প্রতিদিন তামাকজনিত রোগে প্রায় ৪৫০ জন মানুষ মারা যাচ্ছেন। তামাক সেবন প্রতিরোধে দেশে আইন থাকলেও তা আশানুরূপ কার্যকর নয়। এই আইন সংশোধন করে আরও শক্তিশালী করে প্রয়োগের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) বরিশাল ইউনিট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্তকরণের ঘোষণা বাস্তবায়নে এই দাবি জানানো হয়।

সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে বিএমএ এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন আয়োজিত তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জন এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে অগ্রগতি শীর্ষক আলোচনা সভায় এ দাবি তোলা হয়।

সভায় মূল প্রবন্ধ উত্থাপন করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার ডা. শেখ মো. মাহবুবুস সোবহান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রায় পৌনে চার কোটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। কর্মক্ষেত্রসহ পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক। তামাকজাত দ্রব্যের বহুল ব্যবহার হৃদরোগ, ক্যানসার, বক্ষব্যাধি এবং অন্যান্য অনেক প্রতিরোধযোগ্য রোগ হচ্ছে। তামাকগ্রহণ মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। তামাকের এসব ক্ষতি থেকে জনস্বাস্থ্যকে রক্ষার জন্য তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন।

সভার প্রধান অতিথি বিএমএ বরিশাল জেলার সভাপতি ডা. ইসতিয়াক হোসেন বলেন, ৯৫ শতাংশ মানুষ জানে তামাক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তারপরও মানুষ এটা ব্যবহার করছে। তাই সাধারণ মানুষদের সচেতন করার পাশাপাশি দেশে তামাকের আমদানি ও উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বর্তমান আইনটি সংশোধনের জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও বিএমএ বরিশাল জেলার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান শাহিন। তিনি বলেন, তামাক হঠাৎ করে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এটি ধীরে ধীরে বন্ধ করতে হবে। এজন্যই প্রধানমন্ত্রী হাতে সময় রেখে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার টার্গেট ঘোষণা করেছেন। এক্ষেত্রে চিকিৎসকরা বড় ভূমিকা রাখতে পারেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএমএ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. তারেক মেহেদী (পারভেজ) বলেন, সাধারণত বিএমএ চিকিৎসকদের কাজ করলেও জনস্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

বিএমএ কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মোহা. শেখ শহীদ উল্লাহ বলেন, তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়নে শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের বিকল্প নেই। তাই বিএমএ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত সংশোধনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করে যাবে।

আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এপিডেমিওলোজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী। সভাটি সঞ্চালনা করেন বিএমএ বরিশাল জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. মো. মাসরেফুল ইসলাম সৈকত।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. মো. হুমায়ুন শাহীন খান, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এসএম সারওয়ার, মেডিকেল কলেজের বক্ষব্যাধি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মাসুম আহমেদ, মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. এ জে এম এমরুল কায়েস, বরিশাল জেলার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. সব্যসাচী দাস, আউট ডক্টরস আসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. সৌরভ সুতার, সম্পাদক ডা. নরুন্নবী তুহিন প্রমুখ।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এমজেইউ