থরে থরে সাজানো রয়েছে তেঁতুল

তেঁতুল নাম শুনলেই জিবে জল চলে আসে। শুধু নারী নয়, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার দুর্বলতা রয়েছে এ ফলের প্রতি। পাহাড়ি টিলা ভূমিতে অনাদরে বেড়ে ওঠা তেঁতুল চাহিদা পূরণ করছে সমতলের মানুষদের। পাহাড়ি তেঁতুলের বড় বাজার গুইমারা। সেখানে প্রতি সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টন তেঁতুল।

জানা গেছে, মানুষের বাড়িতে বা পাহাড়ে অনাদরে বেড়ে ওঠা তেঁতুল গাছের অনুমোদিত কোনো জাত নেই। এ গাছের উচ্চতা ৭০ থেকে ৮০ ফুট হয়। তেঁতুল দেখতে বাদামি রঙের হয়ে থাকে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০০৯ সালে পাহাড়ি এলাকায় চাষ উপযোগী বারি তেঁতুল-১ নামে একটি মিষ্টি তেঁতুলের জাত উদ্ভাবন করেছে। তেঁতুল গাছে ফুল আসে মার্চ মাসে। এর রং হালকা বাদামি। ফল পাকে পরের বছর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে। ফুল থেকে ফল পরিপক্ব হতে প্রায় ১০ মাস সময় লাগে। ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং পাকলে গাঢ় বাদামি হয়। এর আকার ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি লম্বা। প্রতি ফলে ৫ থেকে ১২টি বিচি থাকে। বীজ দেখতে খয়েরি।

মঙ্গলবার সরেজমিনে গুইমারা বাজারে দেখা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় মুখরিত তেঁতুলের হাট। প্রতিকেজি তেঁতুল বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা। চলছে প্যাকেজিং। প্যাকেজিং শেষে করা হচ্ছে কার্টন। প্রতি কার্টনে ৬০-৮০ কেজি তেঁতুল ধরছে। তারপর সেই তেঁতুল গাড়িতে করে চলে যাচ্ছেই বিভিন্ন বাজারে।

প্যাকেজিংয়ের কাজে ব্যস্ত শ্রমিকরা

ঢাকা থেকে আসা ব্যবসায়ী মো. নবী হোসেন জানান, মঙ্গলবার ঢাকা থেকে এসে তেঁতুল কিনে নিয়ে যাই। পাহাড়িদের কাছ থেকে ৮০-১০০ টাকা দরে তেঁতুল কিনে থাকি। গাড়ি ভাড়া দিয়ে ঢাকায় নিয়ে তেঁতুলের মান অনুসারে বিক্রি করি। এতে আমাদের মোটামুটি লাভ হয়।

ময়মনসিং থেকে আসা বাদশা মিয়া জানান, আমি বাজারের দিন এখান থেকে তেঁতুল কিনে ময়মনসিংহ নিয়ে যাই। ওখানে পাহাড়ি তেঁতুলের অনেক চাহিদা। যার ফলে এখান থেকে নিয়ে বিক্রি করে ভালো লাভ করা যায়। এই তেঁতুলে কোনো মেডিসিন ব্যবহার করা হয় না। ফলে এর গুণগত মান ভালো থাকে।

তেঁতুল প্যাকেজিংয়ের সঙ্গে জড়িত শ্রমিক মো. ইউসুফ জানান, হাটবারে এখানে প্যাকেজিংয়ের কাজ করে থাকি। কাজ অনুসারে আমাদের পারিশ্রমিক নির্ধারণ করেন। এখান থেকে যে আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চলে।

স্থানীয় বিক্রেতা অন্তর চাকমা বলেন, তেঁতুল নিয়ে বাজারে এসে বসে থাকতে হয় না। আসার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যায়। আমাদের কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না। আগের তুলনায় এবার ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে।

মংসাপ্রু মারমা বলেন, পাহাড়ি তেঁতুলের চাহিদা সারাদেশে আগের তুলনায় অনেক বেশি। যার ফলে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যবসায়ীরা আসে গুইমারা বাজারে। এখান থেকে কিনে নিয়ে তারা খুচরা বিক্রি করে। 

স্থানীয় ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, গুইমারা বাজারে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যবসায়ী আসে। এ কারণে তেঁতুল কিনে বিক্রি করতে গেলে এখন বেশি লাভ হয় না। আগে এখানকার মানুষের কাছ থেকে অনেক কম দামে তেঁতুল কিনে সমতলে নিয়ে ভালো দামে বিক্রি করা যেত। ভালো লাভ থাকত। 

ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের আচার তৈরির কারখানাগুলোতে পাহাড়ের তেঁতুলের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। এক সময় পাহাড়ি এসব বাজারে মাত্র ১০-১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতো। আর এখন বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকায়। কোনো প্রকার কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। লাভজনক হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে তেঁতুল চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। 

খাগড়াছড়ি কৃষি বিভাগের উপপরিচালক মো. মর্ত্তুজ আলী জানান, পাহাড়ে যে তেঁতুল হয় তার কোনো নির্দিষ্ট জাত নেই। অনাদরে বেড়ে ওঠে গাছগুলো। পাহাড় থেকে এই তেঁতুল দেশের বিভিন্ন বাজারে যায়। ফলে পাহাড়ের লোকজন তেঁতুল বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। 

তিনি আরও বলেন, ২০০৯ সালে পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র বারি তেঁতুল-১ নামে একটি তেঁতুলের জাত তৈরি করেছে। এই তেঁতুল মিষ্টি জাতের। এটি এখন পাহাড়ের লোকজন চাষ করছে। এটি চাষের ফলে কৃষক আরও বেশি লাভবান হবে।

জাফর সবুজ/এসপি /এমএমজে