আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ও নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেছেন, নড়াইল জেলার গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট পুরোপুরি পাকা করতে দরকার অন্তত দুই হাজার কোটি টাকা। উন্নয়ন কোনো রকেট সায়েন্স নয়, বললাম করে দেবো আর হয়ে গেলো।

বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) ‘জনতার মুখোমুখি জনতার সেবক’ স্লোগানকে সামনে রেখে ২য় পর্যায়ে লোহাগড়া উপজেলার রায়গ্রাম কলাগাছি কাঞ্চনপুর জনতা মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আলোচনা অনুষ্ঠানে জনগণকে এসব কথা বলেন তিনি।

মাশরাফি বলেন, এটা পেয়ারা পাড়ার মত কোনো জিনিস নয়, পেয়ারা পেকে গেছে আর পেড়ে ফেললাম। কাজগুলোর জন্য সময় দিতে হয়, ধৈর্য ধরে চেষ্টা করতে হয়। এগুলো একটার পর একটা ধাপ অতিক্রম করে কাজগুলো আনতে হয়। মন্ত্রণালয়গুলো ঘুরে দৌড়ে কাজ আনতে হয়। আপনারা তখনই আমাকে অভিযোগ করবেন যখন দেখবেন আপনাদের জন্য চেষ্টা করছিনা।

মুন্সী আলাউদ্দিনের সভাপতিত্বে ফয়জুল আলম রোমের সঞ্চালনায় ‘জনতার মুখোমুখি জনতার সেবক’ অনুষ্ঠানের জনতার প্রশ্নোত্তর পর্বের আয়োজন করেন নোয়াগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ। অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্যের কাছে নদী, রাস্তা-ঘাট, বাজার, খেলার মাঠ, ব্রিজ-কালভার্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, ঈদগাহ সংস্কার ও নির্মাণসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া পেশ করেন ইউনিয়নের কৃষক, ছাত্র- শিক্ষক, জনপ্রতিনিধিসহ সাধারণ জনগণ। এসময় সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা জনগণের এসব দাবি নোট করেন এবং ধারাবাহিকভাবে তাদের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেন।

এক ছাত্রকে খেলার মাঠে খেলতে দেওয়া হয়না এমন দাবির প্রসঙ্গে মাশরাফি বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান জোসেফকে অনুরোধ করবো স্থানীয় নেতা কর্মী, জনপ্রতিনিধি ও মুরব্বিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে খেলার মাঠের সমস্যা সমাধান করতে। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা করতে হবে। খেলাধুলা বন্ধ হতে দেওয়া যাবে না। খেলাধুলা বন্ধ হলে যুব সমাজ মাদকসহ সামাজিক অপরাধের দিকে ছুটবে। খেলার মাঠের সমস্যা যেন দ্রুত সমাধান হয় আমি গুরুত্ব সহকারে দেখবো।

এক নারীর ঘরের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নতুন করে ঘর নির্মাণ প্রকল্প আপাতত বন্ধ রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে চালু হলে আপনারা সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তা পাবেন। এমপির কোনো ক্ষমতা নেই কাউকে ঘর পাইয়ে দেওয়ার। যদি কেউ করেও থাকেন সেটা গায়ের জোরে।

মাঠগুলো সংস্কার ও উন্নয়নে টাকা অনুমোদন হওয়ার পর সে টাকা কই গেলো এমন প্রশ্নোত্তরে তিনি বলেন, বরাদ্দ হওয়ার পর সে টাকাগুলো সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেওয়া হয়েছে।

গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট পাকা ও সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি বললাম করে দেবো আর হয়ে গেলো এটা মিথ্যা কথা। আমি কোনো মিথ্যার মধ্যে আপনাদের (জনগণ) রাখতে চাইনা। উপজেলা থেকে ইউনিয়নের মুল সংযোগ সড়কগুলো একটাও কাঁচা নেই। আগে রাস্তার কি অবস্থা ছিল তা আপনাদের সবারই জানা আছে। অভ্যন্তরীণ পল্লী রাস্তাগুলো কাঁচা রয়েছে।

নড়াইল পল্লী উন্নয়ন বই করেছি যেটায় নড়াইলের অভ্যন্তরীণ পল্লী রাস্তাগুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এটা প্রী-একনেক থেকে একনেক সভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। ৫০ কোটি টাকার উপরে গেলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একনেকে অনুমোদন দেন। ৩৯৫ কোটি টাকার ওই বই তিনি অনুমোদন দিলে ২০২৬ সালে আপনাদের ৫০ শতাংশ পল্লী রাস্তা পাকা হবে। আমি বলবো না যে আপনাদের শতভাগ রাস্তা আমি এক বছরের মধ্যে পাকা করে দেবো। শুধু আমি নই যদি কেউ বলে থাকেন তাহলে সেটা ডাহা মিথ্যা কথা।

তিনি আরও বলেন, আমি আপনাদের জন্য চেষ্টা করছি। আমার সৎ সাহস আছে তাই আপনাদের সামনে ৪ বছরের কাজের হিসেব দিতে এসেছি। নোয়াগ্রাম ইউনিয়নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দরপত্র আহ্বানকৃত কাজের মূল্য ৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। গুলটিয়া, ধোপাদহ, মুচড়া কুমারকান্দা খাল পুনঃখননে ২ কোটি ২৯ লাখ টাকা, বাড়ি ভাঙ্গা গ্রামের সুইচ গেটের রেগুলেটর মেরামতে ৩৯ লাখ টাকা, নবগঙ্গা নদী ড্রেজিং এ ৫ কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে। আপনাদের মসজিদ উন্নয়নে ৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা, মন্দিরে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা, মাদরাসা/ঈদগাহ /কবরস্থান/শ্মশান উন্নয়নে ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা, রাস্তায় (টিআর) ২০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে।

আপনাদের হাতে কাজের তালিকা দেওয়া হয়েছে আপনারা সত্যতা যাচাই করবেন। নড়াইলে যা উন্নয়ন হচ্ছে, বিগত সংসদ সদস্যদের সময়ে তা হয়নি। আপনাদের কাছে এসেছি আপনাদের সরাসরি মতামত নিতে। আলোচনা করতে, আমার কাজের অগ্রগতি, ভুল আপনারই সঠিক বলতে পারবেন।

এসময় মাশরাফি আরও বলেন, নোয়াগ্রাম আমার শ্বশুর বাড়ির এলাকা। এখানে আমার আত্মীয়স্বজন কাউকে নিয়ে এলাকাবাসীর কোনো অভিযোগ থাকলে সরাসরি আমাকে বলবেন। আমার বাবা, ভাই, শ্বশুরবাড়ির কোনো আত্নীয়ের বিরুদ্ধে যে কোনো ধরনের অভিযোগ আপনারা নির্দ্বিধায় বলতে পারেন, আপনাদের সে সুযোগ আমি দিয়েছি। আপনাদের সে অধিকার আমি দিয়েছি। নিজের দায়িত্ব নিজে নেওয়া যায় অন্যদের কর্মকাণ্ডের দায়িত্ব তো নিজে নেওয়া যায় না। যদি যেত তাহলে পৃথিবীর কোনো সন্তান খারাপ হতো না, খুন-খারাপি হতো না, মাদকাসক্ত হতো না। কারণ কোনো বাবা-মাই চায় না তার সন্তান খারাপ হোক। মানুষ যদি নিজের নিয়ন্ত্রণ বাদে অন্যদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারতো তাহলে কারো সন্তানই খারাপ হতো না।

আপনারা একটু মাথা খাটালে বুঝতে পারবেন আমাদের নড়াইলবাসীর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কি করে দিয়েছেন। আমি থাকি বা না থাকি আগামী ৪ বছর পর নড়াইলের চিত্র দেখে বুঝতে পারবেন কতটা উন্নয়ন হয়েছে আমাদের! আস্থা রাখুন আমি আপনাদের জন্য চেষ্টা করছি। সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য মনোনয়ন নিয়ে কালনাঘাট পার হয়ে আপনাদের জন্য যে আন্তরিকতা, অনুভূতি ছিল এখনো ঠিক তেমনটাই আছে। আমি আপনাদের জন্য শতভাগ চেষ্টা করেছি, এখনো করছি, ভবিষ্যতেও করবো ইনশাআল্লাহ। আমি যেখানেই থাকি না কেন আপনাদের চিন্তা আমার মাথায় আছে। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।

অনুষ্ঠানে মাশরাফি ও আওয়ামী লীগ সরকারের ৪ বছরে নড়াইলের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে বক্তব্য দেন, উপজেলা চেয়ারম্যান সিকদার আ. হান্নান রুনু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুন্সী আলাউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র সৈয়দ মসিয়ুর রহমান, নোয়াগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান মুন্সী জোসেফ হোসেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাসির উদ্দিন, লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ, জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতারা ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

সজিব রহমান/এফকে