মো. আমিনুল ইসলাম

মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার ব্রাহ্মণগাঁও বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে জাল সনদ দিয়ে কেরানি থেকে শিক্ষক পদে ৭ বছর ধরে চাকরি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী (কেরানি) মো. আমিনুল ইসলাম ৭ বছর আগে জাল সনদ তৈরি করে আইসিটি (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি) বিষয়ের শিক্ষক পদে চাকরি নেন। 

অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক, পরিচালনা কমিটির সভাপতির অনৈতিক সহযোগিতায় তিনি কেরানি থেকে শিক্ষক হয়েছেন। এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য শামীম মোড়ল।

খোঁজ নিয়ে যানা যায়, ১৯৯২ সালে আমিনুল ইসলাম অফিস সহকারী (কেরানি) হিসেবে উক্ত বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি ওই বিদ্যালয়ে কেরানি পদে চাকরি করেন। ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি তাকে আইসিটি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১৬ সালের ২৮ এপ্রিল পরিপত্র জারির মাধ্যমে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয় চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরিপত্রটিতে এ বিষয়ে এমপিও না দেওয়ার শর্তে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বলা হয়েছিল।

ওই বিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষক এবং ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা জানান, শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েই তিনি বিদ্যালয়ে স্বেচ্ছাচারিতা শুরু করেন। সরকারি তালিকাভুক্তি বা এমপিওর এক বছরের মাথায় ২০১৭ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে বিদ্যালয়ের কমিটি অনুমোদনের জন্য যে আবেদন করা হয়, তাতে শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে জাল সনদ নিয়ে চাকরি নেওয়ার কারণে কয়েক বছর আগে ৭ থেকে ৮ মাস শিক্ষক আমিনুলের বেতন বন্ধ ছিল। পরে তিনি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে বর্তমানে শিক্ষক হিসেবে বহাল রয়েছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, চাকরি থেকে অবসরের পর সুবিধা নেওয়ার জন্য জালিয়াতি করে এমপিওভুক্ত শিক্ষক হয়েছেন আমিনুল ইসলাম। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট সবাই জানা সত্বেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

জাল সনদ নিয়ে আইসিটি বিভাগের শিক্ষক হওয়ার বিষয়ে আমিনুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অনেকগুলো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অফিস সহকারী থেকে শিক্ষক হয়েছি। একটি মহল আমাকে নিয়ে মিথ্যা কথা বলছে। তবে তার আইসিটি সনদ দেখতে চাইলে তিনি দেখাতে অস্বীকৃতি জানান। এমনকি শুধু সনদ নম্বর দিতেও অপারগতা প্রকাশ করেন।

বিদ্যালয়ের নব নির্বাচিত অভিভাবক প্রতিনিধি মো. শামীম মোড়ল বলেন, শুনেছি আমিনুল ইসলাম জাল সনদের মাধ্যমে বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। পরে আমরা তার কাছে সনদ দেখতে চাইলে তিনি কমিটির কাউকে তার সনদ দেখাতে বাধ্য নন বলে জানান। শামীম মোড়ল আরও জানান, শিক্ষক আমিনুলের সনদ জাল কিনা জানতে চেয়ে ও সনদ জাল হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত মঙ্গলবার ইউএনও বরাবর আবেদন করেছি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হোসেন খসরু ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমিনুল ইসলামের শিক্ষকতা করার যোগ্যতা সনদ বিদ্যালয়ের কোনো নথিতে নেই। তার সনদ তার কাছে রয়েছে। তিনি আরও বলেন শুনেছি, জাল সনদে চাকরি নেওয়ার অভিযোগে ৭-৮ মাস বেতন বন্ধ ছিল তার। সে সময় আমি এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলাম না। সনদ যাচাই করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান শিক্ষক কোনো উত্তর দিতে পারেননি।

বুধবার দুপুরে সরেজমিনে ওই বিদ্যালয়ের গেলে অভিযুক্ত আমিনুল ইসলাম, সংবাদকর্মীর পরিচয় পেয়ে প্রধান শিক্ষকের কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান। এরপরে তাকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি ও স্কুলের ভেতরে প্রবেশ করেননি। প্রধান শিক্ষকও এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শরীফ মো. মোর্তজা আহসান বলেন, শিক্ষক আমিনুলের আইসিটির সনদ জাল কিনা সে বিষয়ে তদন্ত করা হবে। সনদ জাল হলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল আউয়াল ঢাকা পোস্টকে বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ব.ম শামীম/আরকে