বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেছেন, ঘুষ দিয়ে কোনো কাজ করানোর চিন্তা করবেন না। মনে রাখবেন, আপনারা সবাই ভালো না হলে দুয়েকজন ভালো মানুষ দিয়ে সমাজ সংস্কার সম্ভব না।

‘জনতার মুখোমুখি জনতার সেবক’ স্লোগানকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) লোহাগড়া উপজেলার কোটাকোল মাদরাসা প্রাঙ্গণে আলোচনা অনুষ্ঠানে জনগণকে তিনি এসব কথা বলেন।

মুন্সী আলাউদ্দিনের সভাপতিত্বে শরফুল আলম লিটুর সঞ্চালনায় দ্বিতীয় দিনে ‘জনতার মুখোমুখি জনতার সেবক’ অনুষ্ঠানের জনতার প্রশ্নোত্তর পর্বের আয়োজন করেন কোটাকোল ইউনিয়ন পরিষদ।

আরও পড়ুন>>উন্নয়নের কারিগর প্রধানমন্ত্রী, আমি তার ক্ষুদ্র কর্মী : মাশরাফি

এ সময় সংসদ সদস্যের কাছে নদী ভাঙনরোধ, বেড়িবাঁধ নির্মাণ, রাস্তা-ঘাট, বাজার, খেলার মাঠ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, ঈদগাহ  সংস্কার ও নির্মাণসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া পেশ করেন ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা, কৃষক, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধিসহ সাধারণ জনগণ। এ সময় সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা জনগণের এসব দাবি নোট করেন এবং ধারাবাহিকভাবে তাদের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আফিয়া বেগম ভাতা পান কিন্তু তার থাকার ঘর নেই- এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মাশরাফি বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানরা স্বাধীনতার এত বছর পরে এমন আক্ষেপ করে কিছু বললে সেটা আমাদের জন্য সত্যি লজ্জার। তাদের জন্যই আমরা স্বাধীন হতে পেরেছি, ঘর না থাকার বিষয়টা এতদিন আমার জানা ছিলনা, সেজন্য ক্ষমাপ্রার্থী। এ সময় তিনি তাৎক্ষণিক লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে মুক্তিযোদ্ধার ঘরের বিষয়ে কি করা যায় পদক্ষেপ নিতে বলেন।

কোটাকোল ইউনিয়নে নদী ভাঙনরোধ, রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, বড়দিয়া বাজারের সংস্কার প্রস্তাব রাখা হয় এবং এগুলো দ্রুত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনাদের ইউনিয়নে রাস্তা-ঘাট সংস্কারে ১৯ লাখ ২০ হাজার টাকা, মসজিদ-মন্দিরে উন্নয়নে ৯ লাখ টাকা, মাদরাসা/ঈদগা/কবরস্থানে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকার কাজ ইতোমধ্যে হয়েছে। গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে ১৮টি।

আরও পড়ুন>>নড়াইলে কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার চালু করলেন মাশরাফি

‘মধুমতি নদী ভাঙনরোধে আপদকালীন জরুরি জিও বস্তার কাজে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এছাড়াও ১ কোটি ২৬ লাখ টাকার জিও বস্তার কাজ চলমান রয়েছে। নদীর তীর প্রতিরক্ষা ব্লকের ৪১০ মিটার কাজে ব্যয় হয়েছে ১০ কোটি ৯২ লাখ ৫১ হাজার টাকা। এছাড়াও ঘাঘা গ্রামে তীর প্রতিরক্ষায় ২৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকার ব্লকের কাজ চলমান রয়েছে।’

মাশরাফি আরও বলেন, আপনাদের ইউনিয়ন নদী ভাঙনপ্রবণ এলাকা, আমার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল আপনাদের ঘর বাড়ি, জমি বাঁচানো। হয়তো একটু হলে ও পেরেছি। এখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদী ভাঙনরোধ কাজে ব্যয় হয়েছে ১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা এবং মোট ৪৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকার কাজ পানি উন্নয়ন বোর্ডের দরপত্রের মাধ্যমে ব্যয় হচ্ছে।

তিনি বলেন, আপনারা হয়তো অনেকে দেখেছেন মন্ত্রণালয়ের নদী ভাঙন জেলার তালিকায় নড়াইলের নাম ছিল না। মন্ত্রণালয়ের ধারণাই ছিল না নড়াইলে নদী ভাঙন হয়! অথচ গ্রামের পর গ্রাম, বাড়ির পর বাড়ি, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। আমাকে ভোট দিয়ে আপনারা নির্বাচিত করার পর কলম দিয়ে লিখে নদী ভাঙন জেলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছি। আপনাদের ইউনিয়নে সড়কের কাজ কম হয়েছে এটা আমি স্বীকার করি। তবে অন্য ইউনিয়নের তুলনায় আপনাদের ইউনিয়নে সরকারের ব্যয় কিন্তু বেশি হয়েছে।

এ সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে বেড়িবাঁধ তৈরি এবং নদী ভাঙনরোধে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

খেলার মাঠের দাবি প্রসঙ্গে মাশরাফি বলেন, চাইলেই কারও মালিকানা জমিতে রাতারাতি খেলার মাঠ বানানো সম্ভব না। আর এটা কেউ মেনেও নেবে না। আমি স্থানীয় মুরব্বিদের অনুরোধ করব আপনার কালই কোনো একটা মাঠের ব্যবস্থা করে ছেলেদের খেলার মধ্যে রাখুন। ছেলেরা খেলাবিমুখ হলে মাদক ও অপরাধের দিকে ঝুঁকবে। তাই আমাদের নিজস্ব সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই যুবসমাজকে রক্ষার জন্য খেলাধুলার মধ্যে রাখতে হবে। আর সরকারি জমির তথ্য দিলে আমি সেটাকে খেলার মাঠ দ্রুত করার ব্যবস্থা করে দেবো।

তিনি আরও বলেন, আপনারা সময় দিয়েছেন আমি আমার দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে কাজের হিসাব দিতে এসেছি। আপনারা অনেকেই না জেনে প্রশ্ন করেন, আপনাদের হাতে তালিকা দিয়েছি, কাজ কতটুকু করেছি আপনারা মিলিয়ে দেখুন। আপনাদের কাজগুলো আপনারা বুঝে নেবেন। এমপি হিসেবে আপনাদের কাছে এসে আপনাদের ঘরে বসে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলা আমার জন্য খুব সহজ কাজ। কিন্তু আপনাদের কাছে না এসে মন্ত্রণালয়ে দৌড়ে আপনাদের জন্য ৫টি টাকা আনতে পারলে ও সেটা আপনাদের সন্তানদের জন্য কাজে আসবে।

মাশরাফি বলেন, যেকোনো উন্নয়নমূলক কাজ রাতারাতি সম্ভব না, আপনারা (জনগণ) নিজেদের জায়গা থেকে সবাই এগিয়ে এলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলে দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি সমাজ হবে শান্তিপূর্ণ আবাসস্থল।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজগর আলী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুন্সী আলাউদ্দিন, সহ-সভাপতি ফয়জুল হক রোম, সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র সৈয়দ মসিয়ুর রহমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

সজিব রহমান/এমএ