নতুন বছরের নতুন সকাল। স্কুলজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ। বছরের প্রথম দিনে নতুন বই হাতে পেয়ে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা। তবে এমন উৎসবের দিনে শতভাগ বই পায়নি শিক্ষার্থীরা। অনেকেই আবার ফিরেছে খালি হাতে। যে কারণে মন খারাপ করেই বাড়ি ফিরতে হয়েছে তাদের। ময়মনসিংহ জেলায় প্রাথমিকে প্রায় ৩৫ শতাংশ এবং মাধ্যমিকে ৫৩ শতাংশ নতুন বই পেয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়াও বইয়ে ছাপার মান নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, প্রাক-প্রাথমিকে শতভাগ বই পেলেও প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৩৪ দশমিক ৭২ শতাংশ বই প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেওয়া হয়েছে। জেলায় মোট প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৪ হাজার ৭১৯টি। এতে মোট শিক্ষার্থী সাত লাখ ৩৩ হাজার ৪৪০ জন। নতুন বইয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩৭ লাখ ৭২ হাজার থাকলেও দেওয়া হয়েছে ১৩ লাখ ৯৬ হাজার বই।

মাধ্যমিকে ৫৩ শতাংশ বই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দেওয়া হয়েছে। জেলায় মাধ্যমিকে ৯৯৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ৩৮৬টি মাদরাসা এবং ৬১২টি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় আড়াই লাখ শিক্ষার্থীর মাঝে ৭৮ লাখ বই বিতরণ করা হয়েছে।

রোববার (১ জানুয়ারি) সকালে নগরের নওমহল মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিকের বই উৎসব এবং বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক পর্যায়ে বই উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিভাগীয় কমিশনার শফিকুর রেজা বিশ্বাস। উদ্বোধনের পর শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হয়।

নতুন বই হাতে পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা বলে, এই দিনটির জন্য আমরা অপেক্ষা করে থাকি। বছরের প্রথম দিনেই নতুন বই পেয়ে আমাদের খুব ভালো লাগছে। এখন বাড়িতে গিয়ে পৃষ্ঠাগুলো উল্টিয়ে দেখবো। নতুন নতুন কবিতা-ছড়া পড়বো। নতুন উদ্যম নিয়ে পড়াশোনা শুরু করবো।

বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী ফারদিন ফারাহ ঊষা বলে, নতুন কিছু মানেই আনন্দ। সেটা যদি হয় বই, তাহলে সেই আনন্দটা আরও দ্বিগুণ হয়ে যায়। নতুন বছরে নতুন বই পেয়ে নতুন যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছি। নতুনভাবে পড়াশোনা করার অনুপ্রেরণা পেয়েছি। বিনামূল্যে এই বই দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে অনেক ধন্যবাদ।

সুবাইতা জাহান রোজা নামে নওমহল মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক ছাত্রী বলে, আমি দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে তৃতীয় শ্রেণিতে উঠেছি। আমার বই মূলত ছয়টা, তবে আমি তিনটা বই পেয়েছি। আর বইয়ের পৃষ্ঠাগুলো ঘোলা ঘোলা। তবুও নতুন বই পেয়ে আনন্দ লাগছে।

তবে বই না পেয়ে মন খারাপ করেছে কেউ কেউ। শিক্ষার্থী আবিদ হাসান বলে, আমি এবার চতুর্থ শ্রেণিতে উঠেছি। আমাদের অনেকে আজ বই পেয়েছে। কিন্তু আমি পাইনি। তাই আমার মনটা একটু খারাপ। স্যাররা বলেছেন, পরে আমাকে বই দেবেন।

চৈতি রাণী নামে এক অভিভাবক বলেন, সবাই বই না পেলে আসলে বিষয়টা খারাপ লাগে। আমাদেরও যেমন লাগে তেমনই বাচ্চাদেরও মন খারাপ হয়। তারা অনেক উৎসাহ নিয়ে স্কুলে আসে। তাদের কেউ বই না পেলে তো খারাপ অবশ্যই লাগে।

সরকারি আনন্দমোহন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ নারায়ণ চন্দ্র ভৌমিক বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শতভাগ বই না পাওয়া এবং বইয়ের গুণগত মান খারাপ হয়ে থাকলে শিক্ষার্থীরা প্রথমেই একটা বড় ধাক্কা খাবে। বইয়ের প্রতি শিক্ষার্থীদের মনোনিবেশ ঘটাতে সময় লাগবে। তবে আমার পরামর্শ হচ্ছে পরবর্তী ধাপে যে বইগুলো আসবে সেটির গুণগত মান যেন ঠিক থাকে। সরকারের শতভাগ বই পৌঁছানোর চেষ্টা ছিল। হয়তো কোনো কারণে সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

বিভাগীয় কমিশনার শফিকুর রেজা বিশ্বাস বলেন, বিভাগের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই আজ বই উৎসব শুরু হয়েছে। বই ইতোমধ্যেই এসে পৌঁছেছে আর কিছু বাকি থাকবে সেগুলো আসার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। কয়েক দিনের ভেতরেই শিক্ষার্থীরা চাহিদা অনুযায়ী বই পেয়ে যাবে।

উবায়দুল হক/আরএআর