বরিশাল বিভাগে জেঁকে বসতে শুরু করেছে শীত। শীতের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বয়স্ক ও শিশুদের ওপর। এই দুই শ্রেণির মানুষ সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন নিউমোনিয়া ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে। শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছে, শয্যার তুলনায় চারগুণ শিশু রোগী ভর্তি রয়েছে হাসপাতালে। এখন পর্যন্ত ঠান্ডাজনিত সংক্রমণে শুধু ডিসেম্বরে মৃত্যু হয়েছে ১০ শিশুর।

চিকিৎসকেরা বলছেন, শীত মৌসুম শুরুর পর থেকেই শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ বা অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন (এআরআই), গলাব্যথা থেকে শুরু করে ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া ইত্যাদি রোগের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।

শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে সব সময় রোগীর চাপ বেশি থাকে। শীতের শুরুতে অন্যান্য রোগীর তুলনায় শিশু ও বয়স্করা ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয় বেশি। আমরা চেষ্টা করি সকল রোগীর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে। এই সময়টায় শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর-সর্দিসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়।

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শিশু ওয়ার্ডে মোট বেডের সংখ্যা ৩৬টি। কিন্তু ডিসেম্বর মাসে এখন পর্যন্ত ১৪১ শিশু ভর্তি হয়েছে। আর ৫ তারিখ থেকে ২৬ তারিখ পর্যন্ত শিশু ওয়ার্ডে ঠান্ডাজনিত সংক্রমণে ১০ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুদের অধিকাংশের বয়স ২৯ দিন থেকে ৫ বছর। ওদিকে হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ঠান্ডাজনিত সংক্রমণে এক মাসে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর ভর্তি হয়েছেন ১৭ জন।

সরেজমিনে গিয়ে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে দেখা যায়, ওয়ার্ডটি রোগীতে পরিপূর্ণ। শয্যা না পেয়ে মেঝেতে বিছানা পেতে রাখা হয়েছে বেশিরভাগ শিশুকে। রোগীর চাপে নার্স ও চিকিৎসকরা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।

বরিশালের চরবাড়িয়া এলাকার নাসরিন আক্তার জানান, গত দুই দিন আগে তার তিন মাসের ছেলে মুজাহিদকে শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করেছেন। বেশ কিছুদিন ধরে মুজাহিদ জ্বর ও সর্দিতে আক্রান্ত। বাসায় ফার্মসি থেকে সিরাপ এনে খাওয়ানের পরও জ্বর না কমায় হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন।

আকবর আলী নামে নলছিটির বাসিন্দা জানান, তার মেয়ে নিপাকে (৫) শ্বাসকষ্ট ও ঠান্ডাজনিত কারণে ভর্তি করেছেন। কিন্ত বেড নাই, মেঝেতেও গাদাগাদি, ঠাসাঠাসি করে থাকতে হচ্ছে।
 
হাসপাতালের শিশু বিভাগে কর্মরত সিনিয়র স্টাফ নার্স জোসনা আক্তার বলেন, এবার নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টের শিশুরা বেশি আসছে হাসপাতালে। প্রতিদিন কম বেশি ৩০-৪০ জন শিশু নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এখানে যা বেড রয়েছে তার তুলনায় এখনো কমপক্ষে চারগুণ রোগী ভর্তি হয়েছে। 

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরকে