিধি বাড়ায় বন্যপ্রাণীর বংশ বিস্তার হয়েছে। বন্যপ্রাণীর পরিমাণ বাড়ছে। এর মধ্যে বনে সজারু, হলুদ কাছিম, চিতা বিড়ালসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী দেখা গেছে।

এই কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন বাধার মুখে পড়েছেন জানিয়ে মাহফুজ রাসেল জানান, এখানে ব্যক্তিমালিকানাধীন বন উজাড় থামেনি। শিকার বন্ধ হলেও একশ্রেণির সিন্ডিকেট তার বন থেকে কাঠ কেটে তা স্থানীয় ইটভাটায় বিক্রি করছে। এতে বন্যপ্রাণীর আবাস নষ্ট হচ্ছে।

পাহাড়ে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে উদ্যোগ নিলেও বন রক্ষায় তার এই উদ্যোগে সানজিদা জুই, পাখি বিশেষজ্ঞ সায়েম চৌধুরী, বন্যপ্রাণী গবেষক হাসান আলী রাজী, ইনাম আহমেদ, ডা. রাফিয়াসহ বেশ কয়েকজন বন্ধু যোগ দেয় বলে জানান মাহফুজ রাসেল।

‘পিটাছড়া বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ উদ্যোগ’ দেখতে আসা কয়েকজন বলেন, মানুষ নিজেদের বাসস্থান করতে গিয়ে বন্যপ্রাণীর বাসস্থান নষ্ট করে ফেলছে। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ আমাদের দেশে বন উজাড়ের সংখ্যা খুবই বেড়ে গেছে। পিটাছড়া বন রক্ষায় যেভাবে কাজ করছে তা খুবই প্রশংনীয়। এরা এলাকার মানুষকে শিকার বন্ধে সচেতন করছে।  পিটাছড়া কাজ শুরু করার পর এখানে বন্যপ্রাণী শিকার কমে গেছে।

বন্যপ্রাণী গবেষক হাসান আলী রাজী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে যখন ব্যাপকভাবে বন ধ্বংস করা হচ্ছে ঠিক সেই সময়ে ‘পিটাছড়া বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ উদ্যোগ’ বন রক্ষায় দারুণ কাজ করছে। এখন যদি ব্যক্তিগত মালিকাধীন বনগুলো রক্ষা করতে পারি তাহলে বন্যপ্রাণী তাদের আশ্রয় খুঁজে পাবে।

মো. জাফর সবুজ/ এমজেইউ