কুয়াকাটা সৈকতের বুক চিরে জেগে ওঠা অন্তত ২০০ বছরের পুরোনো পালতোলা নৌকাটি ৯ বছরেও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা হয়নি। ২০১৩ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তায় নৌকাটি কুয়াকাটার শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধবিহার সংলগ্ন বেড়িবাঁধের পাশে স্থাপন করে। সেই থেকে অরক্ষিতই রয়ে গেছে নৌকাটি। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে নৌকাটি যথাযথভাবে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন পর্যটকসহ স্থানীয়রা। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাখাইন সম্প্রদায়ের পূর্ব পুরুষরা এই নৌকাযোগে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য থেকে বিতাড়িত হয়ে আসে। পর্যটকদের ব্যাপক আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা নৌকাটি ২০১২ সালে জেলেদের মাধ্যমে স্থানীয় সাংবাদিকদের নজরে আসে। কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে পূর্ব দিকে বালুর বুক চিরে নৌকাটি সামান্য বেরিয়ে আসে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তায় বাংলাদেশ রেলওয়েকে সম্পৃক্ত করে ২০১৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রেললাইনে তুলে তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বৌদ্ধবিহারের পাশে প্রতিস্থাপন করা হয়। 

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ৭২ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২৪ ফুট প্রস্থের নৌকাটি ৯০ টন ওজনের। এই  নৌকাটি ২০০ বছর বা তারও বেশি পুরোনো। এটি রাখাইনদের তৈরি নৌকা হতে পারে। 

নৌকা থেকে উদ্ধার করা হয় তামার তৈরি পেরেক, নারকেলের মালাই, নারকেলের ছোবলা দিয়ে বানানো রশি, ভাঙা মৃৎপাত্রের টুকরো, ধানের চিটা, পাটকাঠি, মাদুরের অবশিষ্ট অংশ, পাটের তৈরি ছালার নিদর্শন, লোহার ভারী ও বিশালাকৃতির শিকল। যার মধ্যে বেশ কিছু নিদর্শন বর্তমানে বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে।

ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক মো. আল মামুন বলেন, নৌকাটি উদ্ধার করা হয়েছে ৯ বছর আগে। অথচ এখনো সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। এটা দুঃখজনক। 

কুয়াকাটার কেরানীপাড়া রাখাইন নেতা উচাচিং মাতুব্বর বলেন, এই নৌকা তাদের পূর্বপুরুষরাই আরাকানে বসে তৈরি করেছে। এরপর এমন অন্তত ৫০টি নৌকাযোগে ১৫০টি পরিবার মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য থেকে এসে ১৭৮৪ সালে বাংলাদেশের কুয়াকাটাসহ বেশ কয়েকটি উপকূলীয় এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট এসোসিয়েশনের (কুটুম) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন আমির বলেন, ২০১২ সালে নৌকাটি সংরক্ষণ করলেও এটি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি। নৌকাটি কুয়াকাটা বিচ থেকে একটু দূরে কোথাও সংরক্ষণ করা হলে আরেকটি পর্যটন স্পট হবে। নৌকাটি থেকে যেসব নিদর্শন পাওয়া গেছে, তা কুয়াকাটায় সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের দাবি জানাই। 

খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দায়িত্বরত প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা বলেন, সংরক্ষণে কাজ চলমান রয়েছে।

এসপি