রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে অংশ নেওয়া জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার পথসভার মঞ্চ ভেঙে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। অভিযোগ রয়েছে- আচরণবিধি অমান্য করে তিনি পথসভার নামে জনসভার আয়োজন করেন। এ কারণে আচরণবিধি প্রতিপালনে তাকে মঞ্চ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পরে প্রার্থীর লোকজনই সভামঞ্চ খুলে ফেলেন।

শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় মহানগরীর ২০ নম্বর ওয়ার্ডের মুলাটোল বালিকা বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত পথসভার মঞ্চ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা লুৎফুল কবির সরকার। এ সময় তার সঙ্গে পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

আচরণবিধি প্রতিপালনে পথসভার মঞ্চ ভেঙে দেওয়ার ব্যাপারে লুৎফুল কবির সরকার বলেন, মেয়র প্রার্থীকে আইন ও আচরণবিধি মেনে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তিনি আইন ও বিধি অনুসারে কার্যক্রম চালাবেন বলে আমাদেরকে নিশ্চিত করেন। পরে তার লোকজনই সভামঞ্চ খুলে ফেলার ব্যাপারে আমাদেরকে সহযোগিতা করেন। 

তিনি আরও বলেন, আচরণবিধি প্রতিপালনে শুধু একজনের জন্য এই বার্তা নয়, সব প্রার্থীর জন্যই একই বার্তা। কোনোভাবেই পথসভার নামে জনসভা করা যাবে না। আমরা মেয়র ও সাধারণ কাউন্সিলরসহ সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীদের পাশাপাশি তাদের কর্মী-সমর্থকদের আচরণবিধি প্রতিপালনে সতর্ক করছি।

আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, আমাদের কাছে তো নির্বাচনী আইন ও বিধিপত্র আছে, সেগুলো মেনেই আমরা নির্বাচন পরিচালনা করছি। কোথাও গণসংযোগ করতে গেলে স্থানীয় লোকজন ভিড় করছে। আমার পেছনে পেছনে অনেকে ছুটে আসছে। মানুষজন মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরে ঘুরে আমাকে উৎসাহ দিচ্ছে। এর জন্য আমি দায়ী না, ভোটারদেরকে আমি বাধা দিতে পারি না।

তিনি আরও বলেন, পথসভাগুলোতে লোকজন বেশি হওয়ায় জনসভা করার যে অভিযোগ উঠেছে, তা নিছক মিথ্যা। অন্য প্রার্থীর পথসভায় তো লোকই হয় না। আমার পথসভায় লোক আসলে আমি কি করব? মানুষের আবেগ-উচ্ছ্বাস দেখে এরশাদের প্রতি ভালোবাসা দেখেই বোঝা যাচ্ছে এবার লাঙ্গল প্রতীকে ভোট বিপ্লব হবে। আশা করছি গত নির্বাচনের চাইতে এবার আরও বেশি ভোটের ব্যবধানে জিতবো ইনশাআল্লাহ।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব আবদুল বাতেন বলেন, প্রার্থীরা আচরণবিধি মেনে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন কিনা, সেটা তদারকি করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ নগরীর বিভিন্ন  ওয়ার্ড ঘুরে ঘুরে দেখছেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকার একাধিক নির্বাচনী অফিস/ক্যাম্প বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পোস্টার সাটানো, মাইকিং, পথসভা, গণসংযোগসহ অন্যান্য বিষয়গুলোতে সব প্রার্থীকে সতর্ক করা হচ্ছে। আচরণবিধি প্রতিপালনে প্রার্থীদের বোঝানো হচ্ছে। তারপরও যদি কেউ ইচ্ছে করেই আচরণবিধি লঙ্ঘন করে তাহলে আইন ও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, আগামী ২৭ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ওইদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন ভোটাররা। এবার মেয়র পদে নয়জনসহ মোট ২৬০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এটি রংপুর সিটি করপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচন। এর আগে ২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর এই সিটিতে সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল। ওই নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হলেও এবার পুরো সিটির ২২৯টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন। 

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর