মাদারীপুর ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি

মাদারীপুরে কোটি টাকা ব্যয়ে করে নির্মাণ করা হয়েছে ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি। চলতি বছরে সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটির তিনটি বিভাগে ভর্তি হয়েছেন প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী বেশি। এদিকে দক্ষ জনবল সংকটে ভর্তির ৬ মাসেও প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম চালুর কোনো পদক্ষেপ নেই। এতে হতাশায় ভুগছেন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সৈয়দারবালী মৌজায় আটতলা বিশিষ্ট ভবনটি ৩২ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে নিমার্ণ করেন স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ২০২০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেনকোলোজির এই ভবনটি উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের আড়াই বছর পার হলেও আজও শুরু হয়নি এর কার্যক্রম। প্রতিষ্ঠানটির দামি দামি আসবাবপত্র ও মূল্যবান যন্ত্রপাতি অযত্ন আর অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে। এদিকে লোকসমাগম না থাকায় ভবনটির ভেতরে বাড়ছে মাদকসেবকদের আড্ডা। অফিসের কার্যক্রম তেমন না থাকায়, ভবনেও কেউ থাকেন না। অথচ ৯ লাখ টাকা বিদ্যুৎবিল বকেয়া থাকায় বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে সংযোগ।

এটি সঠিকভাবে চালু হলে চার বছর মেয়াদি কোর্সে প্যাথলজিস্ট, মেডিক্যাল ল্যাব টেকনিশিয়ান, ডেন্টাল, ফিজিওথেরাপি, স্বাস্থ্য পরিদর্শকসহ বিভিন্ন শাখায় প্রতিবছর সাড়ে তিনশ শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারবেন। এতে কর্মসংস্থান বাড়বে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। এদিকে, আগামী জানুয়ারিতে ক্লাস চালুর লক্ষ্যে একজন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ তিনজনকে অস্থায়ীভাবে দায়িত্ব দেওয়া হলেও এখন অফিস করেন না কেউ। গত ১৬ জুন মাদারীপুর আইএইচটিতে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি শুরু হয়। ফার্মাসি, রেডিও থেরাপি ও ল্যাবরেটরি বিভাগে মোট ৯০ জন শিক্ষার্থী। অন্যান্য আইএইচটিতে গত সেপ্টেম্বরে ক্লাস শুরু হয়ে গেলেও মাদারীপুর আইএইচটিতে ক্লাস কবে নাগাদ শুরু হবে, তা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা।

সম্প্রতি মাদারীপুর ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মূল ভবনের বেশ কয়েকটি গ্লাস ভাঙা। ভবনের কয়েকটি অংশের রঙ উঠে গিয়ে বিবর্ণ হয়ে গেছে। এছাড়াও ভবনের মধ্যে থাকা দামী যন্ত্রপাতি, চেয়ার-টেবিলগুলোতে ধুলো বালি জমে স্তুপে পরিণত হয়েছে। ভবনের সিড়ির গোড়ায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে অসংখ্য সিগারেটের টুকরো।

প্রতিষ্ঠানটির ল্যাবরেটরি বিভাগে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী কনেক মন্ডল বলেন, ৬ মাসের বেশি হয়েছে আমি এখানে ভর্তি হয়েছি। এখনো কোনো ক্লাস শুরু হয়নি। শুনেছি জানুয়ারিতে নাকি ক্লাস শুরু হওয়ার কথা আছে। দ্রুত আমাদের ক্লাস শুরু না করা হলে আমরা পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়বো। কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত ক্লাস শুরু করার জোর দাবী জানাই।

অনিবার মন্ডল নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের একই ব্যাচের অন্য জেলার আইএইচটিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হয়েছে। আমাদের ক্লাস শুরু হওয়াতো দূরের কথা কোন শিক্ষকতো নেই।ক্লাস নেওয়ার কোনো উদ্যোগই দেখছি না। এখন তো চিন্তায় পড়ে গেলাম। যদি দ্রুত ক্লাস শুরু না করা হয়, আমাদের পড়াশোনার একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে।

ফার্মাসি বিভাগে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী রুবেল আকন বলেন, আগে জানলে এখানে কোনোভাবেই ভর্তি হতাম না। এখন যদি ক্লাস শুরুই না হয় আমাদের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?

প্রতিষ্ঠানটির কম্পিউটার অপারেটর এনায়েত হোসেন বলেন, এক বছর ধরে এখানে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। বাসা থেকে ল্যাপটপে চার্জ দিয়ে নিয়ে এসে কাজ করতে হচ্ছে। এভাবে কতোদিন আর কাজ করা যাবে। আপনারা বলেন এভাবে কী কাজ করা সম্ভব। সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেনকোলোজি (আইএইচটি) মাদারীপুরের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, ওইখানে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। আগামী জানুয়ারিতে ক্লাস শুরু হবে, এ জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন শাখায় শিক্ষার্থীদের ভর্তিও করানো হয়েছে। কিন্তু এখানে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত লোকবল নেই। ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু করতে হলে অতি দ্রুতই লোকবল দিতে হবে। আমাদের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ে লোকবলের চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।

রাকিব হাসান/আরকে