বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেছেন, দেশের উন্নয়নের কারিগর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সারা দেশের যা উন্নয়নের চিত্র দেখছেন তা চেয়ারম্যান বা এমপিদের কারণে নয়। প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা আর আন্তরিকতার কারণে এসব সম্ভব হয়েছে। আমরা জনপ্রতিনিধি ও নেতা-কর্মীরা তার নির্দেশনা মোতাবেক সেটা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। আমি তার একজন ক্ষুদ্র কর্মী মাত্র।

‘জনতার মুখোমুখি জনতার সেবক’ স্লোগানকে সামনে রেখে বুধবার (২১ ডিসেম্বর) নড়াইল সদরের হবখালি ইউনিয়নের হাড়িগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আলোচনা অনুষ্ঠানে মাশরাফি এসব কথা বলেন। এ সময় এলাকার গণমানুষের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া শোনেন ও খোলামেলা উত্তর দেন তিনি।

দীর্ঘ ৪ বছর সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালনকালে জনগণের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির দাঁড়িপাল্লায় নিজেকে পরখের জন্য  জনগণের সামনে হাজির হন মাশরাফি। এ সময় ছাত্র-শিক্ষক, কৃষক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার  সাধারণ মানুষ বিভিন্ন রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, হাসপাতাল-ক্লিনিকে চিকিৎসকের অভাব, ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সীমাহীন দুর্নীতি, বিদ্যালয় ভবন ও ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ, মসজিদ-মন্দির সংস্কার এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি তুলে ধরেন।

এ সময় সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা জনগণের এসব দাবি নোট করেন এবং ধারাবাহিকভাবে তাদের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেন।

মাশরাফি বলেন, ঘুষ দিয়ে আপনারা কোনো কাজ করবেন না। ভাতার পাঁচশত টাকার একটি কার্ড নিতে কেন আপনরা ৬ হাজার টাকা দেবেন? চাকরির জন্য কেন আপনারা টাকা দেবেন? এ দায়ভার তো আমার না। যোগ্যতা থাকলে আপনাদের চাকরি হবে। মনে রাখবেন, যারা আপনাদের কাজ করে দেওয়ার কথা বলে টাকা নেবেন তারা কেউ আপনার উপকারে আসবে না। 

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশের উন্নয়নে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, আমরা তার কর্মী হিসেবে কাজ করছি। আপনাদের ন্যায্য পাওনা আমাদের থেকে বুঝে নেবেন। আপনাদের কাছে আমরা কৈফিয়ত দিতে বাধ্য।

রাস্তা-ঘাট নির্মাণ সংক্রান্ত জনগণের এক প্রশ্নের জবাবে মাশরাফি বলেন, আপনারা জানেন করোনার কারণে প্রায় দুই বছর উন্নয়নমূলক কাজ বন্ধ ছিল। কাজ তো দূরের কথা সারা বিশ্ব থমকে ছিল, বেঁচে থাকা ছিল চ্যালেঞ্জ, কেউ ঘর থেকে বের হতে পারেননি। তবুও গত চার বছরের বাকি সময় নড়াইল সদর উপজেলায় স্কুল, রাস্তা-ঘাট, মসজিদ-মন্দিরসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক ১০৫ কোটি টাকার কাজ হয়েছে, যা বিগত ৫০ বছরেও হয়নি।

তিনি আরও বলেন, আপনারা হয়তো একটা বিষয় জানেন না, আমি চাইলেই একটা রাস্তা করে দিতে পারব না। কারণ এগুলার চাহিদা মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হয়। ভরসা রাখুন ইনশাআল্লাহ আমাদের প্রধানমন্ত্রী বেঁচে থাকলে এই নড়াইলের চিত্র পাল্টে যাবে।

চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চাইলেই রাতারাতি এখানে হাসপাতাল বানানো সম্ভব নয়। শুধু আপনাদের এখানেই নয় সারা দেশে আমাদের চিকিৎসক সংকট। সম্প্রতি কিছু চিকিৎসক নিয়োগ হয়েছে আপনাদের এখানে আগামী সোমবার থেকে চিকিৎসক পাবেন। ডায়াবেটিস হাসপাতাল এখানে চাইলেই বানানো সম্ভব নয়, তবে আমি আপনাদের জন্য মেডিকেল ক্যাম্পের ব্যবস্থা করবো অতি দ্রুত।

ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সীমাহীন দুর্নীতির বিষয়ে মাশরাফি বলেন, জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে দ্রুতই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেবা নিতে এসে ভবিষ্যতে কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখা হবে। 

কৃষকদের সময়মতো পর্যাপ্ত সার না পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নড়াইলে সার সংকট নেই, তারপরও কোনো কৃত্রিম সংকট করা হচ্ছে কিনা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আজই কথা বলে ব্যবস্থা নেবো।

বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমদের নড়াইলে বেশ কিছু মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। সরু রাস্তা প্রশস্তকরণে কাজ চলছে, চার লেনের কাজ শুরু হবে, শেখ রাসেল আইটি পার্ক, ইপিজেড স্থাপনসহ মেগা প্রকল্পের কাজগুলো তাড়াতাড়ি আপনাদের সামনে দৃশ্যমান হবে। আমাদের প্রাণের দাবি একটি মেডিকেল কলেজ ও একটি বিশ্ববিদ্যালয়, এটা নিয়ে চার বছর ধরে চেষ্টা করছি। আশা করি প্রধানমন্ত্রী এটাও আমাদের পূরণ করবেন।

এ সময় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস, নড়াইল পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরা, জেলা পরিষদের সদস্য খোকন সাহা, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার আলমগীর হোসেন, প্যানেল মেয়র কাজী জহিরুল হক, হবখালি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান, নলদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, আউড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান এস এম পলাশসহ আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সজিব রহমান/এমএ