ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধি, অনুকূল আবহাওয়া আর বাজারে চাহিদা ও ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় এবার মেহেরপুরের কৃষকরা সরিষা চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। গত বছরের তুলনায় এবার দ্বিগুণ পরিমাণ সরিষার চাষ হয়েছে। ছাড়িয়েছেও লক্ষ্যমাত্রা। কৃষি অফিস বলছে, স্থানীয়ভাবে তেলের ঘাটতি পূরণের জন্য কৃষি বিভাগ প্রণোদনা ছাড়াও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছে।

জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, মেহেরপুর জেলায় এবার সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। এর মধ্যে গাংনীতে ২ হাজার ৫০৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। গত বছর এই উপজেলায় আবাদ হয়েছিল ১৪০০ হেক্টর। কৃষকরা স্থানীয় জাতের পাশাপাশি বারি সরিষা ১৪, ১৫, ১৭ ও বিনা ৯, ৪, ১১ ও টোরি ১৭ জাতের সরিষা চাষ করেছেন। কয়েক বছর ধরে ক্রমাগত ভোজ্য তেলের মূল্য বৃদ্ধি ও বাজারে সরিষার চাহিদা থাকায় চাষিরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন সরিষা চাষে। অনেকেই দো-ফসলি জমিতে সরিষা আবাদ করছেন। আবার অনেকেই সাথী ফসল হিসেবেও সরিষা আবাদ করছেন। 

নাটনাপাড়া গ্রামের চাষি সামসুল আলম জানান, এবার তিনি দুই বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। এতে খরচ হয়েছে মাত্র ১ হাজার ২০০ টাকা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ৫০-৬০ হাজার টাকার সরিষা বিক্রি করতে পারবেন।

নওদা মুটমুড়া গ্রামের চাষি হুসাইন বলেন, কয়েক বছর ধরে সরিষার দাম বেড়েছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে তেলের দাম। ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বেশি মুনাফার জন্য এবার ৪ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। 

কাজিপুর গ্রামের চাষি জুরাইস ইসলাম জানান, তিনি এবার এক বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় নিজেদের প্রয়োজনে মূলত সরিষা চাষ করেন তিনি। আগামীতে পাঁচ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করবেন। একই কথা জানান কৃষক শাহিন ও মাজেদুল হক। 

গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার লাভলী খাতুন জানান, গত বছর গাংনী উপজেলায় সরিষা চাষ হয়েছিল ১৪০০ হেক্টর জমিতে। আর এবার চাষ হয়েছে ২ হাজার ৫০৫ হেক্টরে। স্থানীয়ভাবে যে পরিমাণ সরিষা চাষ হয়েছে, দুর্যোগ না হলে বাম্পার ফলন হবে। 

তিনি আরও বলেন, চলতি মৌসুমে ৭৩৩ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের জন্য চাষিদের প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। আগামীতে চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে বলেও আশা করেন এই কৃষি কর্মকর্তা। 

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শংকর কুমার মজুমদার বলেন, ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তেলবীজ আবাদে কৃষকরা নতুন করে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। গেল বছরের তুলনায় এ বছর সরিষার দ্বিগুণ আবাদ হয়েছে। বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সরিষার ভালো ফলনের আশাবাদী আমরা। তবে এ বছর উৎপাদিত সরিষা জেলার তেলের চাহিদা পূরণ করে বাইরের জেলাতে বিক্রি করে অধিক মুনাফা অর্জন করবে।

আকতারুজ্জামান/এসপি