বগুড়ায় দিনমজুরের ৩ বছরের এক শিশুর হার্নিয়ার অপারেশনের সময় একটি অন্ডকোষ কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে মডার্ণ ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে। 

এ ঘটনায় বগুড়া সদর থানা ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন ওই শিশুর মা আফরুজা বেগম আপু। তিনি জেলার গাবতলী উপজেলার মহিষাবান দেবত্তরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তার স্বামীর নাম নুর আলম। রোববার তিনি ওই অভিযোগ করেন। 

অন্ডকোষ কেটে ফেলায় অভিযুক্তরা হলেন, পল্লী চিকিৎসক এনামুল হক রানা, মুনছুর রহমান, আমিনুর রহমান ও ফারুক। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে এ চারজনই চিকিৎসক। তাদের মধ্যে এনামুল হক গাবতলী উপজেলার গোলাবাড়ি মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তার মাধ্যমেই মডার্ণ ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ছেলেকে নিয়ে যান আফরুজা।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৭ মাস আগে অসুস্থ হয়ে পড়ে শিশু রাকিব। তখন তাকে গাবতলীর গোলাবাড়ি বাজারের ডা. এনামুলের কাছে নেওয়া হয়। ওই সময় এনামুল বলেন, রাকিব গুরুতর অসুস্থ। সে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে। তাকে সুস্থ করতে হলে বগুড়া সদরের সূত্রাপুরের শেরপুর সড়কের পিটিআই মোড়ের মডার্ণ ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করাতে হবে। 

এনামুলের কথা অনুযায়ী গত ৮ মে সন্ধ্যায় রাকিবকে ওই  ক্লিনিকে নিয়ে যান মা আফরুজা। সেখানে আফরুজার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা নেয় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। এরপরই চিকিৎসকরা বলেন, রাকিবের হার্নিয়ার সমস্যা রয়েছে জরুরি ভিত্তিতে তার অপারেশন করতে হবে। এসময় অপারেশনের সম্মতিপত্রে রাকিবের মা-বাবার স্বাক্ষর নেন ফারুক। চিকিৎসকরা ওই রাতেই রাকিবকে অপারেশন রুমে নিয়ে যান। 

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, অপারেশন শেষে ফিরে এসে চিকিৎসকরা বলেন, রাকিবকে বাঁচাতে তার একটি অন্ডকোষ কেটে ফেলা হয়েছে। সেই অন্ডকোষ পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠাতে হবে। এ কারণে রাকিবের মায়ের কাছ থেকে আরও ১ হাজার টাকা নেন ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।

এ ঘটনার পর গত ১২ মে পর্যন্ত রাকিবকে ওখানে ভর্তি রাখা হয়। পরে বিভিন্ন ওষুধ দিয়ে তাকে রিলিজ দেওয়া হয়। পরে অনেকবার এনামুলের সঙ্গে যোগাযোগ করেও রাকিবের কোনো মেডিকেল রিপোর্ট পাননি তার মা। এক পর্যায়ে এনামুল বিষয়টি ধামাচাপা দিতে রাকিবের মাকে ১০ হাজার টাকা দিতে চান।

এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে এনামুল হক বলেন, আমি একজন ডিপ্লোমা চিকিৎসক। গোলাবাড়ী বাজারে আমার চেম্বার রয়েছে। রাকিবের স্বজনরা গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে আমার কাছে নিয়ে আসে। পরে তাকে ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক বলেন রাকিবের একটি অন্ডকোষ কেটে ফেলতে হবে। এসময় রাকিবের মা-বাবা সম্মতি জানিয়ে স্বাক্ষর করেন। কিন্তু এখন এসে তারা ভিন্ন কথা বলছেন।

তিনি বলেন, রাকিবের পরিবার খুবই গরিব। ক্লিনিকের ১৫ হাজার টাকাও তারা দিতে পারেনি। তারা দিয়েছে ৬ হাজার টাকা। যাই হোক, অপারেশন শেষে রাকিবের বায়োপসি পরীক্ষা করে নিতে বলা হয় তার বাবা-মাকে। কিন্তু তারা তা করেননি টাকার অভাবে। এমনকী পরবর্তীতে তারা টাকা দেওয়ার ভয়ে রাকিবকে নিয়ে আর ক্লিনিকেও আসেননি। আমরা জানতে পেরেছি জন্ম থেকেই রাকিব ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিল।

এনামুল হক বলেন, আমি রাকিবের মাকে ১০ হাজার টাকা দিতে চেয়েছিলাম তা সঠিক। রাকিব খুব অসুস্থ, তাকে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করানোর জন্য সাহায্য করতে চেয়েছিলাম। কারণ তারা আমার কাছে মাঝে মধ্যেই আসত।

রাকিবের মা আফরুজা জানান, স্বামী দিনমজুরের কাজ করে এবং  আমি অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাই। তিনিও কাজ করতে পারেন না নিজের অসুস্থতার কারণে। আমার ছেলে কষ্টে ছটফট করছে। টাকার অভাবে তার চিকিৎসা হচ্ছে না। অবশেষে রোববার চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছি।

এদিকে ধীরে ধীরে রাকিবের অবস্থার আরও অবনতি হতে থাকে। অন্য চিকিৎসকরা রাকিবের মাকে বলেন যে তার ছেলের শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। অপারেশন করা চিকিৎসকদের ভুলে রাকিব দিন দিন মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পরবর্তীতে গত ১১ নভেম্বর বগুড়ার টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড রাফাতুল্লাহ কমিউনিটি হসপিটালে রাকিবের মেডিকেল পরীক্ষা করে জানা যায়, সে ভুল চিকিৎসার কারণে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে।

সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি নুরে আলম জানান, ছেলের অন্ডকোষ কেটে ফেলায় আহত রাকিবের মা থানায় একটি অভিযোগ করেছেন। তার অভিযোগটি তদন্ত করা হচ্ছে। বিষয়টি সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। 

আলমগীর হোসেন/এমএএস