বাইসাইকেল চালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার স্মৃতিচারণ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা টিপু মুনশি বলেছেন, ১৯৭১ সালে আমি বাবার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে যেতে পীরগাছার গ্রামের বাড়ি থেকে বের হয়েছিলাম। আমরা বাবা-ছেলে মিলে ৪২ কিলোমিটার পথ বাইসাইকেল চালিয়ে ভারতীয় সীমান্তে পৌঁছে যাই। কিন্তু সীমান্ত পার হওয়ার পর আমাদের কাছে কোনো টাকা-পয়সা ছিল না। তখন আমরা ৩৬০ টাকায় সেই বাইসাইকেলটা বিক্রি করে বাবা-ছেলে মিলে যুদ্ধে চলে গেলাম। আজ আরএফএল বাইসাইকেল ফ্যাক্টরির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসে সেই বাইসাইকেল চালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার কথা মনে পড়ে গেল। বাইসাইকেল আমার জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে।

বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় লালচাঁদপুরে গঙ্গা ফাউন্ড্রি লিমিটেডে আরএফএল বাইসাইকেল ফ্যাক্টরির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমার বাবা ব্রিটিশ সোলজার ছিলেন। সীমান্ত পার হওয়ার পর তিনি সরাসরি যুদ্ধে চলে যান। আর আমি চলে গেলাম প্রশিক্ষণে। পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ শেষে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দিন ১৭ ডিসেম্বর ভারত থেকে গঙ্গাচড়া হয়ে রংপুরে এসেছিলাম। ওইদিন বহু মুক্তিযোদ্ধা গঙ্গাচড়া হয়ে রংপুরে আসেন। এই বিজয়ের মাসে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, বাইসাইকেল এবং গঙ্গাচড়ার সঙ্গে আমার জড়িয়ে থাকা গৌরবময় স্মৃতিগুলো মনে পড়ছে।
 
তিনি আরও বলেন, আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। কিন্তু কাঙিক্ষত অর্থনৈতিক মুক্তি এখনো পাইনি। আজও মুক্তির জন্য সেই লড়াইটা চলমান রয়েছে। আমাদেরকে অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা রংপুর থেকে মঙ্গা বিতাড়িত করেছেন। রংপুর অঞ্চলে মঙ্গা এখন অতীত। আজ উন্নয়নের ধারাবাহিকতার সঙ্গে আরএফএল বাইসাইকেল ফ্যাক্টরির উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে রংপুরে কর্মসংস্থানের নতুন দ্বার উন্মোচিত হলো।

টিপু মুনশি বলেন, যখন দেখি বাংলাদেশের বাইসাইকেল ইউরোপে চলছে, তখন বুকটা গর্বে ভরে যায়। মুক্তিযুদ্ধের পর আমরা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছি। আজ আমাদের দেশের উৎপাদিত পণ্য বিশ্ববাজারে সমাদৃত। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পণ্যের ছড়াছড়ি। সেখানে বাংলাদেশি পণ্য হিসেবে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ ভারতের বিশাল বাজার দখল করেছে। বিজয়ের মাসে এটি আমাদের বিজয়গাথা অর্জন।

তিনি আরও বলেন, গ্রামের কৃষক, কৃষি ও মাটির সঙ্গে আরএফএল গ্রুপের সম্পর্ক। এই প্রতিষ্ঠানটি কৃষি নিয়ে কাজ করছে। গ্রামের পরিবেশ এবং মানুষকে সম্পৃক্ত করে আরএফএল পণ্য উৎপাদনে অনেক বেশি এগিয়েছে। আমরা সার্বিকভাবে ৬০ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি করি। এর মধ্যে ৮৪ শতাংশ রেডিমেট গার্মেন্টস। বাকি যেটুকো থাকে, এর মধ্যে শুধু প্রাণ-আরএফএল গ্রুপই বর্তমানে বাংলাদেশি টাকায় ৫ হাজার কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করছে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে এটি অনেক বেশি মূল্যবান। এই গ্রুপে দেশের প্রায় ১৫ লাখ মানুষ পরোক্ষভাবে জড়িত। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম-লড়াইয়ে আরএফএল গ্রুপ আরও এগিয়ে যাবে।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি মোহা. আবদুল আলীম মাহমুদ, এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, রংপুরের জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীন, পুলিশ সুপার মো. ফেরদৌস আলী চৌধুরী ও আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরএন পাল। 

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর